প্রতীকী ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গু হয়েছে। প্লেটলেট কত? পথচলতি আমজনতা আটকে একই প্রশ্নে। যেন প্লেটলেট ছাড়া অন্য কোনও সমস্যা নেই। এমন চিন্তাকেই বিপজ্জনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্লেটলেট কমে যাওয়া ছাড়াও শরীরের একাধিক অঙ্গকে কাবু করছে ডেঙ্গুর ভাইরাস। কারও মস্তিষ্কে রক্তপাত হচ্ছে। কারও রক্ত জমাট বেঁধে বিকল হচ্ছে হার্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শরীরের রক্ষণ জমাট রাখতে হবে সবদিক থেকে। সামান্য ফাঁক পেলেই জীবন নিয়ে যাবে ডেঙ্গু।
ডেঙ্গু সংক্রমণে এমনই এক মারাত্মক সমস্যা ‘প্লাজমা লিকেজ’। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. যোগীরাজ রায় জানিয়েছেন, ডেঙ্গু সংক্রমণে রক্ত থেকে জলীয় অংশ রক্তনালির বাইরে চলে আসে ,একেই বলা হয় প্লাজমা লিকেজ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর ব্লাড ভেসেলের ক্যাপিলারিতে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হয়। তা থেকেই হয় প্লাজমা লিকেজ। চিকিৎসকরা বলছেন, প্লাজমা লিকেজ সামান্য ব্যাপার নয়। ভয় রয়েছে মারাত্মক। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রায় ৫ লিটার রক্ত থাকে, তার মধ্যে পঞ্চান্ন শতাংশ প্লাজমা। এই প্লাজমা যদি রক্তনালি (ব্লাড ভেসেল) থেকে বেরিয়ে যায়, তা হলে কমে যাবে রক্তের ভলিউম। স্বাভাবিক রক্তচাপ বিঘ্নিত হবে। হার্ট, কিডনি কাজ করবে না ঠিকমতো।
ডেঙ্গুতে প্লেটলেট কমে যাওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরের হাড়ের মজ্জা অংশে তৈরি হয় প্লেটলেট। প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে তার পরিমাণ দেড় লক্ষ থেকে সাড়ে চার লক্ষ। ডেঙ্গু সংক্রমণে তাই নামতে নামতে পনেরো, ষোলো হাজারে পৌঁছে যায়। ডেঙ্গুতে প্লেটলেটের উৎসস্থল হাড়ের মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কমতে থাকে প্লেটলেট। প্লেটলেট কমলেই তা দিতে হবে, আমজনতার এমনতর চিন্তাকে মারাত্মক বলছেন হেমাটোলজিস্ট ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, প্লেটলেট দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। প্লেটলেট দেওয়ার আগে দেখতে হবে রোগীর শরীরে ব্লাড প্যারামিটারগুলো কেমন রয়েছে। যদি রক্তের প্যারামিটার ঠিক না থাকে সেক্ষেত্রে ২০ হাজারের নিচে প্লেটলেট নামলেই তা দিতে হবে। যদি রোগীর রক্তের সমস্ত প্যারামিটার ঠিক থাকে, তা হলে প্লেটলেট ১০ হাজারে নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যায়। প্লেটলেট দিলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। নিরীহ প্লেটলেটেও লুকিয়ে ভয়। প্লেটলেটের সঙ্গে থাকে সেরাম। অন্যের শরীরের প্লেটলেট শরীরে প্রবেশ করা মাত্র দেখা যায় ট্রালি। ডা. প্রান্তর চক্রবর্তীর কথায়, ট্রালির পুরো অর্থ ট্রান্সফিউশন রিলেটেড অ্যাকিউট লাং ইনজুরি। প্লেটলেটের মধ্যে থাকা অ্যান্টিবডি গ্রহীতার লিউকোসাইট অ্যান্টিজেনকে আক্রমণ করে। ফুসফুস বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, কোভিডের মতো ডেঙ্গুতেও খেলা দেখাচ্ছে সাইটোকাইন ঝড়। কী এই ঝড়? ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, শরীরে ভাইরাসের আক্রমণ হলে তা থেকে শরীরকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে অ্যান্টিবডি। লড়াই চালায় শত্রু ভাইরাসের সঙ্গে। কিন্তু কখনও কখনও শত্রু ছাড়াও শরীরের ভাল, সুস্থ কোষকেও আক্রমণ করতে থাকে, তখনই শুরু হয় সাইটোকাইন ঝড়। ডেঙ্গুতেও এমনটাই হচ্ছে। ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, ডেঙ্গুতে জল খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। তবে নজর রাখতে হবে আইভি ফ্লুইড নেওয়ার সময়। প্লেটলেট কমলেই বাড়ে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা। দুর্বল হয়ে পড়ে হার্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.