ফাইল ছবি
গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: নেব কি নেব না। মহা টানাপোড়েনে ভুগছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। কারণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, করোনাজয়ীদের (COVID Warriors) করোনা টিকা দেওয়া ভস্মে ঘি ঢালা তো বটেই, উপরন্তু অনর্থও ঘটাতে পারে। করোনাজয়ীর দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি যে প্রতিষেধকের তেজে নষ্ট হয়ে যাবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই।
তা হলে কী করব? নেব কি নেব না? রাজ্যের হাজারের উপর চিকিৎসক ইতিমধ্যে করোনার কবলে পড়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৮৭ জনের। এমতাবস্থায় করোনাজয়ীদের অনেকেই ঠিক করে উঠতে পারেননি টিকা (Corona Vaccine) নেওয়া স্বাস্থ্যসম্মত হবে কিনা। একই সঙ্গে অন্য প্রশ্নও মাথাচাড়া দিচ্ছে। এমনিতেই টিকার জোগান কম। নিয়ম মেনে দু’ডোজ করে দিতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের নথিভুক্ত ছ’লক্ষ চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য ১২ লক্ষ ডোজ টিকা লাগবে। অথচ এসেছে ঠিক অর্ধেক। মানে সবাইকে দিতে গেলে একটি ডোজের বেশি হবে না। এই পরিস্থিতিতে করোনাজয়ী চিকিৎসকদের টিকা দেওয়াটা নিছক ‘অপচয়’ হয়ে যাবে কি না, এমন সংশয় দানা বেঁধেছে স্বাস্থ্যমহলে। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, টিকা দেওয়ার আগে করোনাজয়ীদের শরীরে ‘অ্যান্টিবডি টাইটার’ কতটা আছে তার পরিমাপ করতে হবে। শরীরে অ্যান্টিবডি মজুত থাকলে তা ভ্যাকসিনের অ্যান্টিজেনকে নিউট্রিলাইজ বা নিষ্ক্রিয় করে দেবে। কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সদস্য এসএসকেএম এর চিকিৎসক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, কোভিডজয়ী চিকিৎসকদের টিকাকরণের দ্বিতীয় ধাপে রাখা উচিৎ। কারণ শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলে টিকা দিলে কী হতে পারে তা নিয়ে কোনও গবেষণা নেই।
দুই বিশেষজ্ঞই বলছেন, শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলে ভ্যাকসিন দিয়ে কোনও লাভ হবে না। এই অ্যান্টিবডির পরিমাপ করতে টিকা দেওয়ার আগে এলাইজা টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক। এই টেস্টের দুটি পদ্ধতি। একটি কোয়ানটিটেটিভ অন্যটি কোয়ালিটেটিভ। কোয়ালিটেটিভ টেস্টে দেখা যায় অ্যান্টিবডি আছে কি নেই। কিন্তু কোয়ানটিটেটিভ টেস্টে ধরা পড়ে কত পরিমাণ অ্যান্টিবডি আছে। ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলছেন এই কোয়ানটিটেটিভ টেস্টই করাতে হবে করোনাজয়ীদের।
মোদ্দা বিষয়, টিকা শরীরে ঢুকে টি সেলকে সক্রিয় করে তোলে। এই টি কোষ হল শরীরের বর্ম। এর কাজ রক্ষীর মতো। টি সেল অ্যান্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু শরীরে আগে থেকে অ্যান্টিবডি থাকলে টিকা শরীরে ঢুকেও কোনও কাজ করতে পারবে না। যে কারণে করোনাজয়ীদের টিকাকরণ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল অ্যান্ড রিসার্চের একটি সুপারিশ রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে করোনামুক্ত হওয়ার ৪ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে টিকা না নেওয়াই শ্রেয়। যদিও এই সময়সীমার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দেখছেন না চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনা থেকে সেরে উঠলে সকলেরই যে এক পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকছে এমনটা নয়। রাজ্যের সর্ববৃহৎ চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের আহ্বায়ক ডা. রাজীব পাণ্ডের কথায়, আইসিএমআরের সুপারিশ নিয়ে আরও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। করোনার অ্যান্টিবডি কতদিন থাকবে তার কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। কারও শরীরে তা একমাস থাকছে, কারও শরীরে টানা ছ’মাস। ফলে কখন টিকা নেওয়া হবে তা বুঝতে পারছেন না চিকিৎসকরা। অবিলম্বে তাই কেন্দ্রকে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, আইসিএমআর (ICMR) স্পষ্ট করে জানাক কারা পাবে, কারা পাবে না। যাদের করোনা হয়ে গিয়েছে তাঁরা কতদিন পর পাবেন?
ইতিমধ্যেই অযথা ভ্যাকসিন নষ্ট না করার নিদান দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। আজ থেকে শুরু হওয়া টিকাকরণে শামিল হবেন কি না তা নিয়ে করোনাজয়ী চিকিৎসকদের ধন্দ কাটছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.