ফ্যাশন বিষয়ক নানা কিছু। কখনও ট্রেন্ড, কখনও কোনও পোশাকের কথা, আবার কখনও ফ্যাশন দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া কোনও খবরাখবর নিয়ে এই কলাম। আজকে নানা ধরনের হ্যান্ডলুম ও হ্যান্ড ডাইড ফ্যাব্রিক।
মালখা
প্লেন আনব্লিচড হ্যান্ডলুম সুতি মালখা। আর পাঁচটা বড় হ্যান্ডলুম মেশিনের বদলে ছোট তাঁতে বোনা হয় এই সুতি। কাপড়ে ব্যবহৃত রংও প্রাকৃতিক। বেদানার খোসা, হরিতকি, হলুদ- এ ধরনের প্রাকৃতিক উৎসের রং ব্যবহৃত হয় মালখা কাপড়ে।
অকোলা ডাবু
রাজস্থানের ডাবুর প্রিন্টের মতো অকোলা ব্লক প্রিন্টও তৈরি হয় কাদা ও জলের ব্যবহারে রেসিস্ট প্রিন্ট পদ্ধতিতে। কাঠের ব্লক আঁকা, কাদা ও চুনজলের মিশ্রণে ডুবিয়ে নরম সুতির ওপর করা হয় প্রিন্ট। নীল, তুঁতে ও লালের ভিন্ন শেড প্রাধান্য পায় অকোলা প্রিন্টের শাড়ি ও থানে। রাজস্থানের উদয়পুর জেলার অকোলা অঞ্চলেই তৈরি হয় অকোলা ডাবু।
পিপড় কটন
রাজস্থানে যোধপুরের একটি ছোট অঞ্চল পিপড়। এখানকার শুষ্ক আবহাওয়া হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টের জন্য অনুকূল। গাছগাছড়া, ফল-ফুল থেকে তৈরি প্রাকৃতিক রং দিয়ে রাঙিয়ে তোলা হয় পিপড় কটন। গাঢ় লাল, খয়েরি, কালচে হলুদ, ঘিয়ে, গাঢ় সবুজ রঙের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
[ বসন্তে হয়ে উঠুন স্টাইলিশ, পোশাকে থাকুক সাহসিকতার ছোঁয়া ]
বড়াগাঁও কটন
উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকি জেলার হাতে বোনা সুতি এটি। নরম সুতিতে গামছার মতো চওড়া ও সরু চেক ও স্ট্রাইপ এখানকার বৈশিষ্ট্য। গাঢ় লাল, মেরুন, নীল, বেগুনি ও হালকা রঙের ব্যবহার বেশি দেখা যায় থানে। শাড়ি ও থান ছাড়া দোপাট্টাও তৈরি করা হচ্ছে এই সুতি দিয়ে।
সুনগুরি
তামিলনাড়ুর চিন্নালপট্টি গ্রাম এই শাড়ির উৎস। মাদুরাই শাড়ি, চিন্নালাপাট্টু এই শাড়িরই অন্য নাম। গুজরাত থেকে দক্ষিণ ভারতে আসা কারিগরের হাতে তৈরি এই শাড়িতে দেখা যায় ব্লক প্রিন্ট ও টাই অ্যান্ড ডাই পদ্ধতি। বর্তমানে গ্রামের ১০ হাজার মানুষের জীবিকা শাড়ি তৈরি। হাতে বোনা শাড়িতে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহারই বেশি, সুতির তৈরি এই শাড়ির বর্ডারে ব্যবহার হয় সোনালি সুতো।
সাংগানেরি
রাজস্থানে জয়পুরের দক্ষিণ দিকের একটি গ্রাম সাংগানের। সেখানকারই হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টেড কাপড় সাংগানেরি কটন নামে পরিচিত। প্রায় ৫০০ বছর পুরনো এই হ্যান্ড ব্লক পদ্ধতি। ১৬ বা ১৭ শতকে মারাঠা ও মোগলদের লাগাতার যুদ্ধে গুজরাতের বহু বয়নশিল্পী চলে আসেন রাজস্থানে। তাঁদের হাতেই সাংগানোর গ্রামে নতুন করে উদয় হয় ব্লক প্রিন্টের। ব্রিটিশ শাসনকালে ইউরোপেও রপ্তানি হত সাংগানেরি থান। ঠাকুর-দেবতা, ফুল-ফল ও লোককথার নানান ছবি ফুটে ওঠে সাংগানেরি ক্যানভাসে। লাল, হলুদ, সবুজ, গাঢ় বেগুনি- এ ধরনের উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার হয় কাপড়ে।
কাঞ্চি কটন
তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম শহরের গর্ব এই সুতি। হাতে বোনা কাঞ্চি কটনের বৈশিষ্ট্য এর নিখুঁত কাজের পাড় ও উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। পাড়ের নকশায় কাঞ্চিপুরমের মন্দিরের নকশাও ব্যবহৃত হয়। নরম এই সুতির বিদেশেও কদর রয়েছে। শাড়ি ও থান দু’ভাবেই পাওয়া যায় কাঞ্চি কটন।
[ ভোটের বাজারে হিট ‘মোদি শাড়ি’, রমরমিয়ে বাড়ছে বিক্রি ]
নন্দনা
মধ্যপ্রদেশের নিমুচ জেলার তারাপুর গ্রামে প্রচলিত এই ব্লক প্রিন্ট। নরম সুতির কাপড়ে এই ব্লক প্রিন্টের তৈরি পোশাক অত্যন্ত আরামদায়ক। একসময় ভিল আদিবাসী গোষ্ঠীর মহিলারা সারাদিন কাজের জন্য বেছে নিতেন নন্দনা প্রিন্টের পোশাক। সারাদিন মাঠেঘাঠে হাড়ভাঙা খাটুনির সময় হালকা রঙের পোশাক পরা যেত না। তাই এখনও প্রথাগত ভাবে গাঢ়রঙা সুতিতেই ফুটে ওঠে নন্দনা কারুকাজ। লঙ্কা, চাঁপা, আম, জমাল বুটো (একরকম লতানে গাছ) এই চারটি মোটিফই মূলত ব্যবহার হয় ব্লকে। প্রাকৃতিক রঙের মধ্যে নীলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য হ্যান্ড ব্লক ও হ্যান্ড ডাইয়ের চেয়ে নন্দনা ব্লক তৈরি করতে লাগে অনেকটা সময় ও কায়িক পরিশ্রম। ৮০০ মিটার কাপড় তৈরিতে লেগে যায় একমাস সময়। ২০০ বছরের পুরনো এই শিল্প আজ ক্ষয়ের পথে। সময়সাপেক্ষ হওয়ার ফলে বহু শিল্পী মুখ ফিরিয়েছেন, তারই সঙ্গে প্রচারের অভাবে শিল্পের কদরও আজ নিম্নমুখী।
খুন অথবা খুন্দ
কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে বহু বছর ধরে খুন থানের চল রয়েছে। বর্তমানে খুনের তৈরি শাড়ি দেখা গেলেও চিরাচরিত ভাবে শুধুমাত্র ৩১ ইঞ্চি চওড়া ব্লাউজ পিস বোনা হত। কর্ণাটকের গুলেগুড্ডা শহরে এখনও হাতে বুনে, হ্যান্ড ডাই করা হয় খুন ফ্যাব্রিক। বর্তমানে সেখানে ৪০০০ তাঁতির বাস। কালার ব্লকিংয়ের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই ফ্যাব্রিক। চলতি ট্রেন্ডে কালার ব্লকিং কনসেপ্ট আসার বহু যুগ আগে থেকে মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের মহিলাদের গায়ে শোভা পেত উজ্জ্বল বাহারি রঙের খুন কাপড়ের ব্লাউজ। কাপড়ের নামের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে নানান গল্প। মহারাষ্ট্রে আখ চাষ হত যেসব অঞ্চলে, সেখানকার মহিলারাই এই কাপড় বুনতেন। তাঁদের মুখচলতি ভাষায় খুন শব্দের অর্থ ছিল চিনি, তাই এমন নাম বলে মনে করা হয়। আবার ভিন্নমতে ‘খুন’ হল পরিমাপ একক। এক ‘খুন’-এর অর্থ হাফ মিটার কাপড়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.