বসন্তের মৃদু বাতাসে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়। একটু গাফিলতি করলেই চোখ-নাক দিয়ে জল পড়া শুরু। এমন সমস্যা থাকলে এই সময়টা খুব সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন পালমোনলজিস্ট ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়। লিখলেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
মানবশরীরে নিজস্ব প্রোটিন ছাড়া কোনও ‘ফরেন’ প্রোটিন ঢুকলে শরীর তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া উপকারী হলে ইমিউনিটি, আর ক্ষতিকর হলে তা অ্যালার্জি। পোলেন অ্যালার্জি (Pollen Allergies) রোগ নয়, রোগের কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হয়। নাক-চোখ দিয়ে জল পড়ে, হাঁচি-কাশি, অ্যাস্থমা হয়। চামড়ার রোগও হতে পারে।
কাদের হয়?
ছ’মাসের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধ– যে কারও হতে পারে। আবার ছোটবেলায় কারও ধাত ছিল, পরে কমল, আবার ৫০ পেরোলে হল, এমনটাও ঘটে।
কী থেকে হয়?
যে কোনও ফুলের রেণু থেকে হতে পারে। সবচেয়ে বেশি হয় ‘গ্রাস পোলেন’ থেকে অর্থাৎ ঘাস। ফুলের রেণু বাতাসে ভাসে। তা শ্বাসবায়ুর সঙ্গে মিশে মানবশরীরে ঢোকে। এই মরশুম মানে ফেব্রুয়ারি-মার্চ-এপ্রিলে অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়ে। কারণ ‘সিজন চেঞ্জ’। এই সময় বায়ুমণ্ডলে ‘পোলেন কাউন্ট’ বাড়ে। বিদেশের কাগজপত্রে এই নিয়ে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হয়। বিদেশে কোন দিন বাতাসে ‘পোলেন’ বাড়ছে বা কমছে, তা জানানো হয়। এতে যাঁদের অ্যালার্জির ধাত আছে, তাঁরা সাবধান হতে পারেন। এদেশে তেমন ব্যবস্থা নেই।
অ্যালার্জি বুঝবেন কীভাবে?
নাক দিয়ে জল পড়লে, হাঁচি হলে অনেকে ডাক্তারের কাছে যান। তখনই জানা যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না, অ্যালার্জি হচ্ছে কী থেকে? উত্তর মেলে পরীক্ষা করালে। পরীক্ষা দু’রকম। এক, স্কিন প্রিক টেস্ট। ডাক্তাররা যদি সন্দেহ করেন, কোনও নির্দিষ্ট কিছু থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে, তখন আক্রান্তের চামড়ার উপর একটি বিশেষ ওষুধ লাগিয়ে, সুচ ফোটানো হয়। সত্যিই ওই বস্তু থেকে অ্যালার্জি হলে চামড়া লাল হয়ে ফুলে ‘রিঅ্যাকশন’ হয়। দ্বিতীয় ব্লাড টেস্ট। একে ‘অ্যালার্জেন স্পেসিফিক’ টেস্ট (আইজিই) বলে। আইজিই হল একটি প্রোটিন, যা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ঘটায়।
নির্দিষ্ট খাবারেও কি অ্যালার্জি?
ফুড অ্যালার্জি (Food Allergy) অন্য বিষয়। এর সঙ্গে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। আর খাবার থেকে অ্যালার্জি হয়েছে কি না, ধরা সহজ। কারণ রোগী নিজেই জানান, কী খাওয়ার পর হয়েছে।
প্রতিরোধ কীভাবে?
৯০-৯৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণযোগ্য, কিন্তু সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ সম্ভব নয়। যাঁদের বার বার হয়, তাঁদের ডাক্তারদের দেওয়া ওষুধ খেতে হবে। আর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তা বন্ধ করা যাবে না। বিশেষ করে জানুয়ারি থেকে মার্চ-এপ্রিলে এই অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়ে। মাস্কে বিশেষ তফাত হয় না। কী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে, তা একবার জানা গেলে সমস্যার সমাধান করার কাজটি সহজ হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.