শৃঙ্খলা আর সংযমই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের মূল হাতিয়ার। পরামর্শ দিলেন নীলরতন সরকার হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক ডা. নীলাঞ্জন সেনগুপ্ত। শুনলেন সোমা মজুমদার
ভাল উপায়। আর সেই রোগ যদি হয় ডায়াবেটিস তাহলে প্রতিরোধই রোগ নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র। কারণ শুধু প্রত্যক্ষভাবেই নয়, হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির মতো বিভিন্ন সমস্যার পিছনেও থাকতে পারে ডায়াবেটিস। তাই ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধে প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভাস অবলম্বন, জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ এবং কায়িক পরিশ্রম। আর এতেই আপনি পেয়ে যেতে পারেন ‘সুগার-ফ্রি’ জীবন।
ওষুধ খেলেও ডায়েট মানুন
অনেক ডায়াবেটিস রোগীই ভাবেন নিময় মেনে ইনসুলিন নিলে এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে হয়তো আর খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাক্তারের পরামর্শমাফিক যেমন ওষুধ খেতে হবে তেমনি মেনে চলতে হবে সঠিক খাদ্যাভাস। মনে রাখবেন, ডায়াবেটিক ডায়েট বলে কিছু হয় না। ডায়াবেটিস রোগীদের যে ধরনের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় সেই খাবার রোগীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা খেলেও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারবেন। ডায়াবেটিস হলে বাড়িতে তৈরি খাবারের ব্যালেন্সড ডায়েট বা সুষম খাবার খেতে হবে, যা হবে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ হবে। একইসঙ্গে খাদ্যতালিকায় থাকবে কম সরল শর্করা জাতীয় খাবার, বেশি শাক-সবজি ও ফল। যে কোনও প্রক্রিয়াজাত খাবার, বেশি তৈলাক্ত ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, অ্যাডেড সুগার রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি ফ্যাট, তেল, ঘি, মাখন, মার্জারিন কম খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি মেনে রান্না করলে ডায়াবেটিস রোগীরা উপকার পাবেন। যেমন বেশি তেল দিয়ে ডিপ ফ্রায়েড খাবারের পরিবর্তে নন-স্টিক প্যানে হালকা ফ্রাই, সেদ্ধ, বেকড, গ্রিল রান্না করতে হবে। একইসঙ্গে ডায়াবেটিস হলে সারাদিনে পাঁচ গ্রাম নুন খাওয়া উচিত। ধূমপান বর্জন করতে হবে।
নিয়মিত ঘাম ঝরান
এক্সারসাইজ ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কারণ, এক্সারসাইজ ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ওজন কমলেই পরোক্ষভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। ৬০-৮০ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিসের সঙ্গে ব্লাড প্রেশারও থাকে যা এক্সারসাইজ করলে কমতে থাকে। এছাড়া গুড কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয় কায়িক পরিশ্রম। শরীরের সার্বিক মেটাবলিজমের উপর এক্সারসাইজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়াকেও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যাদের ওজন বেশি, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস হয়েছিল তাদেরও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এক্সারসাইজ করা উচিত। তবে এক্সারসাইজ মানে কিন্তু শুধুই হাঁটা নয়। সাঁতার কাটতে পারেন, জগিং, স্কিপিং, সাইক্লিং, জিমেও যেতে পারে। প্রত্যেকদিন অন্তত ৩০-৬০ মিনিট শরীরচর্চা করা উচিত। সপ্তাহে দু’দিন এক্সারসাইজ না করলেও হবে। সকালে সময় না পেলে বিকেলেও এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
শৃঙ্খলাই নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি
আপনার জীবন যতটা শৃঙ্খলিত হবে ততই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সোজা হবে। শুধুমাত্র ওষুধ খেলেই নয়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সঠিক লাইফস্টাইল। যেমন প্রত্যেকদিন ঠিক সময়ে খাওয়া, অনেকক্ষণ খালি পেটে না থাকা, খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়া। আবার ছয় ঘন্টার কম এবং নয় ঘন্টার বেশি ঘুমালেও ডায়াবেটিসের পক্ষে ক্ষতিকর। ধূমপান ও যে কোনও ধরনের তামাক সেবন বর্জন করা উচিত। নিয়মিত অ্যালকোহল পান ডায়াবেটিসের পক্ষে ভাল নয়।
দুশ্চিন্তা কমান
অযথা দুশ্চিন্তা করলেও ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে। তাই মানসিক প্রশস্তির জন্য ঘুমের অবশ্যই প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে কেউ বেশি উদ্বেগপ্রবণ হলে যোগা, ধ্যান, প্রাণায়ম করতে পারেন। বই পড়া, গান শোনা বা অন্য যে কোনও ধরনের শখ থাকলে মনের রিল্যাক্স রাখতে তা অবশ্যই করতে পারেন। টেনশন হলে তা কমানোর উপায় আপনাকেই বের করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.