দীপাবলির সাজ হোক একটু বোল্ড। ঠোঁটের রঙই সদর্পে জানাবে আপনার উপস্থিতি। চিরকালীন একঘেয়েমি সাজ ছেড়ে অন্যরকম সাজের তথ্য দিচ্ছেন সোহিনী সেন।
‘আমি তোমার চোখের কালো চাই…’ গানটায় ধরুন ‘চোখ’-এর জায়গায় ‘ঠোঁট’ শব্দটা থাকত? থমকাতেন কি একবারও? নিশ্চয়ই থমকাতেন। যা সাবেক নয়, যা পরিচিত নয়, যে কোনও আনকোরা বিষয়– সেসবের প্রতি আমাদের আকর্ষণ চিরকালীন। তাই কালো রঙের অনুষঙ্গে ‘চোখ’-এর জায়গায় ‘ঠোঁট’ থাকলে থতমত খেতে হয় বইকি! বিপ্লবের যাবতীয় বারফট্টাই পেটের ভিতর সেঁধিয়ে যায়। মন আপনা থেকেই উচ্চারণ করে ওঠে, ‘ম্যাগোওওও… শেষমেশ কালো রঙের ঠোঁট!’ তবে কচ্ছপ-গতিতে হলেও এই চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসছে। সৌজন্যে বদলে যাওয়া মানসিকতা ও নয়া ফ্যাশন ট্রেন্ড-যার হাত ধরে এবার পুজোয় ইন ‘অড ওয়ান আউট’ লিপ কালার্স। যে সমস্ত রং আঁকার সময় প্যালেট পেরিয়ে ক্যানভাসে আর এক্সপেরিমেন্টের সময় কেবল হাত-পায়ের আঙুলে জায়গা পেত, এবার তারাই সদর্পে নিজের উপস্থিতির জানান দিতে চাইছে ঠোঁটেও। দরকার শুধুমাত্র একটু সাহস ও ক্যারি করার মানসিকতা-ব্যস কেল্লাফতে!
লাইল্যাক: বা পেল্ পার্পল। ২০১৬-এ ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ ঠিক এই রংয়ের লিপস্টিকই ছিল ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের ঠোঁটে। পাপরাৎজির চোখে পড়া ও পেজ থ্রি নিউজ হওয়ার মাঝের সময়টুকুও মেলেনি, তার মধ্যেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সমালোচনার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হন ’৯৪-এর মিস ওয়ার্ল্ড। তবে সুধীজন জানে, সেই রংই কীভাবে আস্তে আস্তে ফ্যাশান ট্রেন্ড-এ হাইলি ইন হয়ে পড়ে। এখন অনলাইন সাইটে অর্ডার করে দেখুন, ‘কারেন্টলি আনঅ্যাভেলেবল’-এর লিস্টিতে যতগুলো নাম আসবে, তার মধ্যে লাইল্যাক-কে প্রথম পাবেন।
টার্কওয়াই: চোখে টার্কওয়াই বা ফিরোজা আইশ্যাডো সেই অর্থে বিপ্লবাত্মক না হলেও ঠোঁটে এই রং রীতিমতো রেবেলিয়াস। কারণ লিপস্টিকের ক্ষেত্রে ব্লু ফ্যামিলি ব্যাপারটাই খানিক বিরল। চট করে কেন, খুব সাহস ও মানসিক প্রস্তুতি নিয়েও অনেকে এই রং ব্যবহার করতে স্বচ্ছন্দ হন না। তায় আবার হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির এই রংয়ের লিপস্টিক রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক চাহিদার দরুন এই টার্কওয়াই লিপস্টিকের ম্যানুফ্যাকচারিং বেড়েছে। বিখ্যাত মার্কিন গায়িকা কেশাকে মাঝে মাঝেই এই রং পরতে দেখা গিয়েছে।
ইয়েলো: ‘দ্য আনকমন মোস্ট’। হলুদ লিপস্টিক প্রথমবার স্পটলাইটে আনেন জেনিফার লোপেজ। ২০১৩-এ, তাঁর মিউজিক ভিডিও ‘লিভ ইট আপ’-এ। চমকে যান দর্শকরা। বমকে যান। খানিক ডার্ক বা ট্যান স্কিন কমপ্লেকশনের সঙ্গে সবচেয়ে ভাল যায় এই রং। তবে গায়ের রং যদি একটু হলদেটে ফরসার দিকে হয়, সেক্ষেত্রে রংটি ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ঠেঁট ও গায়ের রং মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
সার্পেনটাইন: নাম শুনে বুঝে নিতে অসুবিধা হচ্ছে না বোধহয়। সেই তথাকথিত অর্থে সত্যি সাপের মতোই ‘বিষাক্ত’ এই রং। শ্যাওলাটে-যা আপনি কস্মিনকালেও ঠোঁটে লাগানোর কল্পনা করতে পারবেন না। তবে মজাটাও সেখানেই। ‘সেক্সিয়েস্ট’ লিপ কালার হিসাবে ইতিমধ্যেই পরিগণিত হতে শুরু করেছে তা। কেবলমাত্র হ্যালোউইন পার্টির নজরকাড়া সাজেই নয়, ঠোঁটে সার্পেনটাইন রং নজর কাড়ছে ম্যাচিং যেকোনও ক্লাসি পোশাকের সঙ্গেই।
সিলভার: রুপোর গয়নার প্রতি যতই হ্যাল থাকুক, সিলভার লিপস্টিক ব্যাপারটা মেনে নিতে একটু কষ্টই হয়। লিপস্টিকের সাবেক রংগুলির থেকে কয়েক যোজন দূরত্বে এর অবস্থান। রিটেল হোক বা অনলাইন-হাতে গোনা কয়েকটা ব্র্যান্ড এই রঙের লিপস্টিক ম্যানুফ্যাকচার করে। সে অর্থে জোগানও অপ্রতুল। কিন্তু নতুনত্বের নিরিখে বাকি রংগুলিকে বলে বলে গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সিলভার।
অরেঞ্জ: স্নিগ্ধ ট্যান কালার নয়, ক্যাটক্যাটে অরেঞ্জ। সে অর্থে ‘আনইজুয়াল কালার’-এর ফর্দে মিলবে না এর নাম। কারণ রংটা খুব একটাও অপ্রচলিত নয়। তবে লিপস্টিকের সাবেক রংগুলির তুলনায় একটু ব্যতিক্রমী তো বটেই। জেসিকা আলবা হোক বা দীপিকা পাড়ুকোন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বা করিনা কাপুর-হলিউড-বলিউডের মানচিত্রের আনাচ-কানাচে অরেঞ্জ ডার্ক লিপস্টিক বেশ ভাল নাম্বার পেয়ে পাস করে আসছে। বরাবরই।
ব্ল্যাক: সাম্প্রতিক অতীতে মার্কিন পপস্টার রিহানা ও কেটি পেরিকে বহুবার পরতে দেখা গিয়েছে। আপনার সামনে বা পাশ দিয়ে কেউ কালো লিপস্টিক পরে গেল আর আপনি দেখে মুহূর্তের জন্য থমকালেন না-এটা জাস্ট হতেই পারে না! মেকআপ দুনিয়ায় একটা কথা প্রচলিত – ‘দেয়ার ইজ নো বেটার ওয়ে টু ব্রিং অন দ্য ড্রামা দ্যান বাই পেন্টিং ইওর পাউট ব্ল্যাক’। গথিক বা পাঙ্ক লুকের ক্ষেত্রে কালো লিপস্টিক বরাবর আদর্শ। তবে সেই ট্যাবুটা ভাঙছে আস্তে আস্তে। মানানসই ওয়াড্রোবের সঙ্গে অনেকেই ঠোঁটে কালো পেন্ট করতে পিছপা হচ্ছেন না আজকাল আর। সাহসী পদক্ষেপ করতে ভয় পাচ্ছেন না।
মাথায় থাকুক
১. খুব চড়া মেকআপের সঙ্গে অড লিপস্টিক লাগালে কিন্তু সাজের গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো হয়ে যেতে বাধ্য। তাই মেকআপ রাখুন সাট্ল ও সফ্ট। যতটা মিনিমাল রাখা যায় আর কী।
২. লিপস্টিকটাকে আলাদা করে হাইলাইট করতে মুখে ব্রোঞ্জার ও হাইলাইটার লাগাতে পারেন। এতে মুখে আলাদা গ্লো আসবে যা লিপস্টিকটাকে কমপ্লিমেন্ট দেবে। তবে তা পরিমাণে বেশি না হলে ভাল।
৩. ঠোঁটে পিগমেন্টেশন থাকলে অল্প করে ফাউন্ডেশন বা কন্সিলার লাগিয়ে নিতে পারেন। তাতে পিগমেন্টেড অংশটুকু চাপা পড়ে যাবে। লিপস্টিকের সঠিক রংও ফুটে উঠবে।
৪. অ্যাক্সেসরি বাছুন বুঝেশুনে। এমন কিছু বাছবেন না যাতে করে নজর বিভ্রান্ত হয়।
৫. একই কথা প্রযোজ্য পোশাকের ক্ষেত্রেও। পোশাক যেন অত্যধিক জাঙ্ক না হয় যাতে লিপস্টিকের আবেদন ফিকে হয়ে পড়ে।
৬. ব্র্যান্ড বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি হাইলি পিগমেন্টেড হয়। সস্তার বাজারি জিনিস রঙের বাহার পাবেন, কিন্তু তাতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ঠোঁটের ক্ষতি পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৭. কিপ ইট সিম্পল। খুব বেশি এমন হাবভাব যেন না থাকে যাতে মনে হয় আলাদা করে লিপস্টিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাইছেন। মনে রাখুন, যে কোনওরকমের সাজগোজের শেষ কথা কিন্তু ব্যক্তিত্ব। আপনি কীভাবে ক্যারি করছেন, সেটাই দিনান্তে ম্যাটার করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.