ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: করোনার (Corona Virus) কামড়! একটা না একটা উপসর্গ থাকবেই। দেখা যাচ্ছে ‘থ্রম্বোসাইটপেনিয়া।’ অথবা প্লেটলেট ঘাটতি। গত দুটি সংক্রমনের সময় বেশিরভাগ রোগীকে কার্যত হাসপাতাল পর্যন্ত টেনে এনেছিল। বয়স্ক বা কো-মর্বিডিটি রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। আবার হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা বা ভেন্টিলেশন ও থাকতে হয়েছিল রোগীকে। এবার এখনও পর্যন্ত সেই সমস্যা তেমন প্রকট হয়নি। কিন্তু নতুন এক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ রোগীর রক্তে প্লেললেট দ্রুত কমতে থাকছে। ফলে রোগী দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
এখনও পর্যন্ত যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাঁদের রক্ত পরীক্ষার সময় এই বিষয়টি নজরে এসেছে চিকিৎসকদের। এতদিন ভাবা হয়েছে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগীর রক্তে প্লেটলেট কমতে থাকে। যার পিছনে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। কিন্তু সার্স কোভ-২ বা যেসব কোভিড রোগীর বয়স বেশি বা বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ রয়েছে তাঁদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তবে অবস্থা এমনটা নয় যে রোগীকে প্লেটলেট দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মূলত তিনটি কারণের জন্য কোভিড রোগীর প্লেটলেট কমতে পারে। প্রথমত, শরীরে ভাইরাসের আক্রমণ হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বোন ম্যারো থেকে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন কমতে থাকে। স্বাভাবিক নিয়মেই লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে থাকা প্লেটলেট উৎপাদন কমে যায়। আর রোগী ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। যেকোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে।তবে গত দুটি করোনা ঝড়ে ফুসফুসের মধ্যে প্রদাহ বেশি লক্ষ্য করেছেন চিকিৎসকরা। তুলনায় এবার প্লেটলেট কমছে।
এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভরতি এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্তার প্লেটলেট একধাক্কায় ৮০ হাজারে নেমে আসে। কিন্তু ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ বা এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের মধ্যে প্লেটলেট কমার সমস্যা লক্ষ্য করছেন চিকিৎসকরা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে গত দুটি সংক্রমণের সময় কি এমন উপসর্গ পাওয়া যায়নি রোগীদের মধ্যে? জবাবে জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আক্রান্তের শরীরে করোনা ভাইরাস অনুপ্রবেশের পর কি ধরনের এবং কত প্রকারের সমস্যা তৈরি করতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা শান্তনু ত্রিপাঠির কথায়, “শুধু ডেঙ্গু নয়। কোভিড রোগীদের মধ্যে যাঁদের বিভিন্ন উপসর্গ আছে তাঁদের থ্রম্বোসাইটপেনিয়া বা প্লেটলেট কমতে দেখা যাচ্ছে। রোগীর শরীরের মধ্যে যেমন থ্রম্বোসিস বা রক্তজমাট বাঁধার মতো সমস্যা দেখা যায়, তেমনই রক্ত পাতলাও হতে পারে। সবটাই নির্ভর করে রোগী কি ধরনের কো মর্বিডিটি রয়েছে তার উপর।’’ চিকিৎসকদের অভিমত, এমন সমস্যা হলে রক্তের রুটিন পরীক্ষা টানা চার পাঁচবার করে দেখতে হবে। ডেঙ্গুর মতো যদি প্লেটলেট ২০ হাজারের নিচে নামে তবে প্লেটলেট দিতে হবে। তবে এই সময়ে এখনও এমন সমস্যা দেখা যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.