স্টাফ রিপোর্টার: কে বেশি প্রাণঘাতী? কে বেশি মারমুখী? হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত ডেঙ্গু ২। ফল ২০১৯ সালের রেকর্ড পার হয়ে যেতে আর বেশি সময় হয়ত লাগবে না। বস্তুত টাইপ ২-এর ঝড় রাজ্যে। চিকিৎসকদের অভিমত, ডেঙ্গুর টাইপ ৩ দ্রুত ছড়ায়। কিন্তু সুস্থ হয়। কিন্তু টাইপ ২ ভাইরাস যদি শরীরে প্রবেশ করে তবে রোগীর অবস্থা প্রাণঘাতী হতেই পারে। অনেকটা সার্স কোভ-২ এর মতো।
কোভিড আবহে ওমিক্রন দ্রুত সংক্রমিত হয়েছিল। কিন্তু রোগী দ্রুত সুস্থ হয়। তুলনায় ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রমণ কম হলেও অত্যন্ত প্রাণঘাতী। এই অবস্থায় টাইপ-২ ডেঙ্গু এখন চিকিৎসকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণ শুরু হয় টাইপ ৩ দিয়ে। অন্তত এমনটাই বলছে স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষা। ২০১৯ সালকে যদি মাপকাঠি ধরা হয়, তবে এই বছরের শুরুতে তা এতটা মারমুখী হয়নি। কিন্তু বর্ষা শুরু হতেই দেখা গেল মারমুখী চেহারা নিয়েছে ডেঙ্গুর ২ নম্বর স্ট্রেন। মাত্র একমাসের মধ্যে পরিস্থিতির এতটা অবনতি হবে তা সম্ভবত বুঝতেই পারেনি চিকিৎসককুল। বি সি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দিলীপ পালের কথায়, ‘‘যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তাদের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে দ্রুত অবনতি হচ্ছে ২ নম্বর স্ট্রেনে। তুলনায় ৩ নম্বর স্ট্রেনে আক্রান্ত বাচ্চারা সুস্থ হচ্ছে দ্রুত। আর ৪ নম্বর স্ট্রেনের এখনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’’ দিলীপবাবুর কথায়, এই অবস্থায় রোগীকে অত্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। নাইসেড থেকে স্বাস্থ্য দফতরে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গুর ৩ স্ট্রেনের সংক্রমণ প্রায় নেই বললেই চলে। উল্টে ২ নম্বর টাইপ বাড়তে বাড়তে ৩ নম্বরকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। ফলে রোগীর সংখ্যা রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখানে মনে রাখতে হবে ২০১৯ সালেও কিন্তু ডেঙ্গুর ২ টাইপ বা স্ট্রেনই মারমুখী চেহারা নিয়েছিল। আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেড়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১০০ জনের। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘এবছরও ডেঙ্গুর সেরোটাইপ পরীক্ষা হচ্ছে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও নাইসেডে। স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের শঙ্কা, বছরের শেষে হয়তো ২০১৯-কেও টপকে যেতে পারে পরিস্থিতি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, একই স্ট্রেনে একজন পরপর দু’বার সাধারণত আক্রান্ত হয় না। তবে চলতি বছরে ডেঙ্গু টাইপ ৩-এর ৫২ শতাংশ ও টাইপ ২-এর ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। যার অর্থ, দু’টি স্ট্রেনেরই আধিক্য বেশি। কিন্তু পরপর দু’বার যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হন তবে সেই রোগীর শক সিন্ড্রোম ও প্লেটলেট দ্রুত কমতে শুরু করে। পতঙ্গবিদ ডা. অমিয়কুমার হাটির কথায়, ‘‘ভারতের মতো দেশে টাইপ ৩-এর তুলনায় টাইপ ২-এর মারণক্ষমতা অনেক বেশি। তাই আরও বেশি সচেতনতা দরকার। জ্বর এলে এনএস১ টেস্ট করতে হবে। পজিটিভ হলেই রোগীকে বেশি জল খেতে হবে। বিশ্রামে থাকতে হবে। কোনওরকম শৈথিল্য দেখানো যাবে না।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.