“ছোটবেলাতেই ট্রিটমেন্ট শুরু করলে চিন্তার কিছু নেই।” বাচ্চার ট্যারা দৃষ্টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েদের পরামর্শ দিলেন এএসজি আই হসপিটালের স্কুইন্ট অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক অপথালমোলজিস্ট-সার্জন ডা. রোহিত আগরওয়াল। লিখছেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
‘কার দিকে যে তাকিয়ে আছে, বোঝা মুশকিল।’ ট্যারা দৃষ্টিসম্পন্নদের উদ্দেশ্যে এমন ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য হামেশাই ছুড়ে দেয় সবাই। সন্তানের চোখ ট্যারা হলে চিকিৎসা শুরুর কথা ভাবার আগে তাদের বিয়ে কী করে হবে, সেই চিন্তায় আশঙ্কিত হন বাবা-মা। ঈষৎ ট্যারাকে আবার দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ ভেবে অনেকে চিকিৎসাই করান না। চোখের দু’টি মণি সমান্তরালভাবে না থাকাকেই চলতি কথায় বলা হয় ট্যারা। সমস্যার শুরুটা হয় ছোটবেলাতেই। আর তখন যদি বিশেষ পদ্ধতিতে চোখের মণির দিক ঠিক করে নেওয়া যায়, তাহলে আর বড় হয়ে ট্যারা দৃষ্টির জন্য হাসির খোরাক হতে হয় না। বাড়ির লক্ষ্মীসোনা পুঁচকের দুই চোখের ব্যালান্স নষ্ট হলেই ট্যারাভাব আসে।
কেন হয়?
ছোটবেলায় চোখের পেশি শিথিল হওয়ার কারণে ট্যারাভাব লক্ষ্য করা যায়। যার জেরে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। এছাড়া রিফ্রেকটিভ এরর (চশমার কাচের পাওয়ার নম্বর ঠিক না থাকা), রেটিনায় সমস্যা, ছানি ও রেটিনাব্লাস্টোমা ক্যানসারের কারণেও বাচ্চার চোখ ট্যারা হতে পারে।
পরিবারে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ থাকার ইতিহাস থাকলে বাচ্চার দৃষ্টিশক্তি কম হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। একইসঙ্গে এমন বাচ্চাদের ট্যারা হওয়ার প্রবণতাও থাকতে পারে।
কখন সাবধান
দুই চোখের পাওয়ারের মধ্যে +১.৫ ডায়াপটর (হাইপার মেট্রোপিয়া), -৪ ডায়াপটর (মায়োপিয়া) বা সিলেন্ড্রিকালে ১ ডায়াপটারের ব্যাবধান হলে সাবধান। পেডিয়াট্রিক আই-স্পেশালিস্ট চোখে ড্রপ দিয়ে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে দেখে নেবেন সমস্যার কারণ।
চিকিৎসা
জন্মের পর দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরও যদি শিশুর চোখে ট্যারাভাব লক্ষ্য করা যায় তাহলে দ্রুত শিশু-চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত। তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে অবশ্যই একবার চেকআপ করিয়ে ট্যারা হওয়ার কারণ শনাক্ত করতে হবে। বাচ্চাদের সাধারণত চোখের পাওয়ার মাত্রাতিরিক্ত হলে বা চশমার কাচের পাওয়ার নম্বর ঠিক না থাকার জন্যই দৃষ্টি ট্যারা হয়। এক্ষেত্রে সঠিক চশমা নিয়মিত পরার অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে ট্যারাভাব কেটে যায়। তবে চশমায় কাজ না হলে চোখের কিছু এক্সারসাইজ করতে হবে। তাতেও উপকার না মিললে একটা সার্জারি করতে হয়। যত কম বয়সে এই সার্জারি করিয়ে নেওয়া যায় তত ভালভাবে চোখের মণির অবস্থান সঠিক স্থানে আসে। সাধারণত ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমেই ট্যারাভাব সেরে ওঠে। ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এক্সারসাইজে ভাল হয়। সার্জারির প্রয়োজন বাকি ২৫ শতাংশে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে দুই মণির সমান্তরাল অবস্থান হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ হয়ে যায়।
ট্যারাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার পাশাপাশি থ্রি ডি ভিশন থাকে না। একে স্টিরিয়োপসিস বলে। দশ বছর বয়সের মধ্যে মণির পজিশন ঠিক না করিয়ে বয়স বাড়ার পর চিকিৎসা করালে মণির পজিশন ঠিক হলেও থ্রি ডি ভিশনের শক্তি আর পাওয়া সম্ভব হয় না। যে সব শিশুর চোখের মণির পজিশন নাকের দিকে থাকে (ইসোট্রোপিয়া) তাদের তিন বছর বয়সের মধে্য চশমা বা সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করানো উচিত। পাঁচ-ছ’বছরের বেশি দেরি করলে থ্রি ডি দৃষ্টি তৈরি হওয়া কঠিন। মণি নাকের বিপরীত দিকে গেলে এক্সারসাইজ জরুরি। ছ’বছরের মধে্য চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
ভয় নেই সার্জারিতে
ছোট একটি সার্জারির মাধ্যমে ট্যারা চোখের মণির পজিশন ঠিক করা যায়। এই অপারেশনের কোনও সাইড এফেক্ট নেই। ইনফেকশনেরও ভয় নেই। এক্ষেত্রে চোখের পেশি একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে কেটে তা একটু এগিয়ে-পিছিয়ে পুনরায় বসিয়ে দেওয়া হয়।
লেজি আই
দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার কারণে সঠিক চশমা ব্যবহারের পরও অনেক বাচ্চা কোনও লেখা দু’-তিন লাইন পড়ার পর আর পড়তে পারে না। এক্ষেত্রে পরের লাইনগুলি সে ঝাপসা দেখায় তা আর মস্তিষ্কে পৌঁছয় না। একে লেজি আই বলে। এমন ক্ষেত্রেও বাচ্চার চোখ ট্যারা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে লেজি আইয়ের ট্রিটমেন্ট করে তারপর ট্যারা সমস্যার চিকিৎসা করা উচিত।
শিশু স্কুলের পড়ায় পিছিয়ে পড়লে, খুব কাছ থেকে টিভি দেখলে বা বইয়ের উপর ঝুঁকে পড়াশোনা করলে বাবা-মায়েদের দেখে নেওয়া উচিত সন্তানের লেজি আই কি না।
খরচ
বেসরকারি হাসপাতালে এই ধরনের সার্জারির খরচ মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যেই।
পরামর্শে : ৭৬০৩০০৭৯০০
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.