দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: বাংলার সাফল্যের মুকুটে আরও এক নতুন পালকের অপেক্ষা। রসগোল্লার পর এবার জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল হুগলির গুপ্তিপাড়ার বিখ্যাত গুপো সন্দেশ। এর পাশাপাশি বলাগড়ের নৌকাশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য আগেই সমস্ত গবেষণালব্ধ তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। এবার একই সঙ্গে বলাগড়ের নৌকা শিল্প ও গুপ্তিপাড়ার গুপো সন্দেশের জিআই স্বীকৃতি পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। সন্দেশের এই জিআই স্বীকৃতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে যে গবেষণা চলেছে তাতে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছেন অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শ্রেয়সা পাল, সৌমেন দেশি, সন্দেশের কারিগর বিশ্বজিৎ নাগ ও মিন্টু ব্যাপারী।
প্রসঙ্গত, গুপো সন্দেশের গবেষণাপত্র তৈরি হয়ে গেলেও এর সমিতি গঠনের কাজ থমকে ছিল। গুপ্তিপাড়ার নাগ পরিবার এই সন্দেশ তৈরির জন্য বিখ্যাত। এই নাগ পরিবারের ছেলে তথা স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ জিআই ট্যাগ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে এক সপ্তাহের মধ্যে সমিতি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, গুপ্তিপাড়ার গুপো সন্দেশের গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সমিতি গঠনের কাজ আটকে থাকার জন্য কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। তবে এখন আর সেই বাধা নেই। বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, বলাগড়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বজায় রাখার জন্য তিনি সমস্ত ধরনের কাজে সহায়তা করবেন। এক সপ্তাহের মধ্যে সমিতি গঠন ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
বিখ্যাত এই গুপো সন্দেশের জন্ম কত সালে হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও এই সন্দেশের উৎপত্তি গুপ্তিপাড়ায়। হাওড়া-কাটোয়া শাখায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ গুপ্তিপাড়া আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এই বিশেষ ধরনের সন্দেশ বানানোর পদ্ধতিও অভিনব। প্রথমে বিশাল আকারের লোহার কড়াইতে ছানাকে পাক দেওয়া হয়। তারপর সেই পাক দেওয়া ছানা পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে কাঠ দিয়ে পেটানো হয় যাতে ওই ছানার ভিতরের অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়।
তারপর সেই ছানা একত্রিত করে পাক দিয়ে তাকে গুপো সন্দেশের আকার দেওয়া হয়। শীতকালে এই সন্দেশে নতুন গুড় মিশিয়ে তার স্বাদে বদল ঘটানো হত। পূর্বে বহু অনুষ্ঠানবাড়িতে এই সন্দেশ দিয়ে অতিথি অভ্যাগতদের আপ্যায়ন করা হত। সন্দেশের স্বাদে অভিনবত্ব আনার জন্য মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা সারা বছর ধরে খেজুরের গুড় জমা করে রাখতেন। বর্তমানে গুপ্তিপাড়ায় গুটিকয়েক মিষ্টির দোকানে এই সন্দেশ পাওয়া যায়। এবার সেই সন্দেশের জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন বলাগড়বাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.