শীতের বিয়ে৷ চলতি বিয়ের সাজের ট্রেন্ড নিয়ে বললেন ডিজাইনার ও মেক-আপ আর্টিস্ট৷ একঝলক চোখ বুলিয়ে নিন তাতে। বিয়ের দিন যে সবার চোখ থাকবে শুধু আপনারই উপরে!
অনিরুদ্ধ চাকলাদার:
বিয়ের দিনের সাজ মানে, ট্র্যাডিশনাল লুক৷ বিশেষ করে বাঙালি কনের ক্ষেত্রে বেনারসি, সোনার গয়না, লাল চেলি এমনটাই যেন সবসময়ই ভাল লাগে৷ বিয়ের বেনারসি মানে, লালের ছোঁয়া থাকবেই৷ সাদা রংটা হঠাৎ করে বেশ কয়েক বছর ধরে ইন৷ সাদা রং মানেই কমবয়সিরা পরবে না, এমন কনসেপ্ট আর নেই৷ এখন হোয়াইটের সঙ্গে নানা রঙের কম্বিনেশনে বেনারসি পরছে কনেরা৷ হোয়াইট রেড যেমন খুব চিরাচরিত পপুলার কম্বিনেশন, তেমনই হোয়াইট গোল্ডও পরা যায়, অর্থাৎ হোয়াইটের সঙ্গে নানা ধরনের কনট্রাস্ট যা বিয়ের কনের জন্য বেশ আনইউজুয়াল৷ টিপিকাল লালের বাইরে যে কোনও ওয়ার্ম টোন পরতেই পারেন৷ পিঙ্ক পরা যেতে পারে, রাস্ট পরা যেতে পারে৷ কনের গায়ের রং যদি চাপা হয়, তাকে সাদা-লাল বেনারসিতে অন্যরকম লাগবে৷
কিন্তু বিয়ে মানেই মুখ সাদা মেক-আপ করে ফেলা নয়, কারণ বিয়ের দিন কনেকে অনেকটা সময় খুব ভারী সাজপোশাকে থাকতে হয়৷ তাই মেক-আপ কমফর্টেবল না হলে অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভারী বেস হলে সমস্যা৷ নো মেক-আপ লুকই ভাল৷ প্রথমে কনসিলার দিয়ে দাগ-ছোপ খুঁত ঢেকে দিতে হবে৷ তারপর ফাউন্ডেশন দিতে হবে অল্প করে৷ কমপ্যাক্ট বুলিয়ে নিতে হবে এরপর৷ আইশ্যাডো দিয়ে চোখ খুব লাইটলি স্মোকি করে নিতে পারেন, কাজল পরবেন নিচের পাতায়, সঙ্গে মাসকারা৷ ব্লাশ অন সবশেষে৷ এখন ভারী চন্দন আর খুব একটা কেউ পরতে চাইছে না৷ তাই অল্প করে সূক্ষ্ম কোনও মোটিফের চন্দন পরলে অন্যরকম দেখতে লাগবে৷ মুখ ভরা চন্দন নয়, এমনভাবে ডিজাইন হবে যাতে শুধুমাত্র মুখকে কমপ্লিমেন্ট করে৷ কপালজুড়ে আলপনার দরকার নেই, একটু চন্দনের ছোঁয়াটা থাকলেই ভাল লাগে৷
বিয়ের দিনের জন্য সোনার গয়না খুব মানানসই৷ সাধারণত সবাই সেটাই চায়৷ তবে গয়না পরার সময় এটা দেখতে হবে আমি ওভার-অল কেমন সাজছি৷ কেউ এত গয়না পরে ফেলল যে, তাকে কনে কম, গয়নার বিজ্ঞাপনের মডেল মনে হল– সেটা যেন না হয়৷ একটা নেকলেস, সঙ্গে লম্বা সীতাহার, ব্যস৷ দু’টো হলেই ভাল লাগবে৷ হাতে বালা, চুড় বা চুড়ি৷ সবসময় মনে রাখতে হবে গয়না, শাড়ি যেন কনেকে কমপ্লিমেন্ট করে৷ লাল-সাদার কনট্রাস্টে শাড়ি হলে লাল চেলি খুব ভাল লাগবে৷ নাকে নথ পরা যেতেই পারে৷ তবে মুখ অনুযায়ী নথের সাইজ বাছা উচিত৷ ছোট মুখে বিশাল বড় নথ মানাবে না৷
রিসেপশনের জন্য প্রচুর কনে এখন লেহেঙ্গা পরছেন৷ লেহেঙ্গার কালার একটু সাটল হলে ভাল লাগবে৷ ট্র্যাডিশনাল কালারের বাইরে গিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল রংগুলো বাছাই করা যেতে পারে৷ গোল্ডেনিশ ইয়েলো, গোল্ডেন-সিলভার, হোয়াইট-গোল্ডেনিশ অরেঞ্জ ইত্যাদি রংগুলো ভাল লাগবে৷ লেহেঙ্গা চোলিতে যেহেতু খুব ভারী কাজ হয়, তাই তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা জরুরি৷ এর সঙ্গে চোখে হালকা করে শুধু ওপরে থিক লাইন, তার সঙ্গে মাসকারা আর ন্যুড লিপস৷ ব্লাশ অন অল্প৷ চুল কার্ল করে সেটাকেই বেঁধে রাখলে ডিফারেন্ট দেখতে লাগবে৷ রিসেপশনের সাজের সঙ্গে কনটেম্পোরারি জুয়েলারি পরা যেতেই পারে৷ কুন্দন, পোলকি এবং অ্যান্টিক গোল্ড অর্নামেন্ট পরা যেতে পারে৷ একটাই একটু ভারী নেকপিস, কানে দুল এবং হাতে শুধু বালা৷ চেলির ওড়নাটাই মাথায় দেওয়া যেতে পারে৷ কনের গায়ের কমপ্লেকশন অনুযায়ী পুরো মেক-আপ হবে৷ প্রত্যেক স্কিনটোনের জন্য মেক-আপের কনসেপ্ট আলাদা৷
দেব আর নীল:
বাঙালি কনে মানে বেনারসি ছাড়া আমি তো ভাবতে পারি না৷ ট্র্যাডিশনাল বাঙালি কনের সৌন্দর্য অনির্বচনীয়৷ বিয়ের রং মানে লাল, হলুদ, রাস্ট এইসব! তবে বিয়েতে এখন কনেরা প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করছেন৷ একটু অন্যরকম কনটেম্পোরারি কিছু ভাবতে গেলে লাল আর সাদা বেনারসি দারুণ ভাল লাগে আমার৷ ভীষণ মনোহরণ রূপ এই বেনারসির৷ যদি কনের ডাস্কি স্কিনটোন হয়, তবে তা দারুণ সুন্দর লাগবে৷ তার সঙ্গে সোনার গয়না৷ একটা সীতাহার আর নেকলেস৷ হাতে বালা, চুড়, কোমরবন্ধ, কান ঝুমকো অর্থাৎ মিনিমালিস্টিক গয়না- যেটুকু পরা প্রয়োজন, তার বেশি নয়৷ নাকে নথ আর মাঙ্গটিকা এই দু’টো না হলে সাজ সম্পূর্ণ হবে না৷ চন্দন এখন আর তেমন করে কেউ পরেন না বা পরতে চান না৷ একটু সূক্ষ্ম নিখুঁত চন্দন শুধু কপাল বিন্দির চারপাশ ঘিরে বেশ আর্টিস্টিক লুক দেবে৷ চোখে ঘন করে কাজল, নো মেক-আপ লুক আর লিপস্টিক৷
রিসেপশনে কনেরা এখন আরও বেশি এক্সপেরিমেন্টাল৷ বিয়ে মানে, কনের ওপর অত্যাচার করা নয়৷ যাঁর বিয়ে সেও তো বিয়েটা এনজয় করবে এটা মাথায় রাখা দরকার৷ তাই বিশাল ভারী লেহেঙ্গা বা শাড়ি কোনওটাই আমার পছন্দ নয়৷ লেহেঙ্গা হোক হালকা, যা কনের সাজকে কমপ্লিমেন্ট করবে৷ সাজের মধ্যে দিয়ে তার আসল সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে, ঢেকে যাবে না৷ হেনা রঙের লেহেঙ্গা থেকে ফুলের বোকে স্টাইলে এমব্রয়ডারি৷ সঙ্গে খুব ঘন ফ্লোরাল এমব্রয়ডার্ড চোলি আর নেটেড ওড়না৷ ওড়নাটা সি থ্রু গর্জাস, কনটেম্পোরারি তার সঙ্গে একটা সেনসুয়াস লুক আনবে৷ স্মোকি আইজ, ন্যুড লিপ, অ্যান্টিক গোল্ড বা টেম্পল জুয়েলারি ভীষণ মানানসই হবে এই লুকটার সঙ্গে৷ মাঙ্গ টিকা পরলে খুব ভাল দেখাবে৷ নথটা প্রয়োজন পড়লে তবেই পরা ভাল৷ হাতে শুধু বালা৷ অর্থাৎ আবরণ আর আভরণের একটা সুন্দর ছন্দ থাকবে৷
অগ্নিমিত্রা পাল:
শীতকালের বিয়ের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে বেনারসি পরারই সাজেশন দিই৷ বিয়ে যেহেতু ট্র্যাডিশনাল একটা ইভেন্ট, তাই কাতান বেনারসি, সিল্ক, চান্দেরি বেনারসি ও পিওর জর্জেট বেনারসির অপশন রয়েছে৷ রঙের ক্ষেত্রে আমি বলব লাল, সিঁদুর লাল, ব্লাড রেড, আগুনরঙা, টমেটো রেড, মেরুন ঘেঁষা লাল কমপ্লেকশন অনুযায়ী বেছে নিতে হবে৷ লালের সঙ্গে বর্ডারে আমি সবুজ, পার্পল, ম্যাজেন্টা কম্বিনেশন, অথবা অরেঞ্জ রাস্ট, মেরুনের কম্বিনেশন করছি৷ নিজের রুচি অনুযায়ী চাইলে তসররঙা ও লাল বেনারসিও পরা যেতে পারে৷ লাল বা লাল-সাদা বা ঘিয়ে লাল বেনারসি শাড়ির চিরাচরিত ট্র্যাডিশনাল গয়নার কোনও বিকল্প নেই৷ সাবেকি গয়নার চলও এখন খুব৷ নেকলেস, সীতাহার, লেসহার, হাতে বালা-বাউটি, কঙ্কণ, মাথায় মানানসই টিকলি ও নথ৷ বিয়েতে উপহার পাওয়া সবক’টা হার পরার চল এখন আর নেই৷ শাড়ির সঙ্গে মানানসই স্টেটমেন্ট পিসেই এখনকার ব্রাইডরা বেশি কমফর্টেবল৷ বেনারসির সঙ্গে ব্লাউজ পিস দিয়ে তৈরি না করে অন্য মেটিরিয়ালের ওপর জারদৌসি কারুকাজ করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে৷ বহু কনের হাতে ভারী গয়না পরার কথা হলে ট্র্যাডিশনাল ৮ ইঞ্চি স্লিভ পরা যেতে পারে৷ এছাড়া থ্রি-কোয়ার্টার স্লিভও শীতকালের জন্য আইডিয়াল৷ চাইলে নেট ও জারদৌসি কাজ করা ফুলস্লিভ ব্লাউজও পরা যেতে পারে৷ তাতে হাতে তেমন গয়না না পরলেও স্লিভ গর্জাস থাকায় তা বোঝা যায় না, খুব জমকালো লুক হয়৷ বাঙালি বিয়েতে অনেকে মা-দিদিমার বেনারসিও পরতে চান৷ অনেকেই আসেন মা-দিদিমার বেনারসি নিয়ে, অনেক সময় সেগুলো পরার কন্ডিশনও থাকে না, তখন যেটা করতে হয় ওই শাড়ি থেকে মোটিফ নিয়ে নতুন বেনারসিতে অ্যাপলিক করে দেওয়া হয়, তাতে সেন্টিমেন্ট ও ঐতিহ্য বজায় থাকে আর পুরনো কারুকাজের রিচনেসও থাকে৷ স্লিম ও স্লেন্ডার না হলে বেনারসির সঙ্গে ঘটি হাতা ব্লাউজ না পরাই ভাল, এতে হাত আরও ফ্ল্যাবি লাগতে পারে৷
রিসেপশনে এখন অনেকেই ট্র্যাডিশনাল লুক থেকে বেরিয়ে আসছেন৷ লেহেঙ্গা-করসেট, লেহেঙ্গা-ক্রপটপ এখন হট ফেভারিট৷ রঙেও এখন গাঢ় রঙের চল নেই, নীল, সবুজ, মেরুন– এ ধরনের রঙের বদলে ওয়েস্টার পিঙ্ক, সিপিয়া গ্রিন, লাইট পিঙ্ক, পেস্তা গ্রিন, লাইট পিচ, কোরাল ও অন্যান্য ইংলিশ শেডস ও প্যাস্টেল শেডস-এর কম্বিনেশনে লেহেঙ্গাই এখনকার ব্রাইডের পছন্দ৷ সঙ্গে থাকতে পারে এমব্রয়ডারি, সাটল সিকুইন অথবা হালকা জারদৌসি কাজ৷ ট্র্যাডিশনাল চোলি একেবারেই চল নেই, তার বদলে ফিটেড করসেট শর্ট ব্লাউজ বা ক্রপটপ পরলেই বেশি ভাল লাগবে৷ সঙ্গে থাকবে সফ্ট নেটের দোপাট্টা৷ গয়নার ক্ষেত্রে রিসেপশনে অনেকেই পোলকি, কুন্দন ট্রাই করছেন৷ ম্যাট গোল্ড, অ্যান্টিক গোল্ডেরও চাহিদা রয়েছে৷ থিম ওয়েডিং-এ হিরের গয়নাও বেশ পপুলার৷
সাক্ষাৎকার: শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী, তিতাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.