অভিরূপ দাস: বয়স এক বছরও হয়নি। অথচ চোখে ছানি (Cataracts)। এক হাত দূরের জিনিসও ঠিক করে দেখতে পাচ্ছে না একরত্তি। ‘ছোটদের ছানি’ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী বাংলায়। রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজিতে ভিড় করছে খুদেরা। জন্ম থেকেই যারা ঝাপসা দেখছে। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে এরই মধ্যে দু-দু’টো অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে দু’মাস বয়সের আফিয়ার। কাঁথির বাসিন্দা ওই শিশুটির দু’চোখ জন্ম থেকেই ঘষা কাচের মতো। কলকাতায় নিয়ে আসা হয় তাকে। সিনিয়র কনসালট্যান্ট অপথালমোলজিস্ট (পেডিয়াট্রিক) ডা. দেবব্রত হালদার জানান, শিশুটির দুই চোখেই ছিল ছানি। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলে কনজেনিটাল টোটাল ক্যাটার্যাক্ট (Congenital Total Cataract)।
প্রায় এক ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আফিয়ার দু’টো চোখই ছানিমুক্ত হয়েছে। তবে এখনই তার চোখে লেন্স বসাননি চিকিৎসকরা। বদলে তাকে চশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কাচের উপর থেকে ময়লা সরিয়ে দেওয়ার মতো ছানি পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। শিশুর চোখের গঠন এখনও সম্পূর্ণ হওয়া বাকি। তাই ইন্ট্রা অকুলার লেন্স বসানো হয়নি।
ছোটবেলায় ছানি হওয়ার সমস্যা অনেক। চোখের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের গঠনও। চোখ দিয়ে কিছু দেখার পর বার্তা যায় মস্তিষ্কে। এভাবেই ধীরে ধীরে আশপাশের জিনিস চিনতে শেখে শিশুরা। ছোট থেকেই যদি দৃষ্টিশক্তি থাকে ঝাপসা। তাহলে কোনও বস্তুর ঝাপসা অবয়বটাই গেঁথে যায় মস্তিষ্কে। ছোটদের ছানি তাই চিকিৎসকদের কাছে আতঙ্কের। তাঁরা জানাচ্ছেন, শুধু মস্তিষ্কের গঠনই নয়, সঠিক সময় অস্ত্রোপচার না হলে নির্দিষ্ট দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারে না শিশুরা। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে অস্ত্রোপচারই পারে এর থেকে মুক্তি দিতে। বাংলায় ছোটদের ছানি চোখে পড়ার মতো। গত এক মাসে একশোরও বেশি একরত্তি এসেছে রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজিতে। ডিরেক্টর ডা. অসীম ঘোষ জানিয়েছেন, অভিভাবকরা সচেতন হয়েছেন। জেলাস্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সে কারণেই ছোটদের চোখের সমস্যা দ্রুত নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। অতি দ্রুত তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে এখানে।
কেন এত অল্প বয়সে ছানি পড়ছে শিশুদের চোখে? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শিশু গর্ভে থাকাকালীন মায়ের যদি কোনও সংক্রমণ থাকে, তাহলে এমনটা হতে পারে। শিশুদের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবব্রত হালদারের মতে, শিশু জঠরে থাকার সময় মা স্টেরয়েড জাতীয় কোনও ওষুধ নিলে এমনটা হতে পারে। সন্তান পেটে থাকার সময় মা যদি বারবার এক্স রে করেন তবে একাধিকবার বিকিরণ রশ্মির সংস্পর্শে আসার জন্য সন্তানের জন্মগত ছানির ঝুঁকি থাকে। শংকর নেত্রালয় এবং একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌম্য নারায়ণ খাটুয়া বলেন, “গর্ভবতী মায়ের ইবোলা জাতীয় জীবাণু সংক্রমণ হলেও আশঙ্কা থেকে যায় অল্প বয়সে ছানির। বাবা-মার দু’বার চোখ দেখানো উচিত। নবজাতকরা চোখের সমস্যা সহজে বোঝাতে পারে না। তাই বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.