ছবি: অরিজিৎ সাহা
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: এ যেন করোনার (Coronavirus) প্রতিচ্ছবি! সংক্রমিতের জীবন বাঁচাতে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হত আক্রান্তকে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার ক’দিন পরই আজমা বা তীব্র শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। অ্যাডিনো (Adenovirus) বা জ্বর-সর্দিতে অসুস্থ খুদেদের ক্ষেত্রেও এমন আশঙ্কার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্তত এমনটাই আশঙ্কা চিকিৎসকদের। ব্রঙ্কোলাইটিস অবলিটারেটের মতো মারাত্মক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, দীর্ঘ সময় ভেন্টিলেটর বা আইসিইউতে রেখে বাচ্চাকে সুস্থ করার পরও স্বস্তির সুযোগ নেই। কারণ, ভাইরাল ইনফেকশন ফুসফুসে স্থায়ী দাগ রেখে যেতে পারে। ছোট্ট শরীরের আরও ছোট ফুসফুসকে স্বাভাবিক কাজ করতে দেয় না। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সময় ICU-র ঠান্ডায় স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
ঠিক এখনই ফুলবাগানে বি সি রায় শিশু হাসপাতালের ৪০টি ভেন্টিলেশন ভরতি। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের ৫৫টি ও মেডিক্যাল কলেজে ৭টি খুদে ভেন্টিলেশনে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছে না। তাই একরত্তিদের ছোট্ট বুক আর মুখের আয়তনের যন্ত্র দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে মনিটরের কাঁটা আর গ্রাফ লাইন দেখছেন পেডিয়াট্রিক ক্রিটিক্যাল বিশেষজ্ঞ। এমন অবস্থা কারও ক্ষেত্রে ৭-১০দিন। কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি দিন। যারা মায়ের কোলে ফিরে আসছে, তাদের বাবা-মাকে পাখি পড়ানোর মতো করে বোঝাচ্ছেন ডা. জয়দেব রায়, মিহির সরকার, সিটিভিএস বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক চক্রবর্তী, সুমিতা সাহার মতো চিকিৎসকরা।
ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধ্যক্ষ ডা. জয়দেব রায়ের কথায়, ‘‘বাচ্চাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ হয়নি। তাই বোঝা যায়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে যেসব বাচ্চা অ্যাডিনো, আইএলআই বা শ্বাসকষ্টের জন্য ভেন্টিলেশনে ছিল, পরে তাদের সিওপিডি বা অ্যাজমা দেখা দেয়। তাই দীর্ঘ সময় চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলতে হয়েছে। জয়দেববাবুর কথায়, পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ফুসফুসের জালিকা ভেঙে গর্তের মতো চেহারা নেয়। বাচ্চা স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে না।’’ একই অভিমত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিতা সাহার।
রোগমুক্তি মানেই যে স্থায়ী মুক্তি, এমনটা ভাবাই উচিত নয়, বলেছেন বিশিষ্ট বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক চক্রবর্তী।
কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘আসলে চিকিৎসক ও রোগী, দু’জনের সচেতনতার অভাব। অনেক চিকিৎসক বলেন না যে, বাচ্চাকে দীর্ঘ সময় ফলো আপে রাখতে হবে। আবার বাচ্চার মা-বাবা ভাবেন, বাচ্চা তো সুস্থ। আর চিন্তা নেই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ফুসফুসের বারোটা বাজিয়ে দেয় ভাইরাস, ভেন্টিলেশন আর স্টেরয়েড।’’ একধাপ এগিয়ে কৌশিক বলেন, ‘‘আসলে ভেন্টিলেশন আর স্টেরয়েড আপৎকালীন দাওয়াই। জীবন বাঁচানোর জন্য টোটকা। কিন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। বাচ্চার বয়স ৪-৫ বছর হলে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। এর ফলে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। আর একটু বড় হলে পালমোনারি ফাংশন টেস্ট করে ফুসফুসের অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে।’’ স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, জীবনের থেকে কোনও কিছু দামি নয়। তাই বাচ্চাকে ফলো-আপে রাখুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.