গৌতম ব্রহ্ম: অ্যারিস্টটল আর সক্রেটিস দু’বার বিষকন্যার কবল থেকে বাঁচিয়েছিলেন গ্রিক বীর আলেকজান্ডারকে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকেও বিষকন্যার ছোবল থেকে রক্ষা করেছিলেন তাঁর গুরু কৌটিল্য ওরফে চাণক্য। কৌটিল্যের অর্থ্রশাস্ত্রে তার উল্লেখও রয়েছে। এবার সেই বিষকন্যার দর্শন মেনেই অ্যালার্জির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন চিকিৎসকরা। বিষবৎ খাবারকে অমৃতসম করে তোলার দাবিও সামনে রাখলেন।
গ্রিক ও ভারতীয় ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে বিষকন্যারা! শত্রু নিকেষে রাজা-মহারাজাদের ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে ওঠা এই সুন্দরী ললনারা অনেক সময় বুমেরাংও হয়েছে। যেমন চন্দ্রগুপ্তের মিত্রবেশী শত্রু পর্বতকের মৃত্যু হয়েছিল বিষকন্যার ছোবলে। বিষকন্যার প্রেমের জালে ফেঁসে কত বীরের যে মৃত্যু হয়েছে, ইয়ত্তা নেই। বিশাখ দত্তের মুদ্রারাক্ষস, সোমদেব ভট্টের কথাসরিৎসাগর-সহ একাধিক বইয়ে মিথ হয়ে উঠেছেন বিষকন্যারা। কবি ওয়াটেকার, হাউথর্ন, তুলসী দাস, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনেকের লেখাতে রয়েছে তাঁদের উল্লেখ।
সেই বিষকন্যা তৈরির দর্শন মেনেই নাছোরবান্দা অ্যালার্জির চিকিৎসায় সাফল্য পাচ্ছেন বলে দাবি করলেন চিকিৎসকরা।
অ্যালার্জি রুখতে একই তত্ত্বকে হাতিয়ার করছেন চিকিৎসকেরা। তোমরের দাবি, বহু মানুষের কাছে বহু খাবার বিষাক্ত। দুধ, দই, বাদাম, আটা, ভাত, সয়াবিন— এক-একজনের এক-এক খাবারে অ্যালার্জি। ধরা পড়ার পরে সেগুলি তাঁদের মেনু থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। এবার বিষকন্যা তৈরির ফর্মুলায় বিষবৎ খাদ্যকে ‘অমৃত’ বা ওষুধে পরিণত করা হচ্ছে। অর্থাৎ, অ্যালার্জি থাকলেও বাদাম, ডিম, দুধ, দই, আটা খাওয়া যাবে। শুধু বিষকন্যাদের মতো সইয়ে সইয়ে, অল্প অল্প করে ডোজ বাড়াতে হবে। একটা সময় খাবারে থাকা অ্যালার্জেন আর বিপাকে ফেলতে পারবে না খাদককে।
এমনটাই জানালেন রাজীব গান্ধী মেমোরিয়াল আয়ুর্বেদ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. তাপস মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘কৌটিল্যের অস্ত্রশাস্ত্রে বিষকন্যার উল্লেখ রয়েছে। সুশ্রুত সংহিতায় রয়েছে বিষ চিকিৎসার বিধান। এছাড়া অষ্টাঙ্গহৃদয় ও অষ্টাঙ্গসংগ্রহেও অগদতন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। সেই সূত্র মেনেই থেরাপি শুরু হয়েছে।’’ যদিও এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আরজি কর হাসপাতালের ‘পয়জন সেন্টার’-এর প্রধান ডা. সোমনাথ দাস। তাঁর মতে, অ্যালার্জি মোকাবিলায় চিকিৎসকরা বিজ্ঞান মেনে সাফল্য পেলে তো ভালই। কিন্তু যে দর্শনের ভিত্তিতে মেয়েরা বিষকন্যা হয়ে উঠেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.