গৌতম ব্রহ্ম: মিড-ডে মিলে দেওয়া হোক আমলকী (Amla) আর গুলঞ্চের মোরব্বা। রেশনে দেওয়া হোক অশ্বগন্ধার মতো ‘ইমিউনিটি বুস্টার’। জাতীয় আয়ুশ মিশন কনক্লেভে এমনই প্রস্তাব দিল বাংলা। যা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে আয়ুশ মন্ত্রকের (Ayush Mantrak) তরফে। শুরু হয়েছে আলোচনা।
দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সম্প্রতি এই সর্বভারতীয় কনক্লেভের আয়োজন করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য, আয়ুশ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল ছিলেন। ছিলেন আয়ুশ সচিব বৈদ্য রাজেশ কোটেচা। ছিলেন দেশের প্রথম সারির সমস্ত আয়ুশ ইনস্টিটিউশনের শীর্ষকর্তারা। এমন একটা প্ল্যাটফর্মে ডাক পেয়েছিল বাংলা। যে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো তিন প্রতিনিধি। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের যুগ্ম সচিব ডা. শ্যামল মণ্ডল, রাজ্যের আয়ুর্বেদ অধিকর্তা ডা. দেবাশিস ঘোষ ও প্রোগ্রাম অফিসার শশীশেখর সীতাংশু।
শুধু বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ দেওয়াই নয়, বাংলায় আয়ুর্বেদ, যোগ ও হোমিওপ্যাথির পরম্পরাকে তুলে ধরেন শ্যামল-দেবাশিসরা। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও আয়ুর্বেদ চর্চা করতেন ডা. যামিনীভূষণ রায়। তিনিই দেশের প্রথম আয়ুর্বেদ হাসপাতাল স্থাপন করেন। বিশ্বের প্রথম হোমিওপ্যাথি কলেজ ‘ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথি কলেজ’ স্থাপিত হয়েছিল এই কলকাতাতেই। আয়ুর্বেদ বিশারদ শ্যামাদাস বৈদ্য, গণনাথ সেন, চরক টিকাকার গঙ্গাধর রায়, সবাই এই বাংলার ভূমিপুত্র।
পূর্ব ভারতের প্রথম যোগ কলেজও চালু হয়েছে এই বাংলায়। চলতি বছরেই বেলুড়ের ‘যোগশ্রী’-তে ছাত্র ভরতি শুরু হবে। দেশের প্রথম যোগ-ন্যাচারোপ্যাথি কাউন্সিল এই বাংলাতেই তৈরি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮ ও ১৯ মে আয়োজিত কনক্লেভে প্রথমে এই সব ইতিহাস মনে করিয়ে দেন বাংলার প্রতিনিধিরা। তারপরই দেন সেই মোক্ষম প্রস্তাব। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, ‘‘ভিটামিন সি-র অন্যতম উৎস আমলকী। গুলঞ্চ (Tinospora) বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই দু’টো মিড-ডে মিলের মেনুতে অন্তর্ভুক্ত করলে দারুণ লাভ।’’
এখানেই শেষ নয়, রেশন দোকানের মাধ্যমে আয়ুশ ক্বাথ, অশ্বগন্ধা, গুলঞ্চ, শতমূলী দেওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। করোনাকালে এই আয়ুশ ক্বাথ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। জানা গিয়েছে, মন্ত্রী থেকে শুরু করে সচিব সব পর্যায়েই এই প্রস্তাব দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে। যা কার্যকর হলে ফের জয় হবে বাংলার। শিশু পুষ্টিতে দীর্ঘদিন আলোচনা চলছে। কীভাবে সহজে শিশুদের কাছে সহজলভ্য অথচ পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়ে গোয়ায় আয়ুর্বেদ কংগ্রেসেও আলোচনা হয়। সেখানে ছিলেন দেবাশিসবাবুরা। ছিলেন কায়া চিকিৎসা বিভাগের অধ্যাপক ডা. প্রদ্যুৎবিকাশ কর মহাপাত্র। দু’জনেই মেনে নিয়েছেন, বাংলার দেওয়া প্রস্তাব মেনে শিশুপুষ্টিতে বিপ্লব আসবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.