ছবি: প্রতীকী।
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: জ্বর নেই। গা-ব্যথা কমেছে। তাই ডেঙ্গুমুক্ত, এমনটা কোনওভাবেই বলা যাবে না। উলটে জ্বর কমার পরেই ডেঙ্গু (Dengue) মারাত্মক আকার নিচ্ছে। এমনকী মৃত্যুও হতে পারে। হালফিলে কমবয়সিদের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েকদিনে কমবয়সিদের মধ্যে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে বেশি।
স্বাস্থ্যদপ্তরের সমীক্ষা রিপোর্টেই তা উঠে এসেছে। আর এই ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে চিকিৎসক মহলের। বিশেষজ্ঞদের একটাই অভিমত, ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর অন্তত আটদিন কড়া নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে। কারণ, পাঁচদিন পর জ্বর কমছে ঠিকই, কিন্তু যেকোনও ভাইরাল ফিভারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয় পাঁচদিন পর। বাড়িতে থাকা রোগীরা একদিন অন্তর প্লেটলেট পরীক্ষা করবেন। আর যেসব রোগী হাসপাতালে ভরতি তাঁদের সকাল-বিকেল প্লেটলেট ও টোটাল ব্লাড কাউন্ট পরীক্ষা করতে হবে।
কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ডা. কৌশিক চক্রবর্তীর কথায়,”কোভিডের পর হৃদপিণ্ড বা ফুসফুস-সহ শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দুর্বল হয়। এরপরে যাদের ডেঙ্গু হয় তাদের খুব দ্রুত শরীর খারাপ হয়।” কৌশিকবাবুর কথায়,”এখন যতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সিংহভাগের হয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে, অথবা পেটের সমস্যা। যাকে বলা হয় ‘ম্যাক্রোফেজ অ্যক্টিভেশন সিন্ড্রোম’। অর্থাৎ ডেঙ্গুর প্রথম ধাপে শুরুতেই যদি শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে জল বা স্যালাইন না যায় তবে পরে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন পেটে বা বুকে জল জমে। বা প্যাংক্রিয়াসে চাপ পড়ে। আবার প্লেটলেট ঠিক থাকলেও শ্বেত রক্তকণিকা কমতে শুরু করে। আর তখনই শুরু হয় কঠিন সমস্যা। দ্রুত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। তাই ডেঙ্গু পজিটিভ হলে শুরু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।”
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ডেঙ্গুর মূলত তিনটি ধাপ। প্রথম ধাপ বা ‘ফেব্রাইল ফেজ’। দ্বিতীয় ধাপে ‘ক্রিটিক্যাল ফেজ’। এবং তৃতীয় ধাপে রিকভারি বা ক্রমশ সুস্থ হওয়ার সময়। এই তিনটি ধাপের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপ সবচেয়ে কঠিন। যেসব রোগী হাসপাতালে ভরতি হচ্ছে তাদের মধ্যে জ্বর থাকে না ঠিকই কিন্তু বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের নোডাল মেডিক্যাল অফিসার ডা. কৌশিক চৌধুরির কথায়,”যেসব রোগী হাসপাতালে ভরতি হচ্ছে তাদের বেশিরভাগের কিন্তু জ্বর নেই। কিন্তু বিভিন্ন উপসর্গ প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। যেমন রক্তনালি থেকে জল কমে যায়। ফলে রক্তচাপ কমতে শুরু করে। প্লেটলেট কমতে শুরু করে, পেটে-বুকে জল জমে। অথবা লিভার ফাংশন নষ্ট হতে শুরু করে। এটা যেমন একটা দিক, তেমনই শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে।” তাহলে উপায়?
দুই চিকিৎসকের একই পরামর্শ, জ্বর শুরু এবং ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়া থেকে শুরু করে অন্তত আটদিন কড়া পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আর জ্বর কমলেও সতর্ক থাকতে হবে। এমনকী জ্বর কমে যাওয়ার পর যদি হঠাৎ মাথা ঘোরে, বমি হয় বা রক্তচাপ কমে যায় তবে দ্রুত হাসপাতালে ভরতি করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.