Advertisement
Advertisement

Breaking News

Health Tips

বাচ্চাদের জন্য হেলথ ড্রিঙ্ক কতটা নিরাপদ? জানালেন বিশেষজ্ঞ

এতে ক্ষতি হচ্ছে না তো?

Be careful before giving sweets and health drinks to children, know this Health Tips
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:May 3, 2024 5:36 pm
  • Updated:May 3, 2024 5:36 pm  

শিশুকে মিষ্টি খাইয়ে, শিশুর চেয়ে বাবা-মা বেশি আনন্দ পান। অধিকাংশ শিশুখাদ্যেই চিনির আধিক্য। অজান্তেই চিনির ঘেরাটোপে বেড়ে ওঠে আপনার সন্তান। যার মাশুল গুনতে হয় আজীবন। এই অপ্রিয় সত্যটি তুলে ধরলেন পিয়ারলেস হাসপাতালের পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা. সংযুক্তা দে। লিখলেন জিনিয়া সরকার। 

মিষ্টি স্বাদ কার না প্রিয়! মিষ্টু থেকে বিট্টু, তোজো থেকে জোজো, তিন্নি, টুবলি, বাবলি সকলেই মিষ্টি পেলে চেটেপুটে খায়। বাবা-মায়েরাও দেখেন এতে ঝামেলাও কম, তাই খেতেও দেন। কিন্তু জানেন, শিশুর ভালো চেয়ে যা খেতে ওদের আশকারা দিচ্ছেন, সেই মিষ্টি খাবারগুলো কিন্তু মোটেই নিরাপদ নয়। এই নিয়ে নানা তথ্য ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কতটা নিরাপদ বাজার চলতি হেলথ ড্রিংকগুলো, তা নিয়েও।

Advertisement

শুধু হেলথ ড্রিংক্স কেন, শিশুর প্রিয় অনেক খাবারেই কিন্তু চিনির আধিক্য। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সাবধান হতে হবে। জানতে হবে মিষ্টি শুনতে ভালো, কিন্তু ছোটদের শরীরের জন্যও মোটেই ভালো নয়, কেন?

Child-Health-Drink-1

আদপেই হেলথ ড্রিংক্স নয়
নিয়ম করে হেলথ ড্রিংক্স খাওয়ানোর প্রবণতা। শিশুর ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় জোর করে মায়েরা খাওয়ান। গল্পের গরু গাছে তুলে কেউ বলছে শিশুর পুষ্টি সম্পূর্ণ হবে, কেউ বলছে লম্বা হবে, ব্রেনের বিকাশ ভালো হবে ইত্যাদি। এখানেই শেষ নয়, কেউ আবার দাবি করছে রোজ খেলে বুদ্ধিও বাড়বে। পুষ্টি তলানিতে, উল্টে চিনির পরিমাণ প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ। ভাবুন, দীর্ঘদিন ধরে এগুলি খেয়ে গেলে শিশুর শরীরে কত রকমের ক্ষতি হতে পারে। জীবনের শুরু থেকেই ক্রমাগত এত সুগার শরীরে জমা হলে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ।

অভ্যাস গড়ে তুলুন শুরু থেকেই
কোনও ভালো কাজ করার প্রেক্ষিতে শিশুদের চকোলেট দেওয়ার প্রলোভন তৈরি করবেন না। ‘ভালো করে পড়ো, কথা শোনো, তাহলে লজেন্স, চলকেট দেব।’ – না এসব বলবেন না। এগুলিই কিন্তু ধীরে ধীরে মিষ্টি খাওয়ার দিকে শিশুদের প্রবণতা গড়ে তোলে। যেটা খারাপ। পরবর্তীতে নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়।

দেখা যায়, অন্নপ্রাশনের পর থেকেই শিশুর খাদ্য তালিকায় মিষ্টি আধিক্য বাড়ে, এমন খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করানো ভুল। মাথায় রাখুন —

এই সময় অর্থাৎ প্রথম এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে নুন, চিনি যুক্ত খাবার একেবারেই খাওয়ানো চলবে না। শিশুর জন্য রান্না করা খাবারেও নুন, চিনি বাদ দিতে হবে।
প্রয়োজনে শিশুকে মিষ্টি আলু, কুমড়ো দেওয়া যেতে পারে, অল্প আনসল্টেড বাটার দিয়ে ভাত মেখে অথবা ডাল ভাল বিভিন্ন সবজি দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু আলাদা করে চিনি খাওয়াবেন না।
চিনি বা নুন যুক্ত না করলে শিশু খাবারটি খেতে চাইবে না, তা কিন্তু নয়। প্রথম দিন থেকে যেভাবে অভ্যাস করাবেন সেটাতেই শিশু ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হবে।
কখনওই বাইরে থেকে আলাদা করে মিষ্টি খাবার শিশুকে খেতে দেবেন না। অনেকেই দুধের সঙ্গে নানা মিষ্টি ফ্লেভার মিশিয়ে খাওয়ানো অভ্যাস করান। এছাড়া হেলথ ড্রিংক্স জোর করে দিনে তিন-চারবার খাওয়ান। গ্লুকোজ, তালমিছরির জল পান করান। এগুলো করবেন না।

Child-1

আমেরিকান অ্যাকাডেমিক অফ পেডিয়াট্রিক-এর তথ্য এক বছর বয়সের আগে কেনা ফ্রুট জ্যুস একেবারেই শিশুকে দেওয়া যাবে না। এমনকী, তিন বছর বয়স পর্যন্ত এই এর উপর নানা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
সম্প্রতি ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অফ পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেলথের গবেষকরা এক রিপোর্টে দেখেছেন, বাচ্চাদের খাবারে মিষ্টির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবং মিষ্টি খাবারের প্রতি তাদের নির্ভরশীলতা তৈরির আগেই সবজি খাওয়ানো শুরু করা গেলে তা তাদের সুষম পুষ্টির জোগান দেবে। আর মিষ্টির প্রতি একটা নিয়ন্ত্রণ গড়ে উঠবে ছোট থেকেই।

খাবারে বেশি চিনি থাকলে ক্ষতি
শৈশব থেকে যদি অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খাওয়ানো হয়, তাহলে কিন্তু শরীরেও নানা পরিবর্তন ঘটতে থাকে। প্রথমেই যেটা হয়, শিশুর মেটাবলিজম বা হজমশক্তি গন্ডগোল করতে শুরু করে। শরীরে ফ্যাট জমতে থাকে। লিপিড প্রোফাইল, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। এটা ছোট বয়স থেকেই হতে শুরু হয়ে যায়। তাই শিশুদের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ ও ওবেসিটি আজকের দিনে একটা বড় সমস্যা।

Chocolate

ওজন বাড়ার সঙ্গে শুরু হয় শরীরে নানা রকম হরমোনাল পরিবর্তন। তা থেকেই দেখা দেয় ডায়াবেটিসের সমস্যা। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে বড়দের ডায়াবেটিস (ম্যাচিওরিটি অনসেট ডায়াবেটিস অফ ইয়ং) আক্রান্তের প্রবণতা বাড়ছে এই সব কারণেই। এছাড়াও হতে পারে নন ইনসুলিন রিলেটেড ডায়াবেটিস। দরকার চিকিৎসার।

আসলে, অতিরিক্ত সুগার সমৃদ্ধ খাবার যেমন চকোলেট, বিভিন্ন হেলথ ড্রিংক, ফ্রুট জুস ইত্যাদি খেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। শরীরে ফ্যাট রূপে তা জমতে শুরু করে। যেটা খুবই অ্যালার্মিং। ওবেসিটির কারণে মেয়েদের মধ্যে বয়সের আগেই মাসিক শুরু হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আর মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল তাড়াতাড়ি শুরু হলে মেয়েদের উচ্চতাও কম হয়।

[আরও পড়ুন: রাহুল গান্ধীর ফোন পেয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন রাখি সাওয়ান্ত! কাকে হারাতে চান?]

মাতৃদুগ্ধের বিকল্প ফর্মুলা মিল্ক, তবে বুঝে
শিশুর গ্রোথ ঠিকমতো হবে কি না, তার দৃষ্টিশক্তি, ব্রেন ফাংশন সবই ভালো থাকবে কি না সেটা পুরোটাই নির্ভর করে শিশুর প্রথম হাজার দিন সে কী খাচ্ছে তার উপরে। তাই জন্মানোর প্রথম ৬ মাস মাতৃদুগ্ধই সবচেয়ে নিরাপদ খাবার। যদি দেখা যায় শিশুদের ছমাস পর্যন্ত
ব্রেস্ট মিল্ক দেওয়ার পরও পুষ্টি সম্পন্ন হচ্ছে না, তখন ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সুগার বা চিনির উপস্থিতি নেই এমন মিল্ক খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে খুব বুঝে, যে ফর্মুলা মিল্ক মোটামুটি ব্রেস্ট মিল্কের সমতুল সেটা দিতে হবে আর দেখতে হবে তাতে যেন অ্যাডেড সুগার না থাকে।

ডোনাট, কটন ক্যান্ডি বাদ
শিশুর খাবারে খুব অল্প মাত্রায় চিনি দিতে পারেন এক বছর বয়সের পর থেকে। তবে ভুলেও চকোলেট, ডোনাট, কটন ক্যান্ডি, মার্সমেলো, বিভিন্ন রকমের কার্বোনেটেড ড্রিংক, হেলথ ড্রিংক্স ইত্যাদি কখনওই খাওয়াবেন না। জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুডের স্বাদ শিশু যেন না পায়।
বদলে ছোলা, বাদাম, পপকর্ন, ড্রাই ফ্রুটস যেমন খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি ছোট থেকে খাওয়ালে শিশুরা ধীরে ধীরে এগুলো খেতে পছন্দ করে।

Chaild-Candi

প্রতিদিনের খাবারে অবশ্যই রাখুন ফল, সবজি, পর্যাপ্ত প্রোটিন। উদ্ভিজ প্রোটিন বা সয়াবিন, বিভিন্ন ডাল নানা ভাবে বানিয়ে খাওয়ান। স্বাদমতো বাটার দিয়ে মুখরোচক করে দিতে পারেন। পনির, ডিম, মাছ খাওয়াতে পারেন। অল্প ভাত, রুটি, স্প্রাউট বা ছোলা খাওয়ানো যায়। ফল ও ফলের রস বাড়িতে বানিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

কখন সতর্ক হবেন?

শিশু মোটা হতে থাকলে প্রথমেই সাবধান হতে হবে।
ফ্যামিলি হিস্ট্রিতে ডায়াবেটিস থাকলে শিশুকে প্রথমে থেকেই মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যাপারে সতর্ক হোন।
মাঝেমধ্যে শিশুর ওজন ও উচ্চতা সঠিক রয়েছে কি না সেটা বিএমআই চেক করে দেখা দরকার। ৫ বছর বয়সের পর থেকেই এটা দেখা দরকার।
নিয়মিত খেলতে নিয়ে যান শিশুকে, মাঠে দৌড়ঝাঁপ করলে শিশুর শরীরে মেদ জমে না, ফলে ডায়াবেটিস কিংবা কোলেস্টেরলের সমস্যাও প্রতিহত হয়।

ফোন – ৯০০৭৭ ০৭১৩৮

[আরও পড়ুন: ১০ হাজার ডিজাইন! বনশালির ‘হীরামাণ্ডি’তে ৩০০ কেজির গয়না, পরে পালাতে চেয়েছিলেন রিচা! ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement