নব্যেন্দু হাজরা: তালের বড়া, তাল ক্ষীর থেকে তাল মাখন, মালপোয়া। আর তালমাখন দিয়ে কৃষ্ণের জন্মদিনের স্পেশাল কেক। শুধু কী তাই, কৃষ্ণ লেখা সন্দেশ, তাল বেকড সন্দেশ, কী থাকছে না এবারের বার্থ ডে তে! চিরাচরিত তালের বড়া থেকে ট্রেন্ডি তালমাখনের কেক। করোনা আবহেও ননি চোরার জন্মদিন সেলিব্রেশনে বাঙালিকে মিষ্টিমুখ করাতে হরেক আইটেম নিয়ে হাজির শহরের নামকরা মিষ্টির দোকানগুলি। এমনকী, বিশেষ দিনে মালপোয়া তালের বড়া বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে কোনও কোনও মিষ্টির দোকান তো হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছে।
জন্মাষ্টমীতে একটু প্রাণ ভরে তালের বড়া বা মালপোয়া খেতে ইচ্ছে করেছে অথচ দোকানে যাওয়ার সাহসটুকু হচ্ছে না সংক্রমনের ভয়ে। সেই আশঙ্কাকে দূরে ঠেলতেই হোম ডেলিভারি ব্যবস্থা বলে জানাচ্ছে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। শহরের নামকরা দোকানগুলি যেমন ট্রেন্ডি মিষ্টি এনেছে এই বিশেষ দিনের জন্য। তেমনই মফস্বলের ছোট বা মাঝারি দোকানের শোকেসও সেজেছে মালপোয়া থেকে তালের বড়া, ক্ষীরের লাড্ডু থেকে নাড়ুতে। গতে বাধা মিষ্টি কমিয়ে বরং জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ভিন্ন স্বাদের কিছু মিষ্টি তৈরি করেছে তারা একটু রুচি বদলের জন্য। জন্মাষ্টমীর আগের রাতে তাই অধিকাংশ মিষ্টির দোকানেই ক্রেতার ভিড় নজরে আসার মতো। যারা এই করোনার কারণে এতদিন মিষ্টি খাননি। তাঁরাও রেডিমেড বড়া, মালপোয়া আনতে ছুটেছেন মিষ্টির দোকানে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে তালের বড়া মালপোয়া তাল ক্ষীর তৈরি করা গৃহস্থের দীর্ঘদিনের রীতি। একদিন আগে থাকতেই চলে তাল গোলা, মা, কাকিমাদের বড়া ভাজার পর্ব। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে অনেক বাড়িতেই এসব বন্ধ হয়েছে। তবে এই দিনে ভালোমন্দ খাওয়ার রেওয়াজটা বাঙালি তো আর বন্ধ করতে পারে না! তাই কয়েক বছর ধরেই মিষ্টির দোকানের রেডিমেড বড়া বা মালপোয়াতে ভরসা রেখে চলেছেন আম গেরস্ত। আর সেদিকে তাকিয়েই জন্মাষ্টমীর আগে নানান মিষ্টি বানিয়ে শোকেস সাজান ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছরই কিছু না কিছু থাকে নতুন আইটেম। কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টির দোকান বাঞ্ছারামের কর্তা শুভজিৎ দাস বলেন, “বাজার তো আগের থেকে বেড়েছে। রাখিতে ব্যবসা ভাল হয়েছে। জন্মাষ্টমীতে তো ঘরে ঘরে অনলাইনেও আছি আমরা। তালমাখন দিয়ে কেক বানানো হয়েছে। তাল তো বঙ্গ জীবনের অঙ্গ বাঙ্গালীদের কথা ভেবে তাই অনেক নতুন আইটেম বানানো হয়েছে।”
তবে করোনা আবহে সবাই যে এমন হরেক মিষ্টি বানিয়েছেন কেষ্ট ঠাকুরের জন্মদিনে তেমনটা নয়। অনেকেই আবার কিছুই বানাননি আলাদা করে। ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে সেই অর্থে বেচাকেনাই তো নেই। একগাদা মালপোয়া-তালের বড়া বানিয়ে করবো কী! বিক্রি যদি না হয়। মানুষ এমনিতেই বাইরের জিনিস খেতে চাইছে না। মিষ্টি কিনতে আসা কমিয়ে দিয়েছে। বহু দোকানই তাই এবার ঝুঁকি নিয়ে জন্মাষ্টমী স্পেশাল আইটেম তৈরি করেনি। যা করে প্রতিবার। হিন্দুস্তান সুইটসের কর্ণধার রবীন্দ্র কুমার পাল বলেন, “এমনিতেই কনটেনমেন্ট জোনে ঢুকে গিয়েছে দোকান। তাই বন্ধ। যদিও বা খোলা হয়, তাতেও বেচাকেনা খুব কম। এই পরিস্থিতিতে আলাদা করে এবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে কিছু বানানো হচ্ছে না।” কে সি দাস সুইটসের কর্ণধার ধীমান চন্দ্র দাসের গলাতেও এক সুর। বলেন, “মানুষ আগের মতো মিষ্টির দোকানে আসছেন না। আশি শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে। মালপোয়া, তালের বড়া থাকবে। তবে স্পেশাল ভাবে বিশেষ কিছু বানানো হচ্ছে না জন্মাষ্টমী উপলক্ষে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.