ছবি: প্রতীকী
ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য থেকে কতটা ক্ষতি জানেন? তবুও খাবেন? মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত হওয়ার আগে সাবধান হয়ে যান। ক্যানসার এড়াতে সতর্ক করে এমনটাই জানাচ্ছেন নারায়ণা সুপারস্পেশালিস্ট হসপিটালের বিশিষ্ট অঙ্কোলজিস্ট ডা. সুমন মল্লিক। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার: হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার বলতে মূলত মুখমন্ডলের ক্যানসারকেই বোঝায়। ঠোঁট, মাড়ি, মুখের তালু, জিহ্বা, গলা, ভোকাল কর্ড ক্যানসার এই ধরনের ক্যানসারের মধ্যে পরে। তবে ব্রেন ক্যানসার কিন্তু এর মধ্যে পরে না। সেটা সম্পূর্ণ আলাদা।
কতটা ভয়ের?
এই দেশে পুরুষরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারে। যার মূলে তামাকজাত দ্রব্যে। বর্তমানে চিকিৎসা করে মানবদেহের বিভিন্ন ক্যানসারের বেশিরভাগই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার। সমীক্ষায় বলছে, এই ক্যানসারকে সম্পূর্ণ রোধ করা গেলে দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব।
কারণ: গত ১০-১২ বছরে মুখমণ্ডল ও গলার ক্যানসারের বাড়বাড়ন্তের একটি বড় কারণ তামাক দ্রব্যের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। সিগারেট, বিড়ি, খৈনি, গুটখা সেবনের জন্য প্রতিবছর প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ দুই ধরনের ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন এর জন্য দায়ী। মোট লোকসংখ্যার ৬২ শতাংশ পরোক্ষ ধূমপানে আক্রান্ত হচ্ছে। এই ক্ষতি থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। ভারতবর্ষে এই ক্যানসারে আক্রান্তের বেশিরভাগই চেন স্মোকার। গুটখা, পান মশলা, সুপারি খাওয়ার অভ্যাস ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনে। অনেকদিন ধরে দাঁতের সমস্যা থাকলে, ঠিক মতো চিকিৎসা না করলে তা থেকে ছড়াতে পারে মুখমন্ডলের ক্যানসার।
মহিলাদেরও হয়?
যেহেতু পরোক্ষ ধূমপান খুব বেশি ক্ষতিকর সেক্ষেত্রে বর্তমানে শুধু পুরুষরাই নয়, মহিলারাও সমানভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে যাঁরা তামাক দ্রব্যে আসক্ত নন তাঁদের এই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রোগের প্রকাশ: অনেকদিন ধরে মুখে ঘা (যা দীর্ঘ চিকিৎসা করেও কমতে চায় না)। হঠাৎ গলা ব্যথা, গলার স্বর পরিবর্তন, ঠান্ডা লাগলে তা সারতে না চাওয়া। কখনও কখনও গলার গ্ল্যান্ড ফুলতেও পারে। গলায় খুব ছোট টিউমারও থাকতে পারে। নাকে ক্যানসার হলে নাক থেকে অনেকদিন ধরে ব্লিডিং হতে পারে।
চিনে নিন: প্রথম অবস্থায় বিশেষজ্ঞের ক্লিনিক্যাল আই রোগ নির্ধারণ করে। ক্যানসার সন্দেহ করলে বায়োপসি করে তার যথার্থতা যাচাই করা হয়। বায়োপসিতে কোন ধরনের ক্যানসার, তা বুঝে সেই মতো চিকিৎসা করা হয়। কতটা স্থান জুড়ে ক্যানসার বা টিউমার ছড়িয়েছে তা বুঝতে জরুরি সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা। সেই মতো সার্জারি করতে হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষ করে মুখের ক্যানসারের ক্ষেত্রে সার্জারি জরুরি। এই সার্জারির পর মুখের গঠন ঠিক করতে প্রয়োজন হয় প্লাস্টিক সার্জারি করার। ক্যানসার অপারেশনের পর প্রয়োজন অনুযায়ী রেডিওথেরাপি অথবা কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু হলে কেমো অথবা রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয় না। তবে গলার ক্যানসারের ক্ষেত্রে মূলত রেডিওথেরাপি করেই চিকিৎসা করা হয়।
রিস্ক ফ্যাক্টর: সরাসরি দায়ী কে তা বলা কঠিন হলেও কাদের সম্ভাবনা বেশি তা দীর্ঘ সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ক্যানসারের সম্ভাবনা খুব বেশি। সবচেয়ে বেশি হয় যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি। পুরুষদের রিস্ক অনেক বেশি মহিলাদের থেকেও। যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের ঠোঁটে ক্যানসার হওয়ার রিস্ক সবচেয়ে বেশি। খুব বেশি মদ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, বেশি সময় রোদে কাজ করলে, ডায়েট করতে গিয়ে ফল, সবজি খুব কম পরিমাণে খেলে, বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে দূষিত বায়ু শরীরে বেশি প্রবেশ করলে ও ওরাল সেক্স করলে হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
এড়াতে: ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য সেবন ছাড়তে হবে। কিছু খাওয়ার সময় বারবার কামড়ে ফেলার অভ্যাস থেকে ইনফেকশন হয়ে ক্যানসার হতে পারে। এমন হলে অবহেলা নয়। প্রয়োজনে দাঁত তুলে ফেলতে হবে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে ভাইরাল ইনফেকশন হলে হয় এই ক্যানসার। অসুরক্ষিত যৌন মিলন থেকে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। তাই, অস্বাভাবিক সঙ্গম না করাই ভাল।
বিশদ জানতে যোগাযোগ করুন ৮৬৯৭৫৫৫৫৬৭ এই নম্বরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.