সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিছানায় বসে আছে এক সুন্দরী মেয়ে। গোলাপি রংয়ের টপ ও মুখে মনভোলা হাসি। তারপরই শুরু হয়ে গেল পর্ন ভিডিও। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল বাজারে। মোবাইল থেকে ল্যাপটপ, কিছুদিনের মধ্যেই ভাইরাল। যে মেয়েটিকে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে হয়তো এই পর্নছবির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু অজান্তেই হয়ে যেতে পারে এই চরম বিপদ। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ছবি বা ভিডিও নিয়েই সফটওয়্যারের মাধ্যমে অন্য কোনও মহিলার শরীরে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে মুখ। আর সেই জাল ‘ফেসে’ মুখ পুড়ছে অনেক মহিলারই। পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়দের কাছে লজ্জা, আত্মসম্মান নষ্ট হচ্ছে সমাজে।
১০-১২ বছর আগে ফটোর কারসাজি শুরু হয়েছিল ফটোশপ বা এয়ারব্রাশের মধ্যে প্রযুক্তির সাহায্যে। এবার ভিডিওতেও একইভাবে সামনে এসেছে ফেক ভিডিও রিলিজ করার কারসাজি। মেশিন লার্নিং পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে ডিপ ফেক । এর মাধ্যমে যে কোনও ভিডিওতে একজনের মুখের উপর অন্য কারও শরীর বসানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, আছে আরও অনেকরকম ফান্ডা। মুখ পালটালেও ওই মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি ধরা সম্ভব। সেগুলো মনে হবে আসল। অনেক অভিনেত্রী বা মডেলদের বিকৃত ছবি বা ভিডিও পর্নসাইটে এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে। এবার সাধারণ মহিলাদের ভিডিও ছড়ানো শুরু হয়েছে। সত্যি-মিথ্যের ব্যবধান ভেঙে ইন্টারনেটে ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ছে এসব ফেক ভিডিও। ব্যক্তিগত শত্রুতা হোক বা রাজনৈতিক অভিসন্ধি, সব মেটাচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রযুক্তি। তবে আবিষ্কারের সময় বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি ভাবতে পারেননি। এভাবে ফেক ভিডিওকে অস্ত্র বানানো হবে, সেটা ভাবতে পারেনি আবিষ্কারক গুগলও। মহিলাদের হেনস্থা, সম্মানহানির জন্য ব্যাবহৃত হচ্ছে এই নয়া প্রযুক্তি। আর তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পর্নসাইটগুলোতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনভাবে তা তৈরি হচ্ছে, যে ধরাই যাচ্ছে না। এই সংক্রান্ত কোনও আইন বা প্রমাণের কোনও জায়গা নেই। তাই আদালতে যাওয়ার উপায়ও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে অবিলম্বে সংবিধানে একটি সংশোধনী আনা উচিত।
সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ, ফেক ভিডিওর তালিকায় বাদ নেই কেউ। গতবছর হলিউড সেলিব্রিটিদের একাধিক গোপন ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু তার অধিকাংশ জাল। হলিউড অভিনেত্রী স্ক্যারলেট জনসন এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি জানান, কাউকে হেনস্থা করতে হলে এর থেকে সহজ পন্থা আর কিছুই নেই। কেউ যদি কারও ছবি অন্য কারও শরীরে বসিয়ে দেয়, তাহলে তো কেউ কাউকে বাধা দিতে পারে না। ইন্টারনেটে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হয়। না করলে ইন্টারনেটের করালগ্রাসে ডুবে যেতে হবে। এরকম ঘটনার স্বীকার হয়েছেন সাধারণ মহিলাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪০ বছরের এক মহিলা জানান, এরকম ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর আমার মনে আতঙ্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বিয়ে অথবা কেরিয়ারে প্রভাব পড়তে পারে ভেবে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। বছর ২৫-এর এক মহিলা জানান, এটা কেমন অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। ইন্টারনেট দেখে আপনার মন তোলপাড় হয়ে যাবে। কেঁদে ভাসাবেন। কিন্তু আপনি জানেন, এই কাজটি আপনি করেননি।
ভারত সরকার গোটা দেশে পর্নসাইট বন্ধ করলেও বীজ লুকিয়ে আছে অন্য জায়গায়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পর্নভিডিওর চাহিদা সবথেকে বেশি। আর এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ফেক ভিডিওতে রমরমা বাড়ছে পর্নসাইটগুলোর। তার ফলে সাইট বন্ধ করলেও নয়া প্রযুক্তির এই হেনস্থার সংখ্যা বন্ধ হচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.