সৌরভ মাজি: সুনাম থাকলেও, ইনকাম ছিল না তেমন। তাই গুণমানে দাঁইহাটের মহিলাদের ঘরে তৈরির খেজুর গুড় সুনাম অর্জন করলেও, আখেরে লাভ হত না কিছু। স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে কম দামে সেই গুড় তুলে দিতে বাধ্য হতেন মহিলারা। তবে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ মেলায় সেই গুড়ের বিক্রির ব্যবস্থা হওয়ায় মহিলাদের দিন ফিরল। জনপ্রিয় হয়ে উঠল দাঁইহাট পুরসভার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের তৈরি খেজুর গুড়।
এই এলাকার খেজুর গুড় স্বাদে ও গন্ধে অন্যান্য এলাকার থেকে আলাদা হওয়ায় অনেকের কাছেই গুড়ের চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর হাওড়া, হুগলি, কলকাতা থেকে গুড়ের অর্ডার আসে। বাড়ির মহিলারা নিজেরাই গুড় তৈরি করেন। ঝোলা গুড়, পাটালি, সবই তৈরি করেন তাঁরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সেই গুড় মহিলাদের কাছে কিনে নিয়ে বাজারের বিক্রি করেন। এতদিন এভাবেই গুড় বিক্রি করে আসছিলেন দাঁইহাট এলাকার মহিলারা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে এবারই প্রথম মেলায় স্টল দিয়েছেন তাঁরা। প্রথম দিনেই বিক্রির বহর দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁরা। মেলার উদ্বোধনে এসে তাঁদের গুড় কিনে নিয়ে যান স্বয়ং মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও।
দাঁইহাট পুরসভার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য লক্ষ্মী মণ্ডল বলেন, “বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছি এলাকার মহিলা বাড়িতেই গুড় তৈরি করছেন। পরিবারের পুরুষেরা সকালে খেজুর রস সংগ্রহ করে আনেন। এরপর সেই খেজুর রস থেকে গুড়, পাটালি সবই তৈরি করেন মহিলারা।” তিনি জানান, ১৯৭৯ সাল থেকে এইভাবেই গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন তাঁরা। গত বছর দাঁইহাট পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকার মহিলাদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়। রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের অধীনে ঋণ দেওয়া হয় তাঁদের। এলাকার ১৬ জন মহিলা এখন এই গোষ্ঠীর সদস্য। গুড় ছাড়াও পাঁপড়, বড়ি ও অন্যান্য সামগ্রীও তৈরি করেন তাঁরা। শুক্রবার থেকে বর্ধমানের টাউন হল ময়দানে পুর এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলি নিয়ে আয়োজিত ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ মেলায় স্টল করেছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, শুক্রবার প্রায় ৫৯০০ টাকার বিক্রি হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার অনেক মহিলা রোজকারের মুখ দেখছেন। নিজের তো তৈরি সামগ্রী সরাসরি বিক্রির ফলে পরিচিতি লাভ করেছেন। প্রতিমা বিশ্বাস, লক্ষ্মী মণ্ডলের মতো অনেক মহিলার মুখেই হাসি ফুটেছে। প্রকল্পের দাঁইহাট এলাকার সিটি ম্যানেজার সৌরভ সেন বলেন, “এই এলাকায় খেজুর গুড়ের বাজারে সুনাম রয়েছে। এলাকার মহিলারা নিজেরাই গুড় তৈরি করেন। একটি গোষ্ঠীর মাধ্যমে তাঁদের তৈরি সামগ্রী বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে রাজ্যস্তরের মেলাতেও তাঁদের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.