অভিরূপ দাস: করোনা থেকে সেরে উঠেছেন? দূরে থাকুন আতসবাজি (Fireworks) থেকে। আতসবাজির করাল ধোঁয়া নাক দিয়ে ঢুকলে জবাব দিতে পারে ফুসফুস। আদতে করোনা সংক্রমণ এবং প্রদাহের ফলে ফুসফুসের কিছু অংশের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গিয়েছে করোনা জয়ীদের। এ ক্ষতির পরিমাণ কতটা?
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনায় (Coronavirus) শ্বাসকষ্ট যত বেশি, ক্ষতি হয় ততটাই। তবে সঠিকভাবে সে ক্ষতি ধরতে গেলে প্রয়োজন সিটি স্ক্যানের। রাজ্যের একশো জন করোনা আক্রান্তের সিটি স্ক্যান করালে ষাট জনের ফুসফুসেই দেখা যাচ্ছে একধরনের ধূসর প্যাচ।
চিকিৎসকরা একে বলছেন, গ্রাউন্ড গ্লাস ওপাসিটি। এই ধূসর প্যাচের উপর আতসবাজির ধোঁয়া মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউটের কর্ণধার চিকিৎসক অলোকগোপাল ঘোষাল জানিয়েছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও রেহাই নেই। ৭০ জন জটিল করোনা রোগীর মধ্যে ৬৬ জনেরই ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত। এদের অর্ধেকের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে ধূসর প্যাচ। এদের বলব, আতশবাজি থেকে দূরে থাকুন। রাস্তাতেও না বেরনোই ভাল।
ফুসফুসের জাতশত্রু লুকিয়ে বাজির ধোঁয়ায়। চারপাশ ঢেকে যায় সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইডে। সেই বিষাক্ত ধোঁয়া ফুসফুসে গেলেই সমস্যার শুরু। ফুসফুসে গভীর সংক্রমণ তো বটেই, সম্পূর্ণভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গ। চিকিৎসকরা বলছেন, চরকি, হাউই, তুবড়িতে থাকে গন্ধক, লোহাচুর, ক্যাডমিয়ামের মতো রাসায়নিক। এমনিতেই বাতাসে ধূলিকণা ভেসে বেড়ায়। খালিচোখে যা দেখা যায় না। আতশবাজি পোড়ানোর সময় বাতাসে ভাসমান ওই ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। পালমনলজিস্ট সুষ্মিতা রায়চৌধুরিও সতর্ক করে বলেছেন, বারুদ, ধোঁয়া ফুসফুসে প্রদাহ বাড়ায়। করোনায় সেরে ওঠার পরও পুজোর মরশুমে বাড়তি সতর্কতা জরুরি।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, বাতাসে ভাসমান আণুবীক্ষণিক সে ধূলিকণা, বিষাক্ত ধোঁয়া ও অতিরিক্ত ভাসমান ধূলিকণা নাক মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তা থেকে শ্বাসনালি, ফুসফুসের মারাত্মক রোগ হতে পারে। প্রথম বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনাজয়ীদের কাশি সারেনি এখনও। মাঝে মধ্যেই শুকনো কাশি উঠে আসছে। সমস্যা হচ্ছে গভীরভাবে শ্বাস টানতে, শ্বাস ধরে রাখতে। মৃদু উপসর্গের করোনার রোগীদের ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়েছে তা সারতে ৬-১২ মাস লাগে। এর উপর যদি আতশবাজির ধোঁয়া ঢোকে তাহলেই সর্বনাশ। তখন কোনওদিন ফুসফুস পুরোপুরি কাজ করবে না। কার্যকারিতা ফিরে আসবে বড়জোর ৬০-৭০ শতাংশের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.