নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পঞ্ছি উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন হতেই খুশি আদিবাসী মহলে। জেলা সফরে এসে বুধবার মহম্মদবাজারে সাঁওতালি পঞ্ছি কারখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসক বিধান রায় জানান, রাজ্যের একমাত্র সাঁওতালি পোশাক উৎপাদন কারখানা করতে পেরে আমরা খুশি। গত কয়েকমাস ধরে ওখানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে পঞ্ছি-পরহাট উৎপাদন হয়েছে তা পরেই মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির হয়েছেন। আদিবাসী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
আদিবাসীদের নিজস্ব পোশাক পঞ্ছি। ছেলেরা ছোট করেই সেটা পরে পঞ্ছি-পারহাট হিসাবে। মেয়েদের পঞ্ছি শাড়ি হয় একটু বড়। জেলার আদিবাসীদের এই পঞ্ছি কিনে আনতে হত ঝাড়খণ্ডের দুমকা, বিহারের বাঁকা জেলা থেকে কিংবা উড়িশার ময়ূরভঞ্জ থেকে। যার এক একটির খরচ পড়ত কমপক্ষে দেড় হাজার টাকার বেশি। ফলে নিজেদের পোশাকের এত দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। আদিবাসী যুবকেরা আধুনিক প্যান্ট জামা পড়তে অভ্যস্থ হয়ে যাচ্ছিল। তাই জেলার প্রায় ১২ শতাংশ আদিবাসী জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে মহম্মদবাজারে একটি সাঁওতালি পোশাক পঞ্ছি উৎপাদনের পরিকল্পনা করে জেলা প্রশাসন।
ইতিমধ্যে মহম্মদবাজারে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব পায় পিডিসিএল। তাদের সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচে পঞ্ছি বুননের মেশিন বসানো হয়। বাঁকা জেলার থেকে তিনজন প্রশিক্ষক ও কলকাতার এক ডিজাইনার এসে গত একমাস ধরে পঞ্ছি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে যায়। সম্পূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্রটির পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সামাজিক আদিবাসী সংগঠন ভোরাইকে। প্রশাসনসূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় অনুষ্ঠিত জঙ্গলমহল কাপ, বাদনা পরব এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় আদিবাসীদের পঞ্ছির যোগান দিতে পেরেছে মহম্মদবাজারের এই পঞ্ছি কারখানা। পঞ্ছি কারখানার মেশিনম্যান শিবধন টুডু জানান, ছ’টি মেশিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮৫টি করে পঞ্ছি উৎপাদন করা যাবে।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোলপুরে জয় জোহার মিউজিয়াম বলে একটি স্টলে এই পঞ্ছির মার্কেটিং করা হবে। যার উদ্বোধনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। মার্কেটিংযের দায়িত্বে থাকা লক্ষ্মী হাঁসদা জানান, ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িশা থেকে পঞ্ছি কিনে আনতে যে খরচ হত, সেই দামে উন্নতমানের দুটি পঞ্ছি পেতে পারেন আদিবাসীরা। তাই চাহিদা বাড়ছে। আদিবাসী সংগঠন আদিবাসী উন্নয়ন গাঁওতার জেলা সম্পাদক রবীন সোরেন বলেন, ‘‘আমি ওই কারখানা থেকে প্রথম পঞ্ছি কিনেছি। এই কারখানা হওয়ায় সস্তায় আমাদের পোশাক পাবে সমাজের লোকেরা। তাতে তাদের আগ্রহ বাড়বে। আদিবাসীদের কর্মসংস্থানও হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.