Advertisement
Advertisement
Sugar

চিনির চরিত্র চেনা জরুরি, কারা সতর্ক হবেন?

সুগার বেশি হলে যেমন সমস্যা, কম হলেও কিন্তু বেশ ক্ষতি।

Balance of Sugar level in body necessary, Expert gave Health Tips

ছবি: সংগৃহীত

Published by: Suparna Majumder
  • Posted:January 10, 2025 5:14 pm
  • Updated:January 10, 2025 5:15 pm  

মিষ্টি খাওয়া নিয়ে সবসময়ই দোটানা – খেলেও সমস্যা, না খেলেও সমস্যা। একদিকে শর্করা শারীরিক শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস, অন্যদিকে বেশি মিষ্টি শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। প্রয়োজন ব্যালেন্স। তা কীভাবে করবেন, জানালেন রুবি জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. দেবাদিত্য দাস। তাঁর কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন জিনিয়া সরকার

সুগার বা মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের নিত্য খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত থাকেই। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, শর্করা। এই শর্করা শুধুমাত্র যে মিষ্টি জাতীয় খাবারেই বর্তমান থাকে তা নয়। যে কোনও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারও শরীরে পৌঁছে ভেঙে গিয়ে শর্করায় পরিণত হয়।

Advertisement

সুগার বা মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের নিত্য খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত থাকেই। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, শর্করা। এই শর্করা শুধুমাত্র যে মিষ্টি জাতীয় খাবারেই বর্তমান থাকে তা নয়। যে কোনও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারও শরীরে পৌঁছে ভেঙে গিয়ে শর্করায় পরিণত হয়। সোজা কথায় শর্করা বা মিষ্টি আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান। এটি শক্তির প্রধান উৎস হলেও অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত শর্করা গ্রহণ আমাদের শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আমরা এর নেতিবাচক প্রভাবগুলি কমাতে পারি। কীভাবে ব্যালান্স করবেন শর্করার? শরীরে সুগার ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি। অর্থাৎ কমও না আবার বেশিও নয়।

Sugar-2
ছবি: সংগৃহীত

কারা সতর্ক হবেন?
সাধারণত ডায়াবেটিস যদি না থাকে তাহলে অনেকেই এই সুগার বা মিষ্টির ব্যাপারে ব্যালান্সে করে চলেন না। এটা ঠিকই যে এটা তাদের প্রয়োজনও নেই। কারণ শর্করার ব্যালান্স করার কাজটা শরীর নিজেই করতে পারে। প্যাংক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন বেরিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রাকে নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই ব্যালান্স করার ক্ষমতা বিগড়ে গেলেই রক্তে শর্করার মাত্রা ডায়াবেটিসের পাশাপাশি একাধিক অসুখের ঝুঁকি ডেকে আনে। আবার শরীরের এই কার্যকারিতা সমস্যা শুরু করলেও প্রাথমিক অবস্থায় তা টের পাওয়াও মুশকিল, তাই সকলেরই একটা পরিমিত পরিমাণে সুগার বা শর্করা সেবন প্রয়োজন। বিশেষত পরিবারে কারও ডায়াবেটিস থাকলে তাঁদের আগাম সতর্কতা দরকার।

ঘাটতিতে ক্ষতি
শক্তির অভাব: দেহে পর্যাপ্ত শর্করা না থাকলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া: শর্করা মস্তিষ্কের জন্য প্রধান জ্বালানি, তাই এর অভাবে মনোযোগের ঘাটতি বা স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে মাথা ঘোরা, ঝিমুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

শর্করার সঠিক ম্যানেজমেন্ট
প্রাকৃতিক উৎস বেছে নিন: মিষ্টি ফল (যেমন আপেল, কমলালেবু, আম) এবং শাকসবজি থেকে শর্করা গ্রহণ করুন। এতে প্রাকৃতিক ফাইবার থাকায় শর্করার শোষণ ধীরে হয়।
প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন: প্যাকেটজাত খাবার বা সফট ড্রিঙ্কে অতিরিক্ত চিনি থাকে। এগুলি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
সঠিক অংশ মেপে খান: দিনে ২০০-৩০০ গ্রাম শর্করা গ্রহণ যথেষ্ট। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
হোল গ্রেইন খাদ্য গ্রহণ করুন: ব্রাউন রাইস, ওটস এবং পুরো শস্যজাত খাবারে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মিষ্টি খাবার খাওয়ার সময় নির্ধারণ করুন: দিনের প্রথম ভাগে শর্করা গ্রহণ করুন, কারণ সকালের দিকে আমাদের শরীরে বেশি শক্তি প্রয়োজন পড়ে।
ব্যায়াম করুন: নিয়মিত শরীরচর্চা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

exercise
ছবি: সংগৃহীত

পরামর্শ
শর্করা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন। যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা মিষ্টি বেশি পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য নিয়ম মেনে চলা জরুরি। মনে রাখবেন, শর্করা যেমন শক্তি দেয়, তেমনি অতিরিক্ত বা অপ্রতুল গ্রহণ বড় স্বাস্থ্যসমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।

সঠিক মাত্রা
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে রোজ ২৩০০ কিলোক্যালোরি শক্তির প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট মিলিয়ে মোট শর্করার পরিমাণ হতে হবে ২৩০০ কিলোক্যালোরি। মহিলাদের ক্ষেত্রে হবে ২০০০ কিলোক্যালোরি। রোজের ডায়েটে ৫৫-৬০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ১৫-২০ শতাংশ প্রোটিন ও বাকি অংশ অর্থাৎ ১৫ শতাংশ ফ্যাট ও ৫ শতাংশ মাইক্রোনিউট্রেন্ট রোজের খাদ্যাভ্যাসে রাখলে তবেই সব কিছুর ব্যালান্স থাকবে। অল্প পরিমাণে অর্থাৎ একবাটি ভাত, দুটো রুটি কার্বোহাইড্রেটের জোগান হিসাবে রাখা যেতে পারে। আটা, ব্রাউন সুগার ইত্যাদিও অল্প পরিমাণে রাখা যেতে পারে। সপ্তাহে একদিন আলাদাভাবে মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে পুরো সপ্তাহ মিষ্টি থেকে বিরত থাকাই ভালো। সে ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেটও পরিমাণমতো খাওয়া দরকার। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে পরিমাণ আরও কম হবে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো সারাদিনের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে হবে। তবে একদম মিষ্টি বাদ দেবেন না। পরিমিত খান।

Diabetes-diet-3
ছবি: সংগৃহীত

অতিরিক্ত হলে কুপ্রভাব
ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত শর্করা দেহে চর্বি হিসাবে জমা হয় এবং স্থূলতার কারণ।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদি অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের
ঝুঁকি বাড়ায়।
হৃদরোগ: অতিরিক্ত শর্করা খেলে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
দাঁতের সমস্যা: মিষ্টি বেশি খেলে ক্যাভিটি বা দাঁতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement