স্টাফ রিপোর্টার: পাতলা গেঞ্জি। তার উপর শার্ট। উলের কার্ডিগান চড়িয়ে কেক কিনতে বেরিয়েছিলেন একুশ পেরনো তরুণী। নিউ মার্কেটের (New Market) একচিলতে দোকানের ঠাসাঠাসি ভিড়ে কার্ডিগান খুলে কোমরে। কে বলবে উত্তুরে হাওয়ার কামড়ে বাইরে ১৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দোকানের দমবন্ধ ভিড়ে ক্রেতাদের কপালের ঘাম পায়ে। বড়দিনের বারো ঘণ্টা আগে শনিবার কেক কিনতে মারামারি, হুড়োহুড়ি, ধ্বস্তাধ্বস্তি শহর জুড়ে।
ডিম, ময়দা, মাখনের মণ্ড তো মেলে বারোমাস। বড়দিনের কেকের সঙ্গে দু’ফোঁটা মদিরা। সেই ‘রাম কেক’ কিনতেই আকচা আকচি। নরম কামড় বসানোর প্রতিযোগিতা। উৎসবের মরশুম। দিনভর অ্যাংলো পাড়াতেও তাই আমজনতার ম্যারাথন। একদল সরোজিনী নাইডু সরণি ধরে হেঁটে গিয়েছেন সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রির দিকে। উলটোপথে কালো কালো মাথা হেঁটে এসেছে অ্যালেন পার্কের পথে। হাঁটার কোনও শেষ নেই। তবু হাঁটার চেষ্টাকে বৃথা মনে করেনি আমজনতা।
ফি বছরের মতো উপহার বুড়ো এসেছিলেন বো বারাকে (Bow Barracks)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আমলে আমেরিকান সেনাদের বসবাস ছিল লাল সুরকির বাড়িগুলোয়। বারাকে আপাতত ১৪০টি অ্যাংলো পরিবার থাকেন। পুরনো কলকাতাকে ভালোবেসে সান্তা ক্লজ আজও সেখানে আসেন টানা রিকশায় চড়ে। অ্যাংলো পরিবারগুলো এখনও নিজের হাতে তৈরি করেন ওয়াইন, কেক। সে হ্যান্ড মেড ওয়াইন কিনতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ক্রেতারা।
শনিবার গোধূলিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থেকে বো বারাকে ছুটে এসেছিলেন সৈকত পাল। ‘‘ফি বছর আসি। এ ওয়াইনের স্বাদ আলাদা।’’ জানিয়েছেন তিনি। আগে বানাতেন সকলেই। কমতে কমতে এখন মাত্র আটটা পরিবার ওয়াইন বানান বো বারাকে। আগে টেবিল পেতে বিক্রি হলেও সেদিন অতীত। ‘‘দিনভর বাচ্চারা খেলা করে। ওদের চোখের আড়াল করতে আর টেবিল পেতে বিক্রি করি না। কিনতে চাইলে দরজার কড়া নাড়তে হবে।’’ কথা বলতে বলতেই হাত চালান স্ট্যানলি চ্যাং। খালি কাচের বোতলে ভরে দেন বাড়িতে বানানো লাল আঙুরের ওয়াইন।
বড়দিনের আগে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালেও ছিল দমবন্ধ ভিড়। চিরাচরিত রীতি মেনে বেলুড় মঠে মহাসমারোহে পালিত হয়েছে যিশুপুজো। শনিবার সন্ধ্যারতির পর মঠে মূল মন্দিরের ডানদিকে প্রভু যিশু ও মা মেরির ছবির সামনে ফুল-মালা- কেক-পেস্ট্রি-চকোলেট-মিষ্টি ইত্যাদি দিয়ে পুজো করা হয়। মঠের সন্ন্যাসী মহারাজরা যিশু খ্রিস্টের জীবনী বর্ণনা করেন। গাওয়া হয় ক্যারল। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে যিশুপুজো মঠে এসে দেখতে পারেননি ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। এ বছর ভক্তদের ঢল নামে বেলুড়মঠে। পুজো শেষে প্রসাদ, মিষ্টি ও কেক বিতরণ করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.