Advertisement
Advertisement
Mini Me Fashion, Matching Dress

বাব-মা-সন্তানের একরঙা পোশাক, গা ভাসাতেই পারেন ‘মিনি মি’ ফ্যাশনে

সেলিব্রিটি মহলে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় নতুন ট্রেন্ড৷

Matching dress of parents and children became quite famous these days
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 4, 2019 7:39 pm
  • Updated:April 4, 2019 7:39 pm  

ঐন্দ্রিলা বসু সিনহা: বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের ম্যাচিং পোশাক পরা  নতুন ট্রেন্ড। এর নাম ‘মিনি মি’ ফ্যাশন। 

ছোটবেলায় একটা খেলনা ছিল – কাঠের পুতুল। বাবার পেটের প্যাঁচ খুললেই বেরিয়ে পড়ত মা। তার পেটের ভিতর থেকে একে একে বড়দা-বড়দি-ছোট ভাই। সবারই এক রঙের পোশাক। একই রকম নকশারও। ‘মিনি মি ফ্যাশন’ ব্যাপারটাও এক্কেবারে সেই রকম। গোটা পরিবার হয়তো একসঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছে। বাবা-মা ছেলেমেয়ে। দেখা গেল সবাই পরেছেন একই ধরনের পোশাক। আবার কখনও বা বাবা-ছেলে, মা-মেয়ে কিংবা এর উলটো কম্বিনেশনে পোশাক মিলন্তি। মোদ্দা কথা রং মেলানোর ছেলেমানুষি আনন্দ উপভোগ। আর তার সঙ্গে ফ্যাশন সচেতনতার বুদ্ধিদীপ্ত ইজহারও। উলটোদিকের মানুষগুলোকে বুঝিয়ে দেওয়া, ‘হুঁ হুঁ বাবা ফ্যাশন ট্রেন্ডের লেটেস্ট খবর আমরাও রাখি।’ একটা সময়ে ছানাপোনাদের পোশাক ছিল ‘অল অ্যাবাউট কমফর্ট’। পোশাক কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু গত দশ বছরে বাবা-মায়েদের সেই ভাবনা বদলেছে। আরামের সঙ্গে ছোটদের পোশাকে এখন সমান গুরুত্ব পায় স্টাইল। আর এই ট্রেন্ডেই গা ভাসিয়ে এখন ছোটদের ফ্যাশন দুনিয়ায় রাজত্ব করছে ‘মিনি মি ফ্যাশন’। যেখানে বাবা বা মা কিংবা দু’জনের সঙ্গেই রং মিলান্তি চলছে পুঁচকের। কিংবা পুঁচকের সঙ্গে পোশাকে তাল মেলাচ্ছে বাবা-মায়েরা। তবে শুধু রং মিলান্তিই বা বলা কেন! কাটছাটের নকশাতেও চলছে মা-মেয়ে কিংবা বাবা-ছেলের পোশাকের মিলমিশ।

Advertisement

[আরও পড়ুন :  আঁচলে মমতা, কুচিতে মোদি, বডিতে হাত, ভোটের বাজারে বিকোচ্ছে ‘পার্টি শাড়ি’]

পুঁচকে গবেষণা
ফ্যাশন ব্যাপারটা প্যাশন হয়ে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ঢোকান ঢুকে গিয়েছে যে শুধু শব্দটা শুনলেই আমাদের ডিএনএ নেচে ওঠে। সুপ্ত সৃষ্টিশীলতা ওঠে সুড়সুড়িয়ে। ছোটবেলার পুতুলের জামা পরানোর মতোই ছেলেমানুষি আর নিপাট ভাললাগার আনাগোনা সেই আবেগে। আর এমন যখন হাল, তখন হাতের কাছে বা কোলের ভিতর যদি একখান বা দুইখান ছোট্ট মানুষ থেকে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। ‘কচি তারা কথা ফোটে না’-র সুযোগ নিয়ে সেই কাঁচা চেহারাকে নিয়েই চলে দেদার গবেষণা। আর ঠিক এইখানেই অপার সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে ‘মিনি মি’ ফ্যাশন ট্রেন্ড।

যেমন ধরো
এই সেদিনের কথা। দুই পুত্র রিহান আর হৃদান কে নিয়ে একটি আওয়ার্ড নাইটে হাজির হয়েছিলেন হৃত্বিক রোশন। লাল গালচেয় তিনজনে পা রাখতেই, ‘ও মাই গড! কি কিউট! কি সুইট!’ জাতীয় মন্তব্যের বান ডাকল। কারন হৃত্বিকের সঙ্গে এসে হাজির তাঁর দুই মিনি ভার্শন। এক পোশাক, এক স্যুট, এক রং। তাতেই ফিদা ভক্তরা।ঐশ্বর্য আর আরাধ্যার কথাও ভুললে চলবে না। এয়ারপোর্ট হোক বা ফ্যাশন শো কিংবা পুজো দিতে মন্দিরে– দিব্যি মায়ের সঙ্গে ম্যাচিং জামা পরে ঘুরে বেড়ায় বিগ বি’র সাত বছরের নাতনি। করিনা দিনকয়েক আগে বলছিলেন, তৈমুরকে নাকি তিনি ব্র্যান্ডেড জামা পরান না। অথচ লেটেস্ট ফ্যাশন ট্রেন্ডস নিয়ে তাঁর মোটেই তেমন বাতিক নেই। মা-ছেলে দুজনেই এক রঙা জিন্স আর একই ধরনের টি-শার্ট পরে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন একদিন। সোনমের সংগীতেও সইফ, করিনা আর তৈমুর হাজির হয়েছিলেন গোলাপি পোশাকে। করিনার পিংক লেহেঙ্গার সঙ্গে মিলিয়ে সইফ আর তৈমুরের পরনে ছিল সাদা পাজামার উপর লখনউ চিকনের কাজ করা গোলাপি পাঞ্জাবি। অবশ্যি পাঞ্জাবির সঙ্গে তৈমুরের ফোলাফোলা গোলাপি টসটসে গাল দু’টোও দিব্যি মানিয়ে গিয়েছিল। ভেবেই মিষ্টি লাগছে, তাই না! দেখলে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসিও ধরা দিত নিশ্চয়ই। ছুটে গিয়ে পুচকের গাল টিপে দিলেও আবেগের আচমকা উচ্ছ্বাস বাধা দিত না কেউ। আর মিনি মি ফ্যাশান ইজ অল অবউট দিজ মিষ্টত্ব।

নাম কেন মিনি মি
উত্তর দেওয়ার আগে এক আড়াই ফুটের মানুষের গল্প বলা দরকার। তারও নাম মিনি মি। যদিও পুঁচকেদের মিষ্টত্বের ছিঁটেফোঁটাও নেই তার ভিতরে। বরং কেমন যেন ড্যাবড্যাবে চোখ। মাথা জোড়া টাক। ছোট্ট শরীরে বুড়োদের হাবভাব। আমেরিকান গুপ্তচর সিরিজ অস্টিন পাওয়ারের চরম শয়তান চরিত্র ডক্টর এভিলের ক্লোন এই মিনি মি। শয়তান ডাক্তারের কোলে চেপে বিলকুল তার মতোই সেজে ঘুরে বেড়ানো মিনি মি-র একমাত্র কাজ। তা সে গলাবন্ধ ধূসর ম্যান্ডারিন স্যুট হোক বা সাদা কালো টাক্সেডো কিংবা পকেটে সিল্কের স্কার্ফ দেওয়া স্টাইলিশ ব্লেজার, সবেরই মিনি ভার্সনে দেখা যেত ওই মিনি মিকে। তাই ছোটদের বড়দের মতো সাজগোজের ট্রেন্ড যখন চালু হল, তখন তার নাম রাখা হল এই জনপ্রিয় কল্পচরিত্র মিনি মি-র নামে।

মনোবিদ বলছেন
মিনি মি ফ্যাশনে একটা ইউনিটি আছে। বেশ একটা একাত্মবোধ। ‘আমার নিজের দল’ গোছের। পরোক্ষভাবে হলেও বিষয়টা শিশুমনে একটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে। যেটা সব সময়ই ভাল, বলছেন মনোবিদরা। যদিও এই ট্রেন্ডের সমালোচকরা বলছেন, বাচ্চাদের মতো পোশাক পরে বাবা-মায়েদের এমন খোকাখুকু সাজার চেষ্টা মোটেই সমর্থন করা যায় না। আবার নিজেদের পোশাকের সঙ্গে মিল দিতে গিয়ে শিশুদের বড়দের মত পোশাক পরানোটাও কোনও কথার কথা নয়। শিশুমনে যে এর কুপ্রভাব পড়বে না কে বলতে পারে!

ডিজাইনার বলছেন
অগ্নিমিত্রা পালের মতে, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের ম্যাচিং পোশাকের ট্রেন্ড খুব মিষ্টি আর সুন্দর। “ভাই-বোনেদের একই রকম ছিটের জামাকাপড় বানানোর ট্রেন্ড আগেও ছিল। তাহলে বাবা-মায়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ম্যাচিং জামাকাপড় পড়তেই বা আপত্তি কোথায়? বরং এখন যে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে সারা দিন বাবা-মা নানা কাজে ব্যস্ত, সেখানে একদিন কোনও অনুষ্ঠান বা আউটিংয়ে যদি তাঁরা সন্তানের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরেন, তবে সন্তানদের উপর তার ভাল প্রভাবই পড়বে।” শুধু তাই নয়, এভাবে ফ্যাশনের সাহায্য দুই প্রজন্মের বন্ডিংয়ের অবকাশও থাকে।

[আরও পড়ুন :  আরও শৌখিন অন্তর্বাস চান? ওয়ার্ডরোবে রাখুন ডেনিম প্যান্টি]

মায়েরা বলছেন
“কুর্তির কাপড়টা বেঁচে গিয়েছিল মিটারখানেক। নষ্ট করব না ভেবেই মেয়ের জন্য বানিয়েছিলাম একটা ফ্রিল দেওয়া ফ্রক। মা-মেয়ে একসঙ্গে সেই কুর্তি আর ফ্রক পরে বেরোতেই দেখলাম ব্যাপারটা দারুণ হিট হয়ে গেছে,” বলছিলেন রিনা সেন। প্রাইভেট সংস্থায় কর্মরত তিনি। সিঙ্গল মাদার। “মিনি মি ফ্যাশন কী, সেটা সত্যিই জানা ছিল না। না জেনেই ব্যাপারটা ঘটিয়ে ফেলে বেশ গর্ববোধ হচ্ছে। আসলে মেয়ের মধ্যে নিজের ছোটবেলাকে দেখার একটা আগ্রহ ছিল। ওইরকম ফ্রিল দেওয়া জামা মা আমায় পরাত। বন্ধুদের কাছ থেকে দারুণ রিঅ্যাকশন পেয়ে ঠিক করেছি, কুর্তির কাপড়গুলো কয়েক মিটার বেশিই কিনব!”

নববর্ষে ম্যাচিং
অভিষেক দত্ত (ফ্যাশন ডিজাইনার)

১) সামনেই নববর্ষ। আর নববর্ষ মানেই সাধারণত সাবেকি সাজ। আপনি যদি সাবেকি সাজে সাজতে চান বাবা-ছেলে একরকম ধুতি বা ধুতি-প্যান্ট আর নেহরু জ্যাকেট পরতে পারেন।
২) ধুতির সঙ্গে পাঞ্জাবি পরলে, পাঞ্জাবির রং যেন একইরকম হয়। নেহরু জ্যাকেট হলে আলাদা রং কিন্তু একরকম ফ্যাব্রিক হতে হবে। এই সময়টা বেশ গরম থাকে তাই সুতির পোশাক পরাই ভাল।
৩) মা-মেয়ে একরকম শাড়ি পরাটা একটু ডিফিকাল্ট, আর দেখতে ভাল নাও লাগতে পারে। তাই যাই পরুন না কেন রং যেন এক হয়। বা দু’জনেই এক রং-এর চুড়িদার পরতে পারেন।
৪) এখন বাচ্চাদের রেডিমেড শাড়ি পাওয়া যায়। তাই খুব ইচ্ছে হলে মা-এর শাড়ির রং-এর সঙ্গে ম্যাচ করে মেয়ে রেডিমেড শাড়ি পরতে পারে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement