Advertisement
Advertisement
Fatty liver

ওষুধ নয় নিয়মিত ব্যায়ামেই বাগে ফ্যাটি লিভার, মেনে চলুন চিকিৎসকের পরামর্শ

এদেশে ফ্যাটি লিভারে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত।

According to doctor Fatty liver can be cure with exercise। Sangbad Pratidin
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:August 15, 2023 9:17 pm
  • Updated:August 15, 2023 9:17 pm  

মানুষের ভুল ধারণা, বাজার চলতি কিছু ওষুধে ফ্যাটি লিভার বাগে আসবে। আসলে, এই রোগের ক্ষেত্রে ওষুধের বিকল্পগুলিই বেশি কার্যকর। রুবি জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. অপূর্বকুমার পাল বুঝিয়ে দিলেন কখন ওষুধ, কখন ব্যায়াম। জিনিয়া সরকার

ফ্যাটি লিভার খুব চেনা অসুখ। কিন্তু কী করলে সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান অনেকেরই নেই। মুঠোমুঠো ওষুধ খেলেই রোগ সারে না। জানতে হবে পরিত্রাণের সঠিক উপায়। এদেশে ফ্যাটি লিভার ডিজিজে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত। মহিলা, পুরুষ এমনকী, শিশুরাও এর থেকে বাদ নেই। তবে এই অসুখে ওষুধই শেষ কথা নয়, সঙ্গে এক্সারসাইজও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৫ শতাংশের যদি ফ্যাটি লিভার থাকে তাহলে তার ১ শতাংশ রোগীর ওষুধ লাগে, বাকি ক্ষেত্রে লাইফস্টাইল ঠিক করা বা কায়িক পরিশ্রমের দ্বারাই রোগ মুক্তি সম্ভব। 

Advertisement

রিসার্চ কী বলছে?
গবেষণার তথ্য, ফ্যাটি লিভারের ওষুধ থাকলেও, ফিজিক্যাল এক্সারসাইজও ওষুধের মতোই কার্যকর। ‘পেন স্টেট কলেজ অফ মেডিসিন রিসার্চ’-এ গবেষকদের দাবি, সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট বা আড়াই ঘণ্টা যদি মাঝারি থেকে দ্রুতগতির অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করা যায়, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতারকাটা ইত্যাদি। তাহলে তা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ফ্যাটিলিভার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম। একাধিক স্টাডিতেই গবেষকরা আশানুরূপ ফল পেয়েছেন। এই তথ্য ক্লিনিক্যালি প্রমাণিত। এক্সারসাইজ ননঅ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভার নিরাময়ে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। এমন অনেক ক্ষেত্রেই ফ্যাটিলিভারকে নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না, তখন কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠার একমাত্র পথ ব্যায়াম। এই তথ্য ‘দ্য আমেরিকান জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি’-তে প্রকাশিতও হয়েছে।

ফ্যাটি লিভারের ওষুধ থাকলেও, ফিজিক্যাল এক্সারসাইজও ওষুধের মতোই কার্যকর।

ওষুধ কখন দরকার
ফ্যাটি লিভারে লিভার ফাংশান টেস্ট অন্যতম রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা। এই টেস্টে যদি দেখা যায় ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে এসজিপিটি বেশি থাকে সেক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্টের দরকার। এসজিপিটি ৬০-এর বেশি থাকলে চিকিৎসার প্রয়োজন। সঙ্গে পর্যাপ্ত এক্সারসাইজ করতে হবে।

ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে এসজিপিটি বেশি থাকে সেক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্টের দরকার।

অপুষ্টি বা অতিরিক্ত খাওয়া, দায়ী এগুলিই

  • ওবেসিটি ফ্যাটি লিভারের একটি কারণ। বিশেষত যাদের বডি মাস ইনডেক্স ২৩ এর বেশি তাদেরকে মোটা বলা যেতে পারে। এদের ফ্যাটিলিভারের প্রবণতা বেশি। এছাড়াও আরও কারণ রয়েছে ফ্যাটি লিভারের।
  • ডায়াবেটিস ২-৩ বছর থাকতে থাকতে তার ফলে ফ্যাটি লিভার হতে শুরু করে।
  •  যাঁরা প্রসেস ফুড বেশি খান, প্যাকেজ ড্রিংক বেশি পান করেন, তাঁদের এই সম্ভাবনা বেশি। কারণ এতে উপস্থিত প্রিজারভেটিভ থেকে ফ্যাটি লিভার হতে পারে।
  •  কোল্ড ড্রিংক বেশি পান করাও একটি ফ্যাটি লিভারের কারণ।
  •  খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ফ্যাটি লিভারের সম্পর্ক রয়েছে। স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ‌্যাসিড বা ট্রান্স ফ্যাট যাঁরা বেশি খান, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। বিশেষ বনস্পতিতে ভাজা খাবার যেমন, শিঙাড়া, চানাচুর, কচুরি, চিপস ইত্যাদি বেশি খেলে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে।
বাইরের ফাস্ট ফুড থেকেও বাড়ে ফ্যাটিলিভারে আক্রান্তের সম্ভাবনা।
  •  কম ওজন হলেও, এই সব খাবার খেলে ফ্যাটিলিভারে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে।
  •  আবার যাঁরা অপুষ্টিতে ভোগেন, ঠিক মতো খেতে পান না, পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিনের অভাব হলে তাঁদের ক্ষেত্রেও কিন্তু ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  •  যাঁদের হাড়ের জয়েন্টের অসুখ বা সোরিয়াসিস হয়, তাঁদের এক বিশেষ গ্রুপের ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। অ্যান্টি রিউম্যাটিক ড্রাগ ফ্যাটি লিভারের কারণ।
  • বেরিয়াট্রিক সার্জারি করে অনেকে ওবেসেটি থেকে মুক্তি পান। কিন্তু তার পরবর্তী ফলস্বরূপ লিভারে ফ্যাট জমতে পারে।
  •  অ্যালকোহল বা মদ ফ্যাটিলিভার ডিজিজের একটি অন্যতম কারণ।
  • যাঁরা সারাদিন বসে থাকেন, কোনও কায়িক পরিশ্রম করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেও ফ্যাটি লিভারের সম্ভাবনা থাকে।
লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট জমলে ফ্যাটি লিভার হয়।

ঠিক কী হয়?
লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট জমাকেই বলা হয় ফ্যাটি লিভার। সাধারণত ওবেসিটি বা যাঁরা খুব মোটা তাঁদেরই ফ্যাটিলিভার হবে এটা অনেকেই মনে করেন। তা নয়। যাঁরা মোটা নন, তাঁদেরও সম্ভাবনা রয়েছে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার। আলট্রাসাউন্ড, ফাইব্রোস্ক্যান, এমআরআই করে বোঝা সম্ভব লিভারে ফ্যাট জমেছে কি না। সঙ্গে দরকার লিভার ফাংশন টেস্ট করে দেখা। ফ্যাটিলিভারের অনেক গুলি গ্রেড হয়। গ্রেড ১-২ নিয়ে অতটা চিন্তার ব্যাপার থাকে না। কিন্তু গ্রেড ৩ হলে চিন্তার বিষয়।

[আরও পড়ুন: রক্তচাপ বশে থাকবে আয়ুর্বেদের গুণে, অবহেলা করলে পরিণতি হতে পারে মারাত্মক]

খাওয়ার ব্যাপারে মাথায় রাখা জরুরি

  •  রোগা হতে গিয়ে ক্যালোরি বাদ দিয়ে অনেকেরই পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। ভিটামিন, মিনারেল বাদ হয়ে যাচ্ছে। ক্যালশিয়াম, মিনারেল, আয়রন, ভিটামিন, ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড এগুলি খেতে হবে। এগুলির অভাবেও ফ্যাটি লিভার হয়।
  • ফ্যাটি লিভার প্রতিহত করতে সামুদ্রিক মাছ বা মাছের তেল খেতে হবে। যা ওমেগা থ্রি-র উৎস। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল লিভারের জন্য ভাল।
  •  ভিটামিন সি বা যে কোনও সিট্রাস বা টক রসাল ফল এই অসুখ থেকে মুক্তি দিতে কার্যকর। মোসাম্বি, কমলালেবু বা পাতিলেবু সবই লিভারের জন্য ভাল। আর আমলকিও ভিটামিন সি-র খুব ভাল উৎস।
  •  ফল যেমন, আপেল, নাসপাতি, কলা, পেয়ারা, জামরুল সবই কিন্তু লিভারের জন্য ভাল।
  •  লিভার ভাল রাখতে যে কোনও সিড খাওয়া যেতে পারে। যেমন, আমন্ড, বাদাম ইত্যাদি ভিটামিনের (এ,ডি, এ ও কে) অন্যতম উৎস।
  • ফ্যাটি লিভারে ঘি, বাটার বা মার্জারিন না খাওয়াই ভাল। রেডমিটও খাওয়া উচিত নয়।

[আরও পড়ুন: অপরিষ্কার মুখগহ্বরই কি ওরাল ক্যানসারের বাড়বাড়ন্তের কারণ? জবাব দিলেন বিশেষজ্ঞ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement