গৌতম ব্রহ্ম: শেষ কবে সুগার টেস্ট (Blood Sugar) করিয়েছেন? কখনও এইচবিএ১সি পরীক্ষা হয়েছে? কত স্কোর এসেছিল? প্রশ্নগুলো নস্যাৎ করার আগে জেনে রাখুন, গ্লাইকেডেট হিমোগ্লোবিনের অঙ্ক অনুযায়ী, কলকাতা শহরের প্রায় অর্ধেক (৪৭%) মানুষের রক্তেই চিনির পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ ডায়াবেটিক। চিন্তার বিষয় হল, এই তালিকায় ৩১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মানুষ রয়েছেন ৩৪%। ডায়াবেটিসের দোরগোডায়, অর্থাৎ প্রি-ডায়াবেটিক ৩৭%।
এই তথ্যকে মান্যতা দিলে বলতে হয়, কলকাতায় ডায়াবেটিসের প্রকোপ ২০১৭ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে ২২% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কিনা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা। অন্তত শহরের এন্ডোক্রিনোলজিস্টরা তেমনই মনে করছেন। তাদের চিন্তার প্রধান কারণ, অল্পবয়সীদের (৩১ থেকে ৪৫ বছর) মধ্যে ডায়াবেটিসের দাপটে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি। ২০১৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩ হাজার ১৫৭ জনের এইচবিএ১সি রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেছে SRL ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তার ভিত্তিতেই এই পিলে চমকানো রিপোর্ট। যা দেখে এন্ডোক্রিনোলজিস্টদের পর্যবেক্ষণ, বিপদ বাড়ছিলই। কিন্তু তা যে এত দ্রুতহারে, সেটা বোঝা যায়নি।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রতি ৬ জন ডায়াবেটিকের একজন ভারতীয়। ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, ভারতে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৭ কোটি ৭০ লক্ষ। কলকাতার ছবিটা আরও করুণ বলে জানিয়েছেন SRL ডায়োগনস্টিকসের কর্তারা। কলকাতা–সল্টলেকের প্রধান বায়োকেমিস্ট ডা. চৈতালি রায়। তাঁর বক্তব্য, যে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সুরাহা কী? বিশেষজ্ঞদের দাওয়াই, যুবপ্রজন্মকে ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখতে সচেতনতা অভিযানে গতি আনতে হবে। বদল আনতে হবে জীবনশৈলীতে।
ডায়াবেটিসের নিক্তিতে পুরুষরা কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে। ৫১ শতাংশ পুরুষ, ৪২ শতাংশ মহিলা। প্রি-ডায়াবেটিসের দাঁড়িপাল্লায় অবশ্য মহিলারা সামান্য এগিয়ে – ৩৬ শতাংশ। পুরুষ ৩৫ শতাংশ। সমীক্ষায় আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সিদের মধ্যে শুধু নন-ডায়াবেটিক অংশই (৫৮ শতাংশ) ডায়াবেটিক (১৩ শতাংশ) ও প্রি-ডায়াবেটিকের (২৯শতাংশ) তুলনায় বেশি। বাকি ক্ষেত্রে (৩১–৪৫, ৪৬–৬০, ৬১– ৮৫) কিন্তু উলটপুরাণ। অর্থাৎ ডায়াবেটিক ও প্রি–ডায়াবেটিক অংশই সিংহভাগ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ৬১ থেকে ৮৫ বছর বয়সিদের। এক্ষেত্রে মাত্র ৮ শতাংশ নন–ডায়াবেটিক। ৫৬ শতাংশ ডায়াবেটিক। বাকিরা প্রি-ডায়াবেটিক।
যদিও এই সমীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। ‘ডায়াবেটিস অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ইউ’–এর সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ মজুমদার জানিয়েছেন, ডায়াবেটিক রোগীরাই সাধারণত এইবিএ১সি টেস্ট করায়। এখন অবশ্য কিছু কর্পোরেট সংস্থা নিজেদের কর্মীদের এই পরীক্ষা করাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ চট করে যেচে এই দামি পরীক্ষা (৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা) করায় না। তাই এই তথ্য দেখে কলকাতার অর্ধেক মানুষ ডায়াবেটিক, এই সিদ্ধান্ত আসা ঠিক হবে না। অতি সরলীকরণ হয়ে যাবে। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ কমিটি এইচবিএ১সি পরীক্ষাকে ডায়াবেটিস নির্ধারণের টেস্ট হিসাবে মান্যতা দেয়। তাদের মত, এইচবিএ১সি লেবেল ৬.৫ শতাংশের বেশি হলেই রোগীকে ‘ডায়াবেটিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে। ৬.৫ শতাংশের কম হলে প্রি-ডায়াবেটিক। তবে ৫.৭ শতাংশের কম হলে রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হবে। আপনার স্কোর কত?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.