সুমন করাতি, হুগলি: সামনেই শারদোৎসব (Durga Puja 2023)। কাশফুলের সমাহার ইতিউতি জানান দিচ্ছে, আর বেশি দেরি নেই। কয়েক সপ্তাহ পরেই বাংলার মানুষ মেতে উঠবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে। নতুন নতুন পোশাক পরে প্রতিমা দর্শনের অনাবিল আনন্দে মেতে উঠবে তারা। কিন্তু নতুন-নতুন পোশাক যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁদের সবাই ভালো আছেন তো?
নারী মাত্রই শাড়ির প্রতি দুর্বল। আর এই শাড়ির মধ্যে তাঁত একটি উজ্জ্বল নাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হাজার বছরের পুরনো তাঁত শিল্প প্রায় লাটে উঠতে বসেছে। এই রাজ্যে নদিয়া ও হুগলির তাঁত জগৎ বিখ্যাত ছিল এক সময়। বিশেষত হুগলির ধনিয়াখালি, আঁটপুর ও বেগমপুরের তাঁতের আলাদা কদর ছিল শাড়িপ্রেমীদের কাছে। কিন্তু এই আধুনিকতার যুগে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যশালী তাঁত শিল্প(Durga Puja Lifestyle)। কেমন আছেন সেই সব তাঁত শিল্পীরা?
হুগলির প্রাচীন জনপদ বেগমপুর। শ্রীরামপুর মহকুমার চণ্ডীতলা থানার অধীনে এই প্রাচীন জায়গা তাঁত শিল্পের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল। বিশেষ করে হালকা এবং উজ্জ্বল বলে এই বেগমপুরি তাঁতের বরাবরই কদর রয়েছে। কিন্তু আগামী দিনে আদৌ এই বেগমপুরি শাড়ি থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাঁতিপাড়ার শিল্পীদের করুণ অবস্থা। সামনেই দুর্গাপুজো। কিন্তু তাঁদের মুখে হাসি নেই। অধিকাংশ শিল্পীই প্রবীণ। তাঁদের উত্তরসূরি কেউ আর তাঁত বোনে না। কারণ তাতে পেট ভরে না। সংসার চলে না। তাই তাঁরা পার্শ্ববর্তী ডানকুনি শিল্পাঞ্চলে কলকারখানায় কাজ জোটাতে ব্যস্ত।
মহাজন কাঁচামাল দিয়ে যায়, বৃদ্ধ তাঁতি তাঁর সহধর্মিণীকে পাশে রেখে তাঁত বুনে যান। একটি ১২ হাত শাড়ি তৈরি করতে লাগে দুদিন। মজুরি ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। শেয়ার বাজারের মতো এই ‘রেট’ ওঠানামা করে। দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে দৈনিক রোজগার ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এতে কি সংসার চলে? শিল্পীদের একটাই দাবি, মজুরি বৃদ্ধি হোক। কিন্তু সে তো অরণ্যে রোদন। এক সময় যে এলাকায় ৩৫ হাজার তাঁত চলত, রাস্তার দু’দিকের বাড়ি থেকে ভেসে আসা সুমধুর খটাখট আওয়াজে চারদিক গমগম করত, এখন মেরেকেটে ৫০০ তাঁত চলে কি না সন্দেহ।
এক প্রবীণ শিল্পী বলছিলেন, “শাড়ির বাজার খুবই খারাপ। সুতোর দাম বেড়ে গিয়ে কাপড়ের দামও বেড়েছে। কিন্তু লকডাউনের আগে মজুরি যা পেয়েছি, এখন তা আরও কমে গিয়েছে। যে কাপড়টা ২৩০ টাকা মজুরি পেয়েছি, সেটা আজকে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা মজুরি। একটা কাপড় বুনতে ২ দিন করে সময় লাগে। সপ্তাহে চারটের বেশি বোনাই যায় না। আমাদের বয়স হয়ে গিয়েছে। যারা একটু বেশি বোনে, তারাও ৫ টার বেশি পারে না।” তাঁর আক্ষেপ, তাঁত চালাতে পারছে না বলেই দলে-দলে ডানকুনি বা দুর্গাপুর রোডে কাজে চলে যাচ্ছে। তাঁত শিল্প কি উঠে যাবে? ওই প্রবীণের সাফ জবাব, উঠে যাবে মানে? উঠে তো গিয়েছে।
তাঁতিরা এতই কর্মব্যস্ত ছিলেন যে বিশ্বকর্মা পুজো পিছিয়ে শীতকালে করতেন। কারণ দুর্গাপুজোর ঠিক এক মাস আগে বিশ্বকর্মা পুজো তাঁরা ঠিকমতো করতে পারতেন না। তাই দুর্গাপুজোর পর বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করতেন। সেই থেকে এই বেগমপুর এলাকায় অকাল বিশ্বকর্মা পুজো হয়ে থাকে, যা এই বাংলায় কোথাও হয় না। সেই হুগলির ম্যাঞ্চেস্টারের সুদিন কি আবার কোনও দিন ফিরে আসবে কোনও সোনার কাঠির ছোঁয়ায়? সময় এর উত্তর দেবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.