কলহার মুখোপাধ্যায়: ফলনও পর্যাপ্ত। তাই এ বছর তাহলে বাঙালির পাতে এক-দেড় কেজি ইলিশ বাঁধা। করোনার এই কালো মেঘে ঢাকা আবহে এটুকু রুপোলি রেখা দেখা দিচ্ছে। অন্তত বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন। ঘটনাটা কী?
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা এরকম একটা আশার কথা শুনিয়েছেন। এমনকী রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাও এ বছর ইলিশের পর্যাপ্ত ফলন এবং আকার বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে প্রবল আশাবাদী। ভরা বর্ষা যখন বাংলার বুকে টইটম্বুর ঢেউ তুলবে, লকডাউন উঠে যাবে, করোনার ছায়া অন্তর্হিত হবে, সে সময়, সে বড় সুখের সময়, খাবার থালা আলো করে রাখবে জলের রুপোলি শস্য। আড়ে-বহরে যা বড়দের ছোটবেলাকে মনে করাবে। আধুনিক প্রজন্মের কাছে যে সাইজ রূপকথা। এরকম হতে চলেছে না কি?
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত ২৪ মার্চ থেকে মাছ ধরা বন্ধ লকডাউনের জন্য। এমনিতেই পূর্ব উপকূলে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই দুই মিলিয়ে মাছ না ধরার সময়সীমা বৃদ্ধি পেয়েছে এ বছর। যার ফলশ্রুতি, বাড়তি ওজনের পর্যাপ্ত ইলিশের জোগান। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মাছ বাড়ে প্রধানত দু’খেপে। ছোট অবস্থায় মাছের বৃদ্ধি হয় ধীরে। নদীতে জন্ম নেওয়া চার ইঞ্চি ইলিশ চারা সমুদ্রে ফিরে এক বছরে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের হয়ে ওঠে। তারপরের ছয় থেকে আট মাসে তা দু’কেজির কাছাকাছি ওজনের হয়ে দাঁড়ায়। এই বছর এই যে বাড়তি সময়টা এবার ইলিশ মুক্ত রইল জলে, তাতে ২৪ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল সময়সীমায় একটি মাছ ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজন বাড়াতে সক্ষম হবে।
আরও কারণ আছে ওজন বৃদ্ধির। বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউনের ফলে আবহাওয়া কলুষমুক্ত হওয়ায় জলে মাছের খাদ্য প্লাংকটন রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ফলে ইলিশের খাদ্যাভাব হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, দূষণ না থাকার ফলে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ এখন বেশি। যা মাছের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখছে এবং ওজন বৃদ্ধির সহায়ক হচ্ছে। কারণ আরও একটা রয়েছে। মৎস্য মন্ত্রী জানিয়েছেন, গত বছর ইলিশ খুব একটা বেশি ওঠেনি। তাঁর বক্তব্য, “অতীতে দেখা গিয়েছে এক বছর ফলন কম হলে পরের বছর বেশি মাছ আসে আসে। এছাড়া লকডাউনের ফলে আবহাওয়া দূষণমুক্ত থাকায় এবং মাছধরা টানা বন্ধ থাকার ফলে মাছের ওজন বৃদ্ধি হবে বলেই মনে হচ্ছে।” ফলে করোনা মুক্ত হওয়ার আশায় দিন গুনছে বাঙালি। যেদিন পাতে ঝিলিক দেবে প্রমাণ সাইজের ইলিশের গাদা-পেটির সরষে ঝাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.