গৌতম ব্রহ্ম: হাজার টাকায় এক পেয়ালা চা ! এক কেজির দাম প্রায় তিন লাখ টাকা! পাঁচতারা হোটেল নয়, সেই মহার্ঘ্য চা বিকোচ্ছে মুকুন্দপুরের বাইপাস লাগোয়া ফুটপাতে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন তার স্বাদ নিতে। একটা ছাতা, রং-বেরঙের প্লাস্টিকের চেয়ার। সামনে একটি টেবিলে কাচের জারে থরে থরে সাজানো হরেক চা। রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ সবই আলাদা। আফ্রিকার ক্যারামেল টি থেকে জার্মানির ক্যামোমাইল ফ্লোরাল টি, মেক্সিকোর টি সেন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্লু টি। চায়ের কাপেই যেন বিশ্বদর্শন।
দোকানের মালিক পার্থপ্রতিম গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “গোটা বিশ্ব জানে বাঙালির চায়ের প্রতি কতটা প্রেম। কিন্তু চা নিয়ে বাঙালি মননে তেমন জ্ঞান কই? লাল চা, দুধ চা, লেবু চা, আদা চায়েই আটকে বাংলা। অথচ আমার ভাড়ারে প্রায় ৭২ রকম চা রয়েছে। আমি সেগুলির সঙ্গে বাঙালির পরিচয় করাতে চাই। তাই চাকরি ছেড়ে ফুটপাতে চায়ের দোকান খুলেছি।”
কিন্তু ফুটপাতে হাজার টাকার চা বিক্রির ফর্মুলা?
“দেখুন দু’টো বড় কর্পোরেট হাসপাতালের মাঝে আমার দোকান। ডাক্তার-রোগীর পরিজন-মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা মূলত আমার খদ্দের। এখানে আরও দু’-তিনটে চায়ের দোকান আছে। তারা সবাই ৫ টাকা পেয়ালার চা বিক্রি করে। আমার চায়ের পেয়ালা প্রতি দাম শুরু ১২ টাকা থেকে। ২০ টাকা, ৪০ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা, এমনকি ১০০০ টাকার ‘সিলভার টি’-ও লোকে খাচ্ছেন ফুটপাতে বসে। আমি সবার মনে ভাল চা খাওয়ার ইচ্ছে জাগিয়ে তুলেছি। এটাই আমার সার্থকতা” বললেন পার্থ।
দোকানে এলে পার্থ ক্রেতাদের সঙ্গে নিজে থেকেই গল্প জুড়ে দেন। বিষয়বস্তু চা। কোন চায়ের কী উপকারিতা গড়গড়িয়ে বলে যান। চা প্রেমীরা মুগ্ধ হয়ে শোনেন সেই সব না-দেখা চায়ের কাহিনি। কেউ আবার চমকে ওঠেন দাম শুনে। সিলভার নিডল হোয়াইট টি’র কেজি প্রতি দাম ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, ব্ল্যাক থান্ডার (ফার্স্ট ফ্লাশ) ১ লক্ষ ৬৬ হাজার, হোয়াইট পার্ল (ফার্স্ট ফ্লাশ) ও সাউথ আফ্রিকার মেট টি ২৪ হাজার। সাউথ-ইস্ট এশিয়ার ব্লু টি ৩৬ হাজার। ল্যাভেন্ডার টি ১৮ হাজার। ক্লোনাল টি ৩২ হাজার। মাস্কাটেল ৩৬ হাজার। মাচা টি (জাপান, চিন) ১৫ হাজার। মরোক্কান মিন্ট টি ৪০ হাজার। ডার্ক চকোলেট ডিলাইট টি ৪০ হাজার। দোনিও পোলো ওয়ার্ল্ড ৫০ হাজার। লেবানিজ টি ১৭ হাজার। স্ট্রবেরি ভ্যানিলা সেরেনিটি ৩৮ হাজার।
কোন চায়ে কত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কোন অসুখে কোন চা কার্যকরী, তাও মুখস্থ পার্থবাবুর। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও পার্থর চা খেয়ে মুগ্ধ। পার্থর এখন স্বপ্ন, তাঁর হাতে ধরেই বিশ্বের সেরা চাগুলি বাঙালির ড্রইং রুমে পৌঁছে যাবে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপের সঙ্গে কথা হয়েছে। ফ্লাক্সে চেপে বাড়িতেই পৌঁছে যাবে সেই মহার্ঘ্য চা।
কী করে চা বিশেষজ্ঞ হলেন?
“ছোটবেলায় বাবা বলতেন, ‘তোর দ্বারা তো পড়াশোনা হবে না। চায়ের দোকানই খুলতে হবে’। বাবার সেই কথাই ‘আশীর্বাদ’ হয়ে গেল।” জানালেন পার্থ। বললেন, “চা খেতে বরাবরই ভালবাসি। বন্ধুরাও মজা করে বলত, চায়ের দোকান খোল।” চা নিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘নির্যাস’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন পার্থ। জানালেন, এই গ্রুপে কয়েকশো চা প্রেমী রয়েছেন। তারাই নানান তথ্য সরবরাহ করছেন। বিদেশে গেলে চা এনে দিচ্ছেন। কখনও আত্মীয়দের মারফতও বিদেশ থেকে চা আনাচ্ছেন। দার্জিলিং অবশ্য প্রায়শই যান পার্থ। বললেন, “বিশ্বের সব দেশের চা খেয়েছি। কিন্তু দার্জিলিং চা তুলনাহীন। এর গন্ধ, স্বাদ, অতুলনীয়।”
বাহারি চায়ের দাম
সিলভার নিডল হোয়াইট টি : ২.৮ লক্ষ টাকা
ব্ল্যাক থান্ডার (ফার্স্ট ফ্লাশ) : ১.৬৬ লাখ
হোয়াইট পার্ল (ফার্স্ট ফ্লাশ) ও সাউথ আফ্রিকার মেট টি : ২৪ হাজার
সাউথ-ইস্ট এশিয়া ব্লু টি : ৩৬ হাজার
ল্যাভেন্ডার টি : ১৮ হাজার
ক্লোনাল : ৩২ হাজার
মাস্কাটেল : ৩৬ হাজার
কমাচা (জাপান, চিন) : ১৫ হাজার
মরোক্কান মিন্ট টি : ৪০ হাজার
ডার্ক চকোলেট ডিলাইট টি : ৪০ হাজার
দোনিও পোলো ওয়ার্ল্ড : ৫০ হাজার
লেবানিজ টি : ১৭ হাজার
স্ট্রবেরি ভ্যানিলা সেরেনিটি : ৩৮ হাজার
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.