Advertisement
Advertisement

দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারে ডায়াবেটিস, সময় থাকতে সতর্ক হোন

জেনে নিন বিশেষজ্ঞের মতামত।

Diabetes can affect your eyes, know how to protect
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:November 14, 2019 7:36 pm
  • Updated:November 14, 2019 9:21 pm  

অজান্তেই ঝাপসা হয়ে যেতে পারে দুনিয়া। দীর্ঘ মধুমেহ মানেই তা নিঃশব্দে আঘাত হানে। ডায়াবেটিস রেটিনোপ‌্যাথি এমনই এক অসুখ। সাবধান করলেন সুশ্রুত আই কেয়ার অ‌্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশিষ্ট অপথালমোলজিস্ট
ডা. অনিরুদ্ধ মাইতি

দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত? খুব সাবধান। এর প্রভাবে চোখের রেটিনা গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যা ডেকে আনে ডায়াবেটিস রেটিনোপ‌্যাথির মতো অসুখ। তাই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার সঙ্গে নিয়মিত চোখের রেটিনা পরীক্ষা করাও জরুরি।

Advertisement

প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের রেটিনা অংশে রক্তবাহী সরু ধমনিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে ফ্লুইড লিক করে। ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এর পরবর্তী পর্যায়ে ধমনিতে রক্ত চলাচলের সমস‌্যা আরও বাড়ে আর রেটিনার বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছয় না। সেই দায়িত্ব পালনে সাহায‌্য করে পার্শ্ববর্তী অন‌্যান‌্য নালি। এগুলোও হাজার চেষ্টা করে রেটিনার নানা অংশে রক্ত পৌঁছে দিতে ব‌্যর্থ হয়। এই দুর্বল নালিগুলি ফেটে গিয়ে চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, ডাক্তারি পরিভাষায় এই সমস‌্যাকে বলা হয় ভিট্রিয়াস হেমারেজ।

রেটিনোপ‌্যাথি চিনতে
এমন হলে চোখের সামনে পোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে মনে হবে। দৃষ্টিশক্তি আরও কমে যায়। পরবর্তীকালে রেটিনা নামক পর্দাটি চোখের মণির থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

রেটিনোপ‌্যাথির লক্ষণ মূলত তিন ধরনের হয়-

  • ঘোলাটে দৃষ্টি
  • চোখের সামনে পোকার মতো কিছু ঘুরে বেড়াচ্ছে মনে হওয়া বা আচমকা আলোর ঝলকানি দেখা
  • আচমকা দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়া

diabitic-eye

[ আরও পড়ুন: তাপমাত্রা কমায় বাড়ছে দূষণ, জেনে নিন সুস্থ থাকার উপায় ]

কাদের আশঙ্কা বেশি?
এদেশকে ডায়াবেটিসের রাজধানী বলা হয়। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা বা অন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণগুলির মধ্যে ষষ্ঠ কারণ ডায়াবেটিস। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো খুবই জরুরি। সাধারণত এই ধরনের রোগীরা প্রথমে জেনারেল ফিজিশিয়ান বা এন্ডোক্রিনোলজিস্টের কাছেই যান। পরে তাঁরাই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলেন।

উপযুক্ত চিকিৎসা
রোগ কতটা থাবা বসিয়েছে তা বিচার করে তার চিকিৎসা শুরু হয়। সেটা দেখার জন‌্য রেটিনা সার্জনরা সাধারণত কয়েকটি পরীক্ষা করান। এগুলির মধ্যে রয়েছে অ‌্যাঞ্জিওগ্রাফি (DFA), চোখের স্ক‌্যান (OCT)। লেজার থেরাপি, চোখের ইঞ্জেকশন (anti VEGF) বা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিয়ে জল জমা কমিয়ে দৃষ্টিশক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এই রোগে চোখের সূক্ষ্ম রক্তজালিকাগুলি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ভিট্রিও রেটিনাল সার্জনদের কাছে সবচেয়ে বেশি এই সমস‌্যাগুলি নিয়েই রোগীরা আসেন। এই সমস‌্যার মূল চিকিৎসা লেজার থেরাপি। যার নাম প‌্যান রেটিনাল ফটোকোয়াগুলেশন (PRP)।

রোগীর কেন্দ্রীয় দৃষ্টিপথের আশপাশে যেসব কোষকলায় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় সেগুলিকে লেসার রশ্মি দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এভাবে ভঙ্গুর ও লিক করতে থাকা রক্তজালিকাগুলির বৃদ্ধি রোধ করাও সম্ভব। এই চিকিৎসা করে রোগের বাড়বাড়ন্ত রোধ করা সম্ভব। চোখে রক্তক্ষরণও প্রতিরোধ হয়।

eye-1

চোখের কেন্দ্রস্থলে ভিট্রিয়াস হিউমার নামক একধরনের জেলি জাতীয় পদার্থ বর্তমান। ডায়াবেটিক রোগীদের চোখের এই জেলি বা রক্ত ক্ষরণও শুরু হয়। যাকে বলে ভিট্রিয়াস হেমারেজ। ডায়াবেটিক রোগীদের রেটিনা ডিটাচমেন্টের সম্ভাবনাও রয়েছে। তখন রেটিনা ফের প্রতিস্থাপন করতে হয়। এর চিকিৎসা করা হয় ভিট্রেকটমি দিয়ে। এই পদ্ধতিতে রেটিনা সার্জেনরা সাবধানতার সঙ্গে চোখ থেকে ক্ষরিত রক্ত ও ভিট্রিয়াস পরিষ্কার করে সেই জায়গায় স‌্যালাইন, গ‌্যাস বা সিলিকন অয়েল দিয়ে ভরাট করে দেন।

গবেষকরা দেখেছেন, যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে শর্করা, রেনাল প্রোফাইল (ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন), রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেন তাঁদের চোখের সম‌স‌্যা অনেক কম হয়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ আর এক্সারসাইজ করলে এগুলি ঠিক রাখা সম্ভব। সেই সঙ্গে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি। তবে সবচেয়ে আগে মনে রাখা উচিত চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা অনেক ভাল।

[ আরও পড়ুন: প্রচুর মদ্যপান করেও নেশা হচ্ছে না! আপনি এই রোগের শিকার নন তো? ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement