সুমিত বিশ্বাস, অযোধ্যা পাহাড় (পুরুলিয়া): অযোধ্যা পাহাড়ে চাষ হওয়া বাংলার কালো ছাগলের (Black Bengal Goat) সুস্বাদু মাংস মিলবে এবার দেশ-বিদেশের বাজারেও। রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের আওতায় থাকা ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভস্টক ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড এক নামী সংস্থার ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক হারে শীঘ্রই তা বাজারে আনছে। তাই পুরুলিয়ার (Purulia) অযোধ্যা পাহাড়-সহ রাজ্য জুড়েই এই চাষের ক্ষেত্র বাড়ানো হচ্ছে। ফলে এই ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’-এর হাত ধরে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা করতে উদ্যোগে রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগ।
পুজোর (Durga Puja) আগেই রাজ্যের জেলায় জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব সরকারি বিপণি থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে এই সুস্বাদু মাংস (Meat)মিলবে। তাছাড়া এই মাংস মিলবে এই নিগমের আওতায় ব্লকের লাইভস্টক প্রডিউসার প্রাইভেট লিমিটেডের কাউন্টার থেকেও। ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করেও এই মাংস ঘরের দুয়ারে পৌঁছে দেবে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ (সিএডিসি)। ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভস্টক ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার ড. পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলার কালো ছাগলের কিমা চলতি মাসেই বাজারে এসেছে। মঙ্গল বা বুধবার গোট বোনলেস, গোট চপও ওই সংস্থার ব্র্যান্ডিংয়ে দেশ-বিদেশের বাজারে আসবে।”
বাজারে যে যমুনাপাড়ি, বিটল, বারবারি জাতের ছাগলের মাংস বিক্রি হয়। প্রায় সেই দামেই এই ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’-এর মাংস মিলবে। তবে রাজ্যের বাইরে এর দাম থাকবে একটু বেশি। বিভাগীয় মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “বিশ্ববাজারে এই মাংস ও চামড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। এই মাংস উৎপাদনশীলতার বিচারে সেরা। সেই কারণেই এই চাষের মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত করে বাজারজাত করা হচ্ছে।”
আসলে বাংলার কালো ছাগলের প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছিল। বাম আমলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে রাজ্য সরকার অযোধ্যা পাহাড়ে (Ayodhya Hill) এই প্রকল্প শুরু করে। কিন্তু তা মাঝপথেই থমকে যায়। রাজ্যে পালাবদলের পর পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের আওতায় থাকা সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্প এই কাজ হাতে নেয়। তারপর সম্প্রতি এই কাজ শুরু করল প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগ। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা অর্থে এই কাজ শুরু করে সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অযোধ্যা পাহাড় প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আধিকারিক সুশান্ত খাটুয়া বলেন, “এই জাত বিলুপ্ত হতে বসেছিল। সারা ভারতবর্ষের মধ্যে ‘অরজিনাল ভ্যারাইটি’ অযোধ্যা পাহাড়ে ছাড়া আর কোথাও নেই। আমরা প্রথমে এই জাতকে সংরক্ষণ করে তারপর ৬০ টি ছাগল দিয়ে এই চাষ শুরু করি। এই প্রকল্পে মাদার ইউনিট খোলা হয়েছে এই চাষ আরও ব্যাপক হারে বাড়ানোর জন্য। এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ ছাগল রয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। এখন এই প্রকল্পের কুমারী কানন ফার্ম ছাড়াও অযোধ্যা পাহাড় ও পাহাড়তলির ১৬০০ পরিবারে এই চাষ হচ্ছে। ফি বছর প্রায় ১০০ ছাগল ছানা চাষের জন্য দেওয়া হয়। পাহাড়ের চড়াই-উতরাই পথে একবারে জঙ্গল এলাকায় এই কালো ছাগল বিচরণ করে বলে মাংসের বৃদ্ধি যেমন বেশি। তেমনই খেতে সুস্বাদু।”
ওই ফার্মে সিএডিসির প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটও রয়েছে। সেখান থেকেও আইস প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে কলকাতায় তাদের ফ্রাঞ্চাইজি দেওয়া প্রায় ৪০ টি বিপণিতে মিলছে। অনলাইনে (wbcadc.com)হোম ডেলিভারিও হচ্ছে। দাম কেজি প্রতি ৬৫০ টাকা। এই ছাগল যাতে চাষ করে দাম পায় গ্রামের মানুষজন, তাই একটি গোটা ছাগল কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা দিচ্ছে সিএডিসি।
সরকারি ওই ব্র্যান্ডের আওতায় ৫০০ গ্রাম কারি কাট মাংসের দাম রাখা হয়েছে ৩৫০ টাকা। কেজি প্রতি ৭০০ টাকা। তবে বাংলার বাইরে ৭৪০ টাকা। তবে কিমা, গোট বোনলেস, গোট চপ-র দাম কেজি প্রতি একটু বেশি। এই মাংসকে এমন ভাবে হিমশীতল করা হয় যে ৯ মাস পর্যন্ত খাওয়া যাবে। মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে মাংসের মধ্যবর্তী স্থলে ‘ব্লাস্টিং’ করে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ক্রেতার কাছে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা হয়। যাতে কোনওভাবেই জীবাণু সংক্রমণ হয় না। ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভ স্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ব্লকে ফার্মার্স প্রোডিউসারের মাধ্যমে এই মাংস নেবে। ব্লক এলাকায় ৩০০ জন চাষিকে চিহ্নিত করে এই মাংসের চাষ করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগ। বাংলার কালো ছাগলের দরদাম দেখে নিন একঝলকে –
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.