গৌতম ব্রহ্ম : এবার খোলা বাজারেই মিলবে এইডস প্রতিরোধক ট্যাবলেট ‘প্রি এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস’(প্রেপ)।অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের আগে এবার যে কেউ বাজার থেকে এই ওষুধ কিনে খেতে পারবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরেই এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করতে চলেছে কেন্দ্র। আর এক্ষেত্রেও বাংলাই হবে পথিকৃৎ। কারণ, পরীক্ষামূলকভাবে ভারতে ‘প্রেপ’ প্রথম ব্যবহার হয়েছে বাংলার সোনাগাছিতে। নিষিদ্ধপল্লির ওষুধ এবার সাধারণের নাগালে।
২০২৫-এর মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস ‘ট্রান্সমিশন’ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘প্রেপ’ প্রকল্প শুরু করেছিল সোনাগাছির ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’। দেড় বছর ধরে সাড়ে সাতশোজন ‘নন-এডস’ যৌনকর্মীকে এই ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তাতে খুব ভাল ফল মিলেছে। সক্রিয়ভাবে দেহ ব্যবসায় থাকা সত্ত্বেও প্রেপ সেবনকারী কারও শরীরে এডসের জীবাণু মেলেনি। রবিবার ‘বিশ্ব এডস বিরোধী দিবস’-এ এমনটাই জানালেন দুর্বার-এর মুখ্য উপদেষ্টা ডা. স্মরজিৎ জানা। তাঁর বক্তব্য, সোনাগাছির সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে ‘ন্যাশনাল এডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ (ন্যাকো) প্রেপ—কে সাধারণের নাগালে আনতে চাইছে। ৭ নভেম্বর দিল্লিতে এই নিয়ে বৈঠক হয়। সর্বভারতীয় নীতি তৈরি হচ্ছে। দু’টি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গাইডলাইনস কমিটিতে রয়েছেন স্মরজিৎবাবু নিজে।
জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরেই গাইডলাইন প্রকাশ হবে। নিষিদ্ধপল্লি বা যৌনকর্মীদের জন্য একরকম। সাধারণ মানুষের জন্য আরেকরকম। ঠিক হয়েছে, এডস রোধে সব নিষিদ্ধপল্লিতেই বিনামূল্যে কন্ডোমের সঙ্গে প্রেপ দেওয়া হবে। আর দ্বিতীয় গাইডলাইনে বলা থাকবে, কীভাবে খোলাবাজার থেকে এই ওষুধ কিনতে পারবে সাধারণ মানুষ। ডাক্তারবাবুরা কীভাবে প্রেসক্রাইব করতে পারবেন ‘প্রেপ’। বিশেষজ্ঞদের মত, কেউ ব্যক্তিগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বা অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক করার পাঁচদিন আগে এই ট্যাবলেট খেতে পারেন। সম্পর্কের পরেও সাতদিন খেতে হবে। তাহলেই আর সমস্যা হবে না। শরীরে ঢুকে পড়লেও মৃতু্য হবে এইচআইভি জীবাণুর। যৌনকর্মীদের অবশ্য প্রতিদিন এই ওষুধ খেতে হবে। কিন্তু যদি কারও মনে হয়, ‘হাই রিস্ক বিহেভিয়ার’-এর মুখোমুখি হবেন তবে এই ওষুধ খেতে পারেন।
জানা গিয়েছে, একটা ট্যাবলেটের দাম ৩০-৪০ টাকা। কিন্তু একসঙ্গে অনেকটা কিনলে কম পড়বে। প্রেপ-এর অবশ্য হালকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। স্মরজিৎবাবু জানিয়েছেন, প্রেপ খেলে মাথা ধরা, বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব হতে পারে। স্মরজিৎবাবুর পর্যবেক্ষণ, কন্ডোম ব্যবহার ও প্রেপ-এর দৌলতে এশিয়ার বৃহত্তম নিষিদ্ধপল্লি সোনাগাছিতে এখন ২ শতাংশেরও কম এডস আক্রান্ত যৌনকর্মী রয়েছেন। নতুন করে সোনাগাছিতে কেউ ‘এইচআইভি পজিটিভ’ হচ্ছে না, এটা বলাই চলে। উল্লেখ্য, বানর ও মানুষ দু’পক্ষের উপরই এই ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। কার্যত এডস চিকিৎসায় বিপ্লব এনে দিয়েছে প্রেপ। সম্প্রতি ভুবনবিখ্যাত ল্যানসেট ম্যাগাজিনেও প্রেপ—এর সাফল্যের কথা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ভারতে আম জনতার নাগালে আসতে চলেছে এই প্রথম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.