ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদুর। করোনাতঙ্কে কাঁপছে গোটা দেশ। কিন্তু শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বহাল তবিয়তে আছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি। জনঘনত্ব কম। দুর্গম এলাকা বলে গণ পরিবহণ ব্যবস্থাও যথেষ্ট নয়। কিন্তু আইসিএমআরের তথ্য অনুযায়ী মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড বা অসমে করোনা সংক্রমণ দেশের মধ্যে সব চেয়ে কম। মৃত্যু আরও কম। কেন এমন ঘটনা? রহস্যটা কী?
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী ও জনজাতিদের অন্যতম প্রিয় রেসিপি ‘শিদল শুঁটকি’। ম্যালেরিয়া আটকানোর অন্যতম নিদান শিদল। পুঁটিমাছ একটি পাত্রে তেল-হলুদ মাখিয়ে মুখ বন্ধ করে বেশ কয়েকমাস মাটির নিচে রাখা হয়। চার থেকে ছ’ মাস পর সেই মাছের বিভিন্ন পদ খাওয়া হয়। এই রেসিপি যেমন সুস্বাদু তেমনই অবিশ্বাস্য এর ম্যালেরিয়া রুখে দেওয়ার ক্ষমতা। অসমের কার্বি-আংলঙ ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার শিদল। বাড়ি থেকে হোটেল সর্বত্র পাওয়া যায়। এমনকী, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরামেও প্রিয়-ডিশ শিদল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যের অধিকাংশ বাসিন্দার বিশ্বাস শিদল যেমন ম্যালেরিয়ার যম, তেমনভাবে গত কয়েকমাস ধরে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাচ্ছে শিদল। আইসিএমআরের তথ্য বলছে, নাগাল্যান্ড-মিজোরামে এখনও পর্যন্ত যথাক্রমে ২৩৮ এবং ৮৯৬ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু একজনেরও করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়নি। চারমাসে মেঘালয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬৬ জন। মারা গিয়েছেন মাত্র দু’জন। আবার অরুণাচল প্রদেশে মোট আক্রান্ত ৪৬২ জন।
এঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫৩ জন। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এই প্রসঙ্গে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বায়ো কেমিস্ট্রির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. কৈলাস ভট্টাচার্য বলেছেন, “দীর্ঘ সময় ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী ও জনজাতিদের মধ্যে পুঁটিমাছ মাটির তলায় রেখে শুকিয়ে পরে রান্না করে খাওয়া অভ্যাস। তাঁদের বিশ্বাস এই খাদ্য জীবাণুনাশক। সুপারিও এই পদ্ধতিতে খাওয়া হয়।” কৈলাসবাবুর কথায়, “শুকিয়ে মাটির তলায় রাখার ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। তবে তা কতটা বিজ্ঞানসম্মত তা এখনও যাচাই করা হয়নি”। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, জনবিশ্বাসকে বাস্তবের আতশকাচে যাচাই করতে গেলে পরীক্ষা দরকার। কিন্তু সেই কাজ হয়নি।
এটা যেমন একটা দিক তেমনই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির দূষণ দেশের অন্য অংশের তুলনায় অনেকটাই কম। আন্তর্জাতিক উড়ানও কম হয়। এইসব বিষয় কারণ বলে মনে করেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। পাহাড় অধু্যষিত হওয়ায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষদের ‘লাং ক্যাপাসিটি’ বা ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বেশি। কোভিড-মৃত্যু হার কম হওয়ার পিছনে এটাও একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।