কেন আমাকে প্লাস সাইজ মডেল বলা হবে? প্রশ্ন তুললেন এই মুহূর্তে ভারতের ‘প্লাস সাইজ’ ফ্যাশনের জনপ্রিয়তম মুখ বর্ষিতা থাথাবর্তী। ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের পোশাকে তাঁকে দেখে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন দেশের পৃথুলারা। রোজ আসছে অজস্র ফ্যান মেল। একান্ত আড্ডায় জানালেন ঐন্দ্রিলা বসু সিংহকে।
জিরো সাইজে মশগুল ফ্যাশন দুনিয়ায় প্লাস সাইজ নিয়ে মডেলিং কেরিয়ার বানানোর কথা ভাবলে কীভাবে!
বর্ষিতা : আমি মডেলিং করব এটা কোনও দিনই ভাবিনি। অভিনেত্রী হওয়ার শখ ছিল। ইচ্ছে ছিল মনিরত্নমের সিনেমায় কাজ করব। মডেলিংকে বেছে নিয়েছিলাম ফিল্মে আসার সহজ রাস্তা হিসাবে।
অর্থাৎ মূল ধারার মডেলিংকে! তাহলে তো তোমায় অনেকটাই ওজন ঝরাতে হয়েছিল।
বর্ষিতা : হ্যাঁ। কিন্তু, আসার পর বুঝলাম এদের জগৎটা একদম আলাদা। আমার চেহারা আর রং, দুই নিয়েই এঁদের বড্ড আপত্তি। আমি জন্মগতভাবেই একটু কার্ভি। কিন্তু ফ্যাশন জগতের অদ্ভুত শর্তগুলির সঙ্গে ওই চেহারা খাপ খায় না। অনেক চেষ্টা করার পরও আমি ওদের ওই মাপকাঠিতে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারিনি।
তার মানে ওজন কমিয়েও কাজ পাওনি?
বর্ষিতা : না। মডেলিং জগতেও না। ফিল্মেও না। আসলে আমাদের দেশে ‘সুন্দর’ শব্দটার কয়েকটা বিচিত্র আর গোঁড়া মাপকাঠি আছে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। দেখতে যেমনই হোক ‘সুন্দর’ বলে পরিচিত হতে হলে, রোগা আর ফর্সা হতে হবে। যতজন পরিচালকের কাছে আমি কাজের জন্য গিয়েছি প্রত্যেকেই আমাকে রোগা আর ফরসা হয়ে আসতে বলেছেন। ওঁদের কথা শুনে ওজন ঝরিয়েছি। কিন্তু, লাভ হয়নি। আসলে মানসিকভাবে পুরো ব্যাপারটা আমাকে খুব প্রভাবিত করছিল। তার ছাপ পড়ছিল আমার চেহারাতেও। টানা পাঁচ বছর স্ট্রাগল করার পরও যখন কোনও মডেলিং এজেন্সি আমাকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাইছিল না। তখন মনে হচ্ছিল আমার কেরিয়ার হয়তো শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। আর ঠিক তখনই সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হল। আজ যে আমি এখানে, তার একটা বড় কারণ অবশ্যই তিনি।
সব্যসাচী তো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। দেশের অন্যান্য মডেলিং সংস্থা যেখানে তোমায় ‘না’ বলছিল, তখন ওঁর হয়ে কাজ করার সুযোগ পেলে কীভাবে?
বর্ষিতা : সব্যসাচী স্যারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল ওঁরই একটি গয়নার প্রদর্শনীতে। প্রথম সাক্ষাতেই আমার প্রশংসা করেছিলেন উনি। বলেছিলেন, ‘সুন্দর দেখতে তোমায়’। আমি তো অবাক। মুগ্ধও। এতদিন তো উলটো কথাই শুনে এসেছি সর্বত্র। আর এখন দেশের সবচেয়ে উঁচুমানের এক ডিজাইনার কি না আমার লুকের প্রশংসা করছেন! আমার স্কিনের প্রশংসাও করেছিলেন উনি। শুনে এত ভাল লেগেছিল, যে গত কয়েকবছরে আমার রং আমার চেহারা নিয়ে যে যা বলেছে সব ভুলে গিয়েছিলাম। ভেবেই নিয়েছিলাম সব্যসাচী যখন বলেছেন আমায় সুন্দর দেখতে, তখন নিশ্চয়ই আমি সুন্দর। গত বছর জুন মাসে আমাকে একটা ট্রায়াল শুটের জন্য কলকাতায় আসতে বলে। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের একটি ব্রাইডাল লেহেঙ্গা পরে ফটো শুট করি আমি। ছবিটা উনি এবছর নারী দিবসে ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করেন।
হ্যাঁ। ছবিটা নিয়ে তো দারুণ হইচই হয়েছিল।
বর্ষিতা : হ্যাঁ। ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, সৌন্দর্যর আসল মানে আত্মবিশ্বাস। আসলে শ্যামলা রঙের মেয়েদের বা স্থূলকায়াদের মনে সমাজ ‘অসুন্দর’-এর একটা ধারণা বুনে দেয়। সেটা যে ভুল। সৌন্দর্যের যে ওরকম ব্যাখ্যা হয় না, সেটাই বলতে চাওয়া হয়েছিল পোস্টটিতে। কিন্তু, বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন কেউ কেউ।
সৌন্দর্যকে গতে বাঁধার ব্যাপারে তোমার কী মত!
বর্ষিতা : আমি বিষয়টার ঘোরতর বিরোধী। প্রত্যেকেই সুন্দর নিজের মতো করে। আর সৌন্দর্যকে কোনও সাইজে বা রঙে বেঁধে ফেলা যায় না। আমার চেহারার জন্য যে লোকে আমায় প্লাস সাইজ মডেল বলে। আর সাইজ ২ মডেলদের শুধু ‘মডেল’, আমি এই অভ্যাসটিরও বিরোধী। কেন আমাকে প্লাস সাইজ মডেল বলা হবে। মডেল বলতে আপত্তি কোথায়?
এখন তো ইনস্টাগ্রাম খুললেই তোমার অনুরাগীদের প্রশংসা নজরে পড়ছে।
বর্ষিতা : বলে বোঝাতে পারব না অনুভূতিটা। সবই কেমন সাররিয়াল লাগছে। বিশেষ করে কেউ যদি দিনের পর দিন ব্যর্থতার আবহে থেকে থাকে, তার তো এরকম লাগবেই। তবে আজ আমি যে জায়গায় আছি তার জন্য সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। রোজ অসংখ্য মেয়ে আমাকে শুভেচ্ছা জানায়। ফ্যাশন জগতে ওঁদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। এগুলোও দারুণ পাওয়া।
কলকাতায় ফোটোশুট করলে। শহরটা ঘুরে দেখেছো?
বর্ষিতা : অন্ধ্রপ্রদেশের মেয়ে আমি। বড় হয়েছি দিল্লিতে। তবে কলকাতায় প্রথমবার আসি মিস্টার মুখোপাধ্যায়ের জন্য শুটিং করতেই। প্রথমবার সুযোগ না হলেও ঠিক করেছিলাম ফিরে এসে শহরটা দেখব। আর কলকাতার খাবার টেস্ট করে দেখতেই হবে। পরেরবার সুযোগ পেতেই আশ মিটিয়ে নিয়েছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.