সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গরমের এখন মাপ নেওয়া বাতুলতা। বিরামহীন দাবদাহে ক্লান্ত প্রকৃতি। এইমাত্র সাজগোজ করে ধোপদুরস্ত হওয়া মুহূর্তে ঘেমে জল। কে বলবে দেখে যে, কয়েক মুহূর্তে এই অবস্থা হবে! তাপমাত্রার পারদ যত না বেশি, তার চেয়েও বেশি আপেক্ষিক আর্দ্রতা। শরীর যত না ঘামে, তার চেয়ে অনেক বেশি ঘামে চুল। চুলের গোড়া ভিজে জবজবে। প্রবল ঘাম, ঘাম বসে চুলে দুর্গন্ধ হওয়া। নেতিয়ে নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়া। চুল না খুলে শান্তি, না বেঁধে। রাস্তায় বেরনোর কয়েক মিনিটের মধে্য চুলের অবস্থা যাচ্ছেতাই।
- গ্রীষ্মে যাঁরা বাইরে বেরোন বা বাড়িতে ঘরকন্না নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকেন, সকলকেই রোজ চুল ভেজাতে হবে। অন্তত সপ্তাহে চারদিন শ্যাম্পু করলে ভাল, সঙ্গে চুল প্লেন জলে ধুয়ে নিন।
- চুল খুব ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে। ভিজে চুল গরম লাগছে বলে বেঁধে নিলে চলবে না।
- কারণ বেঁধে রাখা ভেজা চুলের দুর্গন্ধ থেকে চুল ড্যামেজ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। চুল উঠতে শুরু করে।
- রোদে বেরনোর সময় স্কার্ফ দিয়ে মাথা, মুখ ঢেকে ফেলুন। সূর্যের রশ্মি যতটা ত্বকের ক্ষতি করে, ততটাই চুলের ক্ষতি করে।
- ইউভি প্রোটেক্টেড হেয়ার লোশন ব্যবহার করুন। চুল শুকিয়ে বাইরে বেরন।
- চুল যত ভিজে থাকবে, ততই ধুলো বসবে, ততই খুশকি, ডগা ফাটা, ফ্রিজিনেস, চুল পড়া বাড়তে থাকবে।
- গ্রীষ্ম তৈলাক্ত চুলকে আরও বেশি যেমন তেলতেলে করে, তেমনই চুল খুব ড্রাইও হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করেছেন যাঁরা এই সময়। কারণ হেয়ার স্ট্রেটনিং, কার্লিং বা অন্য যে কোনও কিছুই করতে হলে চুলে হিট দিতে হয়, যার ফলে চুল খুব ড্রাই হয়ে যায়।
- স্ক্যাল্প খুব কর্কশ, শুষ্ক হয় এবং আমরা বুঝতে পারি না স্ক্যাল্পে সানবার্নও হয়। ময়েশ্চার কমে যায়। তাই কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট এই সময় না করাই ভাল।
- কড়া রোদে চুল ব্রাউনিশ হয়ে যায়। যদি রং করা থাকে, তবে সেই রং ফেড হয়ে যায়। এই ডিসকালারেশন দেখতে বাজে লাগে। তাই একটানা অনেকক্ষণ সান প্রোটেকশন ছাড়া বাইরে থাকবেন না।
- দেখে নিন আপনার স্ক্যাল্পের ধরন। তেলতেলে, শুষ্ক, বা খুশকি ভরা, না ইচি স্ক্যাল্প।
- পাশাপাশি চুলের ধরনও দেখে নিন স্ট্রেট, কার্লি, ওয়েভি, পার্ম করা না অন্য কিছু। সেই বুঝে যত্ন করুন।
- খুব কম ব্যবধানে চুলে রং করবেন না।
[ আরও পড়ুন: ব্লাউজ থেকে উঁকি মারা বিভাজিকা, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফাটল কি না! ]
- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার জল দিয়ে তরল করে ওই মিশ্রণে চুল ধুয়ে নিন। এটা খুব হালকা কার্যকরী কন্ডিশনার।
- নারকেল তেল বা শিয়া বাটার হালকা করে তালুতে নিয়ে চুলে বুলিয়ে নিন। খুব বেশি যেন না হয়। এগুলো চুলে ময়েশ্চারাইজার লক করতে সাহায্য করবে।
- ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট এই সময় চুলের জন্য ভাল।
- হেয়ার শ্যাম্পুতে এখন ইউভি প্রোটেকশন দেওয়া থাকে। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। তবে নর্মাল শ্যাম্পু বেশি ভাল।
- নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো অয়েল খুব ভাল হেয়ার শাফটের জন্য। শ্যাম্পু, কন্ডিশনিং যেমন চলছে চলুক, পাশাপাশি এই তেলগুলো যে কোনওটা সপ্তাহে দু’দিন ভাল করে চুলে লাগিয়ে আঙুলের ডগা দিয়ে মাসাজ করে নিন। পরের দিন শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুল পুষ্টিও পাবে, ভালও থাকবে।
- ১ চা চামচ সি-সল্ট ও ১ চা চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। ওই মিশ্রণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে রেখে দিন। মাঝেমধে্য স্প্রে করুন।
- কন্ডিশনার আর শ্যাম্পু ভুল বাছলে চুল গ্রীষ্মে কখনওই ভাল থাকবে না। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- শ্যাম্পু দিতে হবে শুধু স্ক্যাল্পে, চুলে নয়। জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন, এতে যেটুকু শ্যাম্পু চুলে লাগে লাগবে।
- ফ্রিজি হেয়ার হলে ফ্রিজ কন্ট্রোল সেরাম ব্যবহার করুন। ফ্রিজি চুল বেঁধে রাখুন যতটা সম্ভব।
- গ্রীষ্মে যাঁদের তৈলাক্ত স্ক্যাল্প, তাঁদের আর্দ্রতার কারণে আরও বেশি তেলতেলে স্ক্যাল্প হয়ে যায়, ঘাম জমতে থাকে এবং ধুলো-ময়লা জমে খুশকি হয়।
- ভিনিগার খুশকির জন্য খুব কার্যকরী। ভিনিগার চুলকে ঔজ্জ্বল্য দেয়। ভিনিগার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
- হেয়ার স্পা করতে পারেন। স্পায়ের সময় স্ক্যাল্পে মাসাজ করা হয়, যা খুশকি অর্থাৎ মৃতকোষ ঝরিয়ে দেয়। হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
- হালকা উষ্ণ অলিভ অয়েল ভাল করে মাসাজ করুন, খুশকির জন্য দারুণ কার্যকরী।
- ভাল করে চুল অঁাচড়ান হেয়ার ব্রাশ দিয়ে। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল ভাল হয়।
- টক দই আর ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে চুলে মাস্ক হিসেবে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
[ আরও পড়ুন: অসমকন্যার হাতের ছোঁয়ায় তৈরি গাউনে মুগ্ধ কানের রেড কার্পেট ]
- ইচি স্ক্যাল্প গ্রীষ্মে খুব কমন একটা সমস্যা। বেশির ভাগেরই হয়। এক্ষেত্রে ১ চামচ বেকিং পাউডার, ২ টেবিল চামচ জল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে দিন সপ্তাহে একদিন। বেকিং পাউডার স্ক্যাল্প রিজুভিনেট করবে। খুশকিও রোধ করবে। চুলকানিভাব বন্ধ করবে।
- চুলপড়া গ্রীষ্মে একটি অন্যতম সমস্যা। কারও কম, কারও বেশি। চুল পড়েই। ঘাম জমে, পলিউশন, খুশকি এগুলো থেকে চুল পড়তে পারে।
- উষ্ণ তেল মাসাজ খুব কার্যকরী চুল পড়ার জন্য। নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল দুই-ই ভাল। যে কোনওটা দিয়ে মাসাজ করুন।
- নারকেলের দুধ চুলের জন্য ভীষণ পুষ্টিকর। আমলকীর রসও খুব ভাল চুলের জন্য। এই দুটোই চুল পড়া রোধ করে। আমলকীর রস মাথা ঠান্ডা রাখে।
- অ্যালোভেরা জু্স চুল পড়া রোধ করে। অ্যালোভেরা চুলেরও বৃদ্ধি ঘটায় দ্রুততার সঙ্গে।
- গ্রীষ্মে চুলের যাবতীয় সমস্যার সঙ্গে ফুড হ্যাবিটও জড়িত। স্বাস্থ্যকর চুলে প্রয়োজন প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, মিনারেল সঠিক পরিমাণে যা রয়েছে শাকসবজিতে, দুধ, ডিম, মাছ, ফল ইত্যাদিতে। খাদ্যতালিকায় এগুলো অবশ্যই রাখুন। প্রচুর পরিমাণে জল এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় খেতে হবে নিয়মিত।