সুমন করাতি, হুগলি: ঘুম ভেঙেছে শহরের। চলার পথে বহু পথচারীই ভিড় জমাচ্ছেন পরোটার দোকানে। দোকানের সামনে লম্বা লাইন। খরিদ্দার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিক। একের পর এক অর্ডারে শেষ হচ্ছে পরোটা, তরকারি। কাজের শেষে শান্তির নিশ্বাস ফেললেন মালিক। মনে মনে বিড়বিড় করলেন, “আজও অনেকে ফিরে গেলেন।” হুগলির শ্রীরামপুর (Serampore) বাস স্ট্যান্ডের পাশে বেলটিং বাজারে মানিক সরকারের এই পরোটার দোকান। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে দোকানদারি করছেন মানিক ও তাঁর ভাই সঞ্জয় সরকার। কিন্তু এমন পরোটার দোকান তো কতই আছে। এই দোকানের বৈশিষ্ট্যটা কী?
আসলে এই দোকান আর পাঁচটা দোকানের থেকে আলাদা। কেননা আজও এখানে পরোটার দাম মাত্র ১টাকা! হ্যাঁ, গত সাড়ে তিন দশকে পৃথিবী আমূল বদলে গেলেও এখানে থমকেই রয়েছে পরোটার দাম। শুধু তাই নয়, তরকারির জন্যও লাগে না অতিরিক্ত টাকা। সকাল ৭টা থেকে ভিড় লেগে যায় ১ টাকার পরোটা খাওয়ার জন্য। পুলিশকর্মী থেকে রিকশা চালক। পথচারী থেকে অফিসযাত্রী, সকলের পছন্দের জলখাবারের জায়গা এই মানিকদার দোকান। প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ থেকে ২৬০০ পিস পরোটা বাড়ি থেকেই বানিয়ে আনেন মানিকবাবু ও তাঁর ভাই! তরকারি অবশ্য তৈরি করেন দোকানে। এই মাগ্গি গন্ডার বাজারেও মাত্র ১ টাকায় পরোটা বিক্রি করে লাভ রাখেন মানিকবাবু!
কীভাবে সম্ভব মাত্র ১ টাকায় পরোটা বিক্রি করা? মানিকবাবু জানাচ্ছেন, দীর্ঘ ৩৫ বছরের দোকান তাঁর। শুরুর দিন থেকেই তিনি ১ টাকার পরোটা বিক্রি করেন। তবে আগে পরোটার সাইজ বড় থাকলেও এখন মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাইজ একটু ছোট হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৩৫ বছরে দাম বাড়েনি। আর এই দামে বিক্রির উপরেও লাভ রাখেন তিনি। মানিকবাবু বলেন, “বর্তমান সময়ে পরোটা যা চাহিদা তাতে বিক্রি করে কুলিয়ে উঠা যায় না। দূর থেকেও বহু মানুষ ছুটে আসে এই এক টাকার পরোটা খেতে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ পরোটা শুধু পার্সেলেই যায়। সকাল ১১টার মধ্যেই সব পরোটা শেষ হয়ে।”
মানিকবাবুর খরিদ্দার পেশায় ভ্যান চালক এক ব্যক্তি বলেন, “যে দিন থেকে এই দোকান, সেই দিন থেকেই এখানে খেতে আসি আমি। একমাত্র শ্রীরামপুরের মানিকদার দোকান ছাড়া আর কোথাও এক টাকার পরোটা পাওয়া সম্ভব নয়।” ওই ভ্যান চালক একা নন। এমন মানুষ এখানে অসংখ্য। যাঁরা মানিকবাবুর ১ টাকার পরোটা খেতে ছুটে আসেন শত ব্যস্ততা সামলেও। আর তাঁদের পরোটা সরবরাহ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন মানিকবাবু। এভাবেই তাঁর এই পরোটার দোকান হয়ে উঠেছে এক আশ্চর্য বিপণি। গত সাড়ে তিন দশকেও যার জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.