গৌতম ব্রহ্ম: মুখে যে যাই বলুন না কেন করোনা আতঙ্কে থরহরিকম্প দশা প্রায় প্রত্যেকের। সকলে ভাবছেন কীভাবে রোগের করালগ্রাস থেকে নিজেকে সুস্থ রাখা যায়। তাই তো গুজব হোক কিংবা সত্যি, যাই কানে আসছে সাত পাঁচ না ভেবে সবই বিশ্বাস করে নিচ্ছেন। ঠিক যেমন ICMR-এর পরামর্শ সম্পর্কে সঠিকভাবে না জেনেই হুড়মু্ড়িয়ে মুড়ি-মুড়কির মতো হাইড্রক্সিক্লোকুইন খাওয়া শুরু করেছেন অনেকেই। কিন্তু জানেন কি করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে এভাবেই আপনি বারোটা বাজাচ্ছেন হৃদপিণ্ড, কিডনি এবং চোখের।
ঠিক কী জানায় ICMR? বলা হয়, হাইড্রক্সিক্লোকুইন দিয়ে করোনা ভাইরাসকে রোখা সম্ভব হতে পারে। যদিও পুরোটাই সম্ভাবনা। ক্লিনিক্যালি টেস্টেড নয়। এছাড়া জানানো হয়, সন্দেহজনক অথবা প্রমাণিত রোগীর চিকিৎসায় যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা প্রমাণিত কোভিড রোগীর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জন্য। কিন্তু আমজনতার একাংশের এত কথা শোনার ধৈর্য নেই। তাই তাঁরা শোনামাত্রই ভিড় করেন ওষুধের দোকানে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেদার বিকোচ্ছে ওষুধ।
যার ফল মারাত্মক হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। কারণ, একজন সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি এই ধরনের ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত যে হবে তা বলাই বাহুল্য। অপ্রয়োজনে হাইড্রক্সিক্লোকুইন খেলে কী হতে পারে? বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌম্যকান্তি পাণ্ডার মতে হতে পারে হৃদযন্ত্রের ছন্দপতন, হার্ট ফেলিওর, রেটিনার গন্ডগোল, রক্তাল্পতা, ব্রণ, চুল উঠে যাওয়া, খিঁচুনি, দেখতে সমস্যা, মানসিক রোগ, প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখার অসুবিধে, শুনতে না পাওয়া, কান ভোঁ ভোঁ করা, আমবাত ও অন্যান্য অ্যালার্জি, লিভার ফেলিওর, প্যারালাইসিস, সোরিয়াসিস ও পরফাইরিয়ার মতো চর্মরোগ বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, বমিভাব।
শহরের বিখ্যাত নেফ্রোলজিস্ট চিকিৎসক প্রতীম সেনগুপ্তও এই প্রবণতার জেরে বিপদের আশঙ্কা করছেন। তাঁর দাবি, এই ওষুধ যে করোনা ঠেকাতে পারবে তা একশো শতাংশ নিশ্চিত নয়। তাই কেবলমাত্র সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে এই ওষুধ খাওয়া অনুচিত। বাংলার প্রথম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা চিকিৎসক তাপস রায়চৌধুরিও প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধ কিনে খাওয়ার বিপক্ষে। এভাবে সাধারণ মানুষ নিজেদের হৃদযন্ত্রের বারোটা বাজাচ্ছেন বলেই মত তাঁর। তাই অযথা আতঙ্কিত হয়ে ওষুধ খাবেন না। বরং সাবধানে থাকুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.