পোষ্যমালিকদের বাড়ি পরিষ্কার রাখার টিপস দিচ্ছেন মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য।
পোষ্য মালিকদের আড্ডায় কখনও কান পেতেছেন? পেতে থাকলে জানবেন, বাড়ির দস্যিটির নানা কাণ্ডকারখানা নিয়ে আলোচনা যতটা জমে, অভিযোগের সুর ঠিক ততটাই জোরদার হয় তার সাজানো বাড়ি নিমেষে তছনছ করার ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতার বিরুদ্ধে। সদ্য পাতা কাচা চাদরে পায়ের ছাপ, সোফায় লোম, নতুন চেয়ারে নখের দাগ, অতিথি আসার ঠিক আগে বসার ঘরের কোণে পা বা ল্যাজ তুলে…।
যাক সে বিব্রত হওয়ার বৃত্তান্ত। মোদ্দা নির্যাস, পোষ্যমালিক মানেই জানেন পোষ্য আর পরিচ্ছন্ন বাড়ি ঠিক কতটা বিপরীতধর্মী বস্তু। এবং এই দুইকে মেলানোই যে কোনও পোষ্যমালিকের সেরা চ্যালেঞ্জ। যত বড় পশুপ্রেমীই হোন, বাড়িময় লোম এবং পোষ্যজনিত ‘সুবাস’-এর সঙ্গে মিতালি যে অসম্ভব, সেটা মানতে আপনি বাধ্য। তবে এ তো শুধুই হিমশৈলের চূড়াটুকু। নখের আঁচড়ে বিধ্বস্ত কুশন, দাঁতের সুখে ক্ষতবিক্ষত চেয়ার, টেবল বা খাটের পায়া, কার্পেটে হলদে ছোপ, নকশাদার সিলিংয়ে এবং আসবাবের অলিগলিতে ফ্লি ও টিকদের প্রমোদভ্রমণ…। চ্যালেঞ্জের তল পেতে যত ডুব দেবেন, বুঝবেন শেষ দেখে ছাড়ার লড়াই ততই কঠিন।
তা বলে কি লড়বেন না? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পোষ্যপ্রেমী বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা এবং এই যুদ্ধের পোড়খাওয়া সৈনিকদের কাছ থেকে হল কালেকশন সাজিয়ে কিছু রণকৌশল দিচ্ছি। বিশেষ করে তাঁদের, নতুন পোষ্যমালিক হিসাবে বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার কঠিন কাজে যাঁদের সবে হাতেখড়ি হয়েছে।
বাড়িতে কুকুর বা বেড়াল থাকলে পরিচ্ছন্নতার সেরা শত্রু অবশ্যই লোম। আকারে ছোট হোক বা বড়, লোম হবে সর্বত্র। সিজন চেঞ্জে দুঃস্বপ্নের আকার নেবে। এর বিরুদ্ধে সেরা হাতিয়ার ভ্যাকুম ক্লিনার। বিছানা, সোফা, কুশন, কার্পেট, ডিভান, পাপোশ- সমস্ত ভ্যাকুম করুন। তবে যন্ত্রটা সবার থাকে না। যদি থাকে, বা কিনতে পারেন, সপ্তাহে অন্তত একদিন কাজে লাগান। অন্যথা ঝাঁটা, ঝাড়ন ভরসা। লোমের বিরুদ্ধে মাইক্রোফাইবারের ঝাড়নের পারফরম্যান্স ভাল। ঝাড়ার সময় সোফার খাঁজ, আসবাবের তলা ভুলবেন না।
হল কালেকশন বলছে, এর পরেও কিছু লোম নাছোড় থেকে যাবে। কাপড়ের ঝাড়ন সামান্য ভিজিয়ে নিংড়ে সেটা দিয়ে ঘষে মুছুন। ভেজা কাপড়ে জড়িয়ে উঠে আসবে। রাবার গ্লাভসও লোমের বিরুদ্ধে অনেকটা চুম্বকের মতো। ঘরের কোণে ছড়ানো পাত্রে জল রেখে দেখুন। অনেকের মতে এতে কিছুটা উড়ন্ত লোম ভিজে নিস্তেজ হয়। বাড়ির পোষ্যটির লোম লম্বা হলে সপ্তাহে একদিন নজর দিন পাখার ব্লেড আর এয়ার কন্ডিশনারে। পাখার ব্লেডে পাবেন লোমের নেট। এসি মেশিনের ঢাকনা খুলে জালিতে জড়ানো লোমের তাল আপনাকে অবাক করবে। পরিষ্কার না করলে এসির কার্যকারিতা কমে। আদরের ছানাকে যতবার কোলে নেবেন, গ্রুম করবেন, ততবার লোম হবে জামায়। নিয়মিত কাচার পরেও কিছু লেপ্টে থাকবে। তাই রাখুন ক্লোদস ব্রাশ। গ্রুমিংয়ের জন্য রাখুন আলাদা হাউজকোট বা অ্যাপ্রন।
[ OMG! এবার ফোল্ড করা যাবে আপনার স্মার্টফোনও ]
বাড়ির পর্দা এবং ফার্নিশিং কিনুন পোষ্যকে মাথায় রেখে। মনে রাখবেন, গাঢ় রঙে দাগ ফুটে ওঠে কম। এমন মেটেরিয়াল বাছুন যাতে লোম আটকাবে কম এবং পরিষ্কার করা সহজ। এমব্রয়ডারি, লেস বা অ্যাপ্লিকের অপঘাত মৃত্যু ঘটতে পারে নখ বা দাঁতের স্রেফ একটা টানে। ভঙ্গুর শো-পিস, ফটো ফ্রেম ইত্যাদি সাজান নাগালের বাইরে বা কভার্ড শোকেসে। বিশেষ সতর্কতা চাই বেড়াল এবং ছোট কুকুরের ক্ষেত্রে। পোষ্যের নখের চাপে লেদার বা রেক্সিনের কভার ফুটো হতে পারে। এগুলো মেরামতির আঠা হয়েছে আজকাল। এমন একটা বাড়িতে রাখা ভাল। হল কালেকশন বলছে, সারমেয় বা মার্জারের পছন্দের বসার সিট ঢেকে দিন মোটা গালিচায়। সমস্যা কমবে। আর নখ কাটাবেন নিয়মিত। ছোট বেড়াল, কুকুর আসবাবের পায়া চিবোয়। নিরস্ত করতে পায়ায় জোবরদস্ত টক বা তেতো কোনও রস লাগিয়ে দেখুন। কিছু ব্রিডের ড্রুলিং বা লালা ঝরা স্বাভাবিক। আপনার পোষ্যটি এমন ব্রিড হলে তার পছন্দের বসার জায়গায় সিন্থেটিক ফাইবারের ম্যাট বা কাচা যায় এমন অ্যাবজরবেন্ট শিট পাততে পারেন। মেঝে পরিষ্কার থাকবে।
পোষ্য থাকলে বাড়িতে তার গন্ধ ছড়াবেই। বিশেষ করে ক্রস ভেন্টিলেশনের সুযোগ যেখানে কম। পোষ্যকে পরিষ্কার রাখবেন। স্নানের পর লোমে আর্দ্রতা থেকে গেলে গন্ধ হবে। গন্ধের অপর উৎস অনিবার্য কোনও কারণে টয়লেট-ট্রেনিং বিস্মৃত হওয়া। সেটা ওভারএক্সাইটমেন্ট, চাপ সামলানোর ব্যর্থতা বা টেরিটরি মার্কিং হতে পারে। বেড়ালদের ক্ষেত্রে আনাচ কানাচ, আলমারির মাথা এমনকী বিছানাতেও মার্কিং অস্বাভাবিক নয়। গন্ধের উৎস সন্ধানে বেড়াল মালিককে সর্বত্র খোঁজ চালাতে হয়। পোষ্য বমিও করবে। প্রতি ক্ষেত্রে সাফাই দ্রুত শুরু করা চাই। না হলে মেঝেতে দাগ অনিবার্য, তা সে মোজাইক, টাইল বা মার্বেল যা-ই হোক। মেঝের নির্দিষ্ট জায়গা নিয়মিত নোংরা করলে সেখানে ভিক্স ঘষে দিন একদিন অন্তর। টানা প্রতিরোধটি কাজে দেবে।
কঠিন পদার্থ সরাতে প্লাস্টিকের বেলচা, তরল শুষতে খবরের কাগজ, এবং মোছার নির্দিষ্ট মপ ক্লিনিং কিট অপরিহার্য। ঘর মোছার জলে প্রতিদিন কয়েক ফোঁটা ডিসইনফেকট্যান্ট মেশাবেন।
গন্ধের বিরুদ্ধে দুই সেরা হাতিয়ার বেকিং সোডা এবং ভিনিগার। ঘরের কোথাও খানিকটা বেকিং সোডা রাখুন। গন্ধ শুষে নেবে। কার্পেটে দুর্ঘটনা ঘটলে তার উপরেও আগে বেকিং সোডা ছড়িয়ে সামান্য অপেক্ষা করুন। এর পর পরিষ্কার করলে দাগের সম্ভাবনা কমে। বেকিং সোডার অভাবে দাড়ি কামানোর ফোম ব্যবহার করা যায়। প্লাস্টিকের স্প্রে ক্যানে সমান পরিমাণ জল ও ভিনিগার মিশিয়ে হাওয়ায় স্প্রে করলেও গন্ধ দূর হয়। এই মিশ্রণে ক’ফোঁটা ডিশওয়াশ মেশালে সেটা ভাল স্পট ক্লিনার।
[ ‘মায়ের উপর করে নাও, বউ কিন্তু সহ্য করবে না’, কীভাবে তৈরি হল OMG? ]
সমস্যার আরও এক নাম টিক ও ফ্লি। পোষ্যওয়ালা বাড়িতে এদের বাসা থাকবেই। তাই মাসে অন্তত একবার ছানাকে খোলা হাওয়ায় পাঠিয়ে বাড়িতে পেস্টিসাইড স্প্রে করলে ভাল। পেস্টিসাইড পেট সেফ হলে আরও ভাল। সোফার খাঁজ, বক্স খাটের তলার মতো যে সব জায়গায় পোষ্য পৌঁছতে পারে না কিন্তু পোকারা পারে, সেখানে কর্পূরের গুঁড়ো রাখলে সুফল পাবেন। হল কালেকশনে ঘর মোছার জলে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল মেশানোর টিপস পেয়েছি। এতে নাকি পোকা কমবে, সুগন্ধও ছড়াবে।
রণকৌশল তো হল। তবে যুদ্ধে হারজিত আছেই। ছোট বয়সে পোষ্যের সুঅভ্যাস গড়ায় জোর দিলে পরবর্তীকালে আপনি অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। কখনও আপনার শিক্ষা আর শাসন জিতবে, কখনও তার আবদার আর আহ্লাদ। শেষ পর্যন্ত কিন্তু পোষ্য সুস্থ, সবল আর আনন্দে থাকাই যে কোনও পোষ্য মালিকের আসল মেডেল। পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধে যা-ই হোক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.