ধীমান রায়, কাটোয়া: হাজার রাসায়নিক গুলে, রং গাঢ় করে তাতে ডুবিয়ে কাপড় রঙিন করার পদ্ধতি এখানে ব্রাত্য। বরং গাঁদা ফুলের পাঁপড়ি, চা-পাতাকে প্রাকৃতিকভাবে ব্যবহার করে রং তৈরি করা হয়। তা দিয়ে রাঙানো হয় সুতির শাড়ি (Designer Saree)। তার উপর সূঁচ-সুতো দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় সূক্ষ্ম কারুকাজ। তাঁত হোক কিংবা খাদি অথবা মসলিন, জামদানি – কাটোয়ার শিল্পীদের হাতে তৈরি শাড়ির দরও তাই উঠছে চড়চড়িয়ে। দেশ, বিদেশের বড় বড় বাজারে এই শাড়ি বিক্রি হচ্ছে লক্ষাধিক টাকায়। আর বরাতও আসছে প্রচুর। ফ্যাশনে (Fashion) ইন হ্যান্ডলুমের বাজারে এসব শাড়ি দেখলে চোখ ফেরাতে পারবেন না আপনিও।
কাটোয়া ২ ব্লকের জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের ঘোড়ানাশ, মুস্থলি গ্রামের তাঁতশিল্পীদের থেকে জানা গেল, লকডাউনের বিরতি কাটিয়ে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। তৈরি হচ্ছে নতুন রং, হাতে ফুটছে নতুন নকশা। তাঁরা এখন তৈরি করছেন স্কার্ফ, খাদি, মসলিন, জামদানি শাড়ি। বাড়িতে বসেই এখন শিল্পীরা ভাল উপার্জন করছেন।
ট্রেন বন্ধ থাকায় কয়েকমাস ব্যবসায় বেশ লোকসান হয়েছিল। এখন আবার ব্যবসায়ীরা শাড়ি তৈরির সামগ্রী কিনতে পারছেন। ঘোড়ানাশ ও মুস্থুলি গ্রামের তাঁতের কাপড়ে নকশা করতে ব্যবহার করা হয় ভেষজ রং (Organic Colour)। রাসায়নিকের বদলে চা-পাতা, গাঁদা ফুল-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক রং দিয়ে প্রথমে কাপড়ের ওপর নকশা করা হয়। তারপর হাতের কাজ। এই অভিনব রং, নকশার জন্য এসব তাঁত, জামদানি, মসলিন শাড়ি যাচ্ছে বিদেশেও। বিক্রি হচ্ছে লক্ষাধিক টাকাতেও।
জানা যায় এখানকার শিল্পীদের তৈরি খাদি মসলিন জামদানি শাড়ি ফ্যাশন ডিজাইনারদের হাত ধরে পাড়ি দিচ্ছে ব্যাঙ্গালোর, মুম্বই, কেরল, কলকাতা-সহ দেশের বড় বড় শহরে। তার ওইসব নামী ফ্যাশন ডিজাইনাররা সেগুলি বিক্রি করছেন দু’ থেকে আড়াই লক্ষ টাকায়। তার বিনিময়ে এখানকার তাঁতিরা মজুরি পাচ্ছেন ২৯ থেকে ৩৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কাটোয়া (Katwa) ও কালনা মহকুমার হ্যাণ্ডলুম অফিসার পলাশ পাল বলেন,”কাটোয়ার তাঁতিরা উন্নতমানের জামদানি বুনছেন। একটা শাড়ি বুনতে তাঁতিদের সময় লাগছে প্রায় তিনমাস। আসলে এইসব শাড়ির ক্ষেত্রে হাতের কাজের জন্যই দাম বাড়ে। পুরো প্রাকৃতিকভাবে তৈরি রঙে নকশা করা হচ্ছে। তারপর সূক্ষ্ম কাজ করা হয়।” পলাশবাবু আরও জানান, “আমি দেখেছি এখানকার একটা জামদানি শাড়ি দাম হয়েছিল প্রায় ৯০ থেকে ৯৯ হাজার টাকা।মাটি উৎসবে প্রদর্শনী হয়েছিল। তাছাড়া ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা জামদানি শাড়ি প্রায়ই তৈরি হয়।”
কেন এত দাম এসব শাড়ির? ঘোড়ানাশ গ্রামের তাঁতিরা জানান, খাদির মসলিন সুতোর শাড়ির উপর জড়ি, রেশম সিল্কের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয়। গোটা শাড়ি জুড়ে অসংখ্য সূক্ষ্ম কারুকাজ করা থাকছে। ঘোড়ানাশ গ্রামের তাঁতি জগদীশ দে, গণেশ হাজরারা বলছেন, “আমরা এই ধরনের একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করে ১৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পাচ্ছি। মজুরিতে পুষিয়ে যাচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.