সব্যসাচীর পোশাকে অপূর্বা এবং দেব ও নীলের পোশাকে নেহা ধুপিয়া
ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচীর ক্যাম্পেনে প্লাস সাইজ মডেল। কী বলছেন কলকাতার বাকি ফ্যাশন ডিজাইনাররা? শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
সম্প্রতি ডিজাইনার সব্যসাচী চক্রবর্তীর অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজের ২০২১-এর কালেকশনে মডেল অপূর্বা রামপালের ছবিটা দেখে থমকে গিয়েছেন অনেকেই। প্লাস-সাইজ মডেল অপূর্বার শরীরের অনাবৃত অংশও দেখা যাচ্ছে শাড়ির ফাঁক দিয়ে। সাধারণত ডিজাইনার পোশাকে একটু ভারী চেহারার মডেল কম দেখা যায়। তবে প্লাস-সাইজ মডেল গত কয়েক বছর ধরেই ট্রেন্ডে। আন্তর্জাতিক র্যাম্প তো বটেই, ভারতীয় র্যাম্পেও মাঝে মধ্যে চোখে পড়ছে। ২০১৯-এর ল্যাকমে ফ্যাশন উইক (উইন্টার) প্লাস সাইজ স্টোর ‘অল’ এবং ডিজাইনার রিনা ঢাকা সংযুক্তভাবে একটি শো করেছিলেন। সব্যসাচী ২০১৯ সালে প্লাস-সাইজ মডেল ভর্ষিতাকে দিয়ে শুটে করিয়েছিলেন। ভর্ষিতা এরপর ক্যাটরিনা কাইফের বিউটি প্রোডাক্টের জন্যও শুট করেছেন।
ভারতীয় সমাজে বিউটি স্ট্যান্ডার্ড বহুদিন ধরেই নির্ধারিত হয়ে এসেছে। সুন্দর মানেই ফর্সা কিংবা এবং অবশ্যই তাকে একটি নির্দিষ্ট বডি-স্ট্যাটিসটিক্স মেনটেন করতে হবে। খুব রোগা বা খুব মোটা হলেই সেই নারী কিংবা পুরুষ চলে আসে বডি শেমিংয়ের আওতায়। সব্যসাচী ২০২০’র আগস্টে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “যখন অপেক্ষাকৃত মোটা মহিলা তাঁর সেক্সুয়ালিটিকে ফ্লন্ট করে, সেটা সমাজের অনেক মানুষ মেনে নিতে পারেন না। একজন ভারী চেহারার মহিলা যদি রিভিলিং কিংবা আটোসাটো পোশাক পরেন, সেটা অনেকেই ভালগার মনে করেন। অথচ অজন্তা-ইলোরার স্থাপত্য বা রেনেসাঁ পেন্টিং কিন্তু এই অপেক্ষাকৃত ভারী শরীরের গড়ন সেলিব্রেট করে…।” সময় বদলাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ‘প্লাস-সাইজ’ মহিলারা নিজেদের শরীরের উদযাপন করেছেন নিঃসংকোচে। যেমন শেফালি কাদিয়ান (ইনস্টা হ্যান্ডেল- stylesavitri), আনিন্দিতা রায় (ইন্সটা হ্যান্ডেল- theplusgirl)। বলিউডে বিদ্যা বালানকে দেখে আমরা ইন্সপায়ারড হই। কিন্তু সত্যিই কী ডিজাইনাররা ‘বডি পজিটিভিটি’ কিংবা ফ্যাশন জগতে ‘বডি ইনক্লুসিভিটি’ স্বতস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করতে পারছেন? এই যে ‘প্লাস সাইজ’ শব্দটা জুড়ে যাচ্ছে ‘মডেল’ শব্দের আগে– এটাই কী ‘মোটা’ এবং ‘রোগা’ বলে আলাদা করে দিচ্ছে না?
কলকাতার ডিজাইনাররা কী ভাবছেন?
সব্যসাচীর নতুন প্লাস সাইজ মডেল শোকেস করা নিয়ে ডিজাইনার নীল জানালেন, “গোটা পৃথিবীতে অনেক দিন ধরেই রিয়্যাল উওম্যানদের দিয়ে শুট করানো হয়। ভারতেও এক-দু’বছর হল বিষয়টা শুরু হয়েছে। কলকাতায় এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কথা চলছে কারণ সব্যসাচী তাঁর ইনস্টাগ্রামে একজন মহিলার ছবি দিয়েছে যাঁর শরীরের একাংশ দেখা যাচ্ছে যেটা তথাকথিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। নিঃসন্দেহে এটা খুব এনকারেজিং, তবে এতকাল ধরে অ্যানোরেক্সিক মডেল ব্যবহার করা এবং এক্সট্রিমলি বডি কনশাস ছবি ব্যববহার করার পর এটা করা অনেকটা ম্যানেজ দেওয়ার মতো। ইটস্ লাইক মেকিং আপ ফর ইট। সাধারণ মহিলারা অনেকদিন ধরেই নানান ধরনের পোশাক পরছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে এমন একটা ছবি দিয়ে যেন মহিলাদের অ্যাকনলেজ করার চেষ্টা। সো ইউ আর ট্রাইং টু ফিট ইনটু ইট। দ্যাটস মাই ক্রিটিসিজম। তবে সবমিলিয়ে ভারতের নিরিখে দিস ইজ এনকারেজিং টু সি। আর আমাদের পেজে আমরা সবসময়ই ‘রিয়্যাল পিপল’ যারা আমাদের পোশাক পরে তাদের কথা বলি। আওয়ার ক্লদস আর নট টু ফিট ইন, উই ফিট ইনটু হুএভার ওয়্যারস দেম।”
হোমগ্রোন ব্র্যান্ড ‘পরমা’ এখন সকলেরই খুব প্রিয়। যারা কলকাতা প্রেমী তারা তো অবশ্যই চেনেন। পরমা ঘোষ-এর শাড়ি এবং ব্লাউজে আমরা দেখেছি স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে। যিনি কখনওই বডি সাইজ নিয়ে মাথা ঘামাননি। পরমা জানালেন, “বডি ইনক্লুসিভিটি নিয়ে লোকজন এখন খুব ভোকাল হয়েছে এবং হওয়াই উচিৎ। তবে বডি ইনক্লুসিভিটিতে আমি চাইব সাধারণ মহিলা এবং পুরুষকে ইনক্লুড করতে তাহলে বিষয়টা সামগ্রিক হবে না। এখানে একটা সমস্যা আছে। আমরা যারা কিছু অ্যাচিভ করেছি, বা একটা আইডেনটিটি তৈরি করেছি তারা অনেকটা প্রিভিলেজড কারণ মোটা হলেও লোকে আমাদের অ্যাচিভমেন্ট নিয়ে হয়ত কথা বলবে। কিন্তু সব্বাইকে কিছু করতেই হবে এমন মাথার দিব্যি তো কেউ দেয়নি। সেখানে একেবারে সাধারণ হাউজওয়াইফ বা চাকুরিজীবি, হেভিওয়েট হলে সে নিজেকে নিয়ে সংকুচিত হয়ে থাকে কারণ সমাজ সারাক্ষণ তাকে একটা সৌন্দর্যের আতসকাচ দিয়ে মাপে। তবে কলকাতার ফ্যাশন দুনিয়ায় যদি জিজ্ঞেস করো, তাহলে চট করে এমন কোনও নাম বলতে পারব না যারা ‘বডি ইনক্লুসিভিটি’ প্রোমোট করে। বডি ইনক্লুসিভ, প্লাস সাইজ পোশাক অনেকেই বানায় ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী। আমরাও করি। কিন্তু প্লাস সাইজ মডেল দিয়ে শুট করে প্রোমোট করে এমন ব্র্যান্ডের নাম চট করে রিকল করতে পারব না।”
ডিজাইনার অভিষেক দত্ত সম্প্রতি ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহা এবং তাঁর স্ত্রী রোমা মিত্রর সঙ্গে শুট করেছেন। তথাকথিত মডেলসুলভ চেহারা নয় রোমার। তবুও ডিজাইনার পোশাকে খুবই কনফিডেন্ট এবং স্বতস্ফূর্ত তিনি। অভিষেক জানালেন তাঁর নিজস্ব মতামত। “দেখ আমি বহুদিন ধরেই প্লাস সাইজ ক্লায়েন্টের জন্য পোশাক বানিয়েছি। যার যেমন চাহিদা সেই অনুযায়ী কাজ করেছি। তবে এটা মেনে নিতেই হচ্ছে শুটিং করার সময় প্লাস-সাইজ নয়, অপেক্ষাকৃত রোগা মডেলদের দিয়েই শুট করাতে হয় আমাদের অনেককেই। কারণ আমাদের সমাজে একটা বিউটি স্ট্যান্ডার্ড সেট হয়ে আছে। দ্যাটস এ ট্যাবু উই নিড টু ব্রেক। ইদানিং একটু একটু করে বদল হচ্ছে। যারা প্লাস সাইজের তাদের কনফিডেন্সও বেড়েছে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইনফ্যাক্ট এই বিষয় নিয়ে ছবিও করছেন, অপরাজিতা আঢ্যকে নিয়ে। কলকাতাতেও অ্যাওয়ারনেস বাড়ছে বলেই মনে হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.