চোখে লেন্স পরলে দেখতে সুন্দর লাগলেও চোখ কতটা ভাল থাকছে সেটা আসল দেখায় বিষয়। কখন চশমা ভাল, কখন লেন্সেই কাজ হবে? সেটাই বুঝিয়ে দিলেন দিশা আই হাসপাতালের ফাউন্ডার, চেয়ারম্যান ডিরেক্টর ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। শুনলেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
চোখের সমস্যায় বা সৌন্দর্যায়নে, লেন্স পরার চল সর্বজনবিদিত। চশমার বদলে লেন্স পরার ট্রেন্ডে ঝুঁকছে অনেকেই। কিন্তু অসাবধানতায় এতে ক্ষতির বহর অনেকটা। কী কী বিষয়ে সজাগ থাকলে এড়াতে পারেন অযাচিত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া – জেনে নেওয়া তাই জরুরি।
লেন্সের রকমভেদ
নানা ধরনের লেন্স হয়। ডেইলি ওয়ার লেন্সেস, সফট কনট্যাক্ট লেন্সেস, ডিসপোজেবল কনট্যাক্ট লেন্সেস, আরজিপি কনট্যাক্ট লেন্সেস প্রভৃতি। আবার হার্ড, সেমি-সফট, সফট– এই জাতীয় শ্রেণিভেদও হয়। সাধারণত লেন্স তৈরি হয় সিলিকন হাইড্রোজেল, হাইডক্সি-ইথাইল মেথাক্রাইলেট (pHEMA) দিয়ে। এর ‘ওয়াটার কনটেন্ট’ লেন্স-টু-লেন্স বদলায়। হার্ড লেন্স মূলত ক্লিনিক্যাল কন্ডিশনে ব্যবহার করা হয়, যেমন কেরাটোকনাস রোগীরা পরেন। তবে বেশি মানুষ সফট লেন্সই পরেন।
চশমার বিকল্প?
উত্তর, খুব তলিয়ে দেখলে ‘না’। লেন্স বেশি পরেন যাঁরা, তাঁদের উদ্দেশ্য সার্বিকভাবে দু’টি। এক, উপকার পাওয়া। আর দুই, চোখের সৌন্দর্যায়ন। যাঁরা খেলোয়াড়, নিউজ প্রেজেন্টার অথচ চোখে হাই পাওয়ার, তাঁরা প্রথম কারণটির জন্য চশমার পরিবর্তে লেন্স পরেন। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে–ধরা যাক, আপনি হয়তো সবসময়ের জন্য মোটা চশমা পরেন। আপনার চোখে হাই পাওয়ার। কোনও অনুষ্ঠানে যাবেন, কিছু সময়ের জন্য চশমার সঙ্গ ছাড়তে চান। তাই লেন্স পরলেন। অথবা ধরে নিন, আপনি হয়তো এমনি চশমা পরেন না। আপনার চোখে পাওয়ারও নেই। কোনও পার্টিতে যাবেন। চোখজোড়াকে আকর্ষণীয় দেখাতে পছন্দের রঙের লেন্স পরলেন। সীমিত সময়ের ব্যবহারের জন্য লেন্স উপকারী। তবে চশমার মতো সর্বক্ষণ পরে থাকার জন্য নয়।
যাঁদের চোখে মাইনাস পাওয়ার, মাইনাস চার-পাঁচ কিংবা তারও বেশি, তাঁদেরই মূলত চশমার বদলে লেন্স পরার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কিন্তু যাঁদের চোখে মাইনাস পাওয়ার অথচ মাইনাস পয়েন্ট ফাইভ, মাইনাস ওয়ান কিংবা মাইনাস ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ, তাঁদের লেন্স পরার দরকার পড়ে না। চশমাই বাঞ্ছনীয়। আর যদি প্লাস পাওয়ার হয়, তাহলে লেন্স আপনার জন্য নয়। কারণ, প্লাস পাওয়ারে কাছে দেখতে অসুবিধা হয়। তাই লেন্স পরলে অস্বস্তি আরও বাড়ে।
এছাড়া আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের জলবায়ুতে যে পরিমাণ দূষণ আর বাতাসে ধুলোবালি বেশি, তাতে লেন্স পরার অসুবিধা, সুবিধার থেকে বেশি। তাই চক্ষু বিশারদদের মতে, চোখের স্বাস্থ্যরক্ষায় লেন্স এখনও চশমার বিকল্প নয়।
উপকারী/অপকারী
লেন্স একমাত্র তাঁদের জন্য উপকারী, যাঁদের চোখে পাওয়ার খুব বেশি। তাঁরা খুব মোটা চশমার বদলে লেন্স পরতে পারেন। তবে একটা চিন্তাধারা এমনও রয়েছে যে, লেন্স পরলে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মাইনাস পাওয়ার আর বাড়ে না। অর্থাৎ একটি বাচ্চার এখন যদি চোখের পাওয়ার মাইনাস থ্রি থাকে, আর সে যদি এখন থেকেই লেন্স পরতে থাকে, তাহলে আঠেরো বছর বয়সে পৌঁছে তার পাওয়ার বেড়ে মাইনাস টেন হবে না। কিন্তু এর পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই। চোখের হাই পাওয়ার থাকাটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক।
সাবধানতা জরুরি
কনট্যাক্ট লেন্স পরতে গেলে কিছু সাবধানতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেমন –
স্নান করা বা সাঁতার কাটার সময়ে লেন্স পরবেন না।
লেন্স পরে ঘুমাতে যাবেন না।
ব্যবহারের পর লেন্স ঠিকমতো পরিষ্কার করুন। লেন্স যথাসম্ভব সাফসুতরো রাখার চেষ্টা করুন।
যখন লেন্স ব্যবহার করছেন না, তখন কনট্যাক্ট লেন্সের সলিউশনে তা ডুবিয়ে রাখুন।
নির্দিষ্ট ব্যবধানে লেন্স পালটাবেন। কারণ, এক টানা একই কনট্যাক্ট লেন্স পরে থাকা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
লক্ষ্য রাখবেন, যে লেন্স ব্যবহার করছেন, তাতে কোনও স্ক্র্যাচ এসেছে কি না। যদি আসে, লেন্স পালটান। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত লেন্স পরলে তা থেকে করনিয়ায় ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে, করনিয়ায় আলসার (ব্যাকটিরিয়াল, ফাংগাল) হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে দৃষ্টিশক্তিতে। প্রয়োজনে কর্নিয়া ট্রান্সপ্ল্যান্টও করতে হতে পারে।
লেন্স পরে চোখ কড়কড় করা, লাল হয়ে যাওয়া বা কোনও অস্বস্তি অনুভব হলেই সাবধান। অবিলম্বে লেন্স খুলে ফেলুন এবং চোখের ডাক্তার দেখান।
ব্র্যান্ডেড কোম্পানির লেন্স পরুন। সমস্ত নিয়ম মেনে চলুন।
অত্যধিক লেন্স পরবেন না। লেন্স বেশি পরলে কর্নিয়ার উপর চাপ পড়ে। কর্নিয়া সংক্রমণ-প্রবণ হয়ে পড়ে, শুকিয়েও যেতে পারে।
ধুলো থেকে বাঁচুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শমতো ল্যাসিক সার্জারি করিয়ে নিতে পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.