অভিরূপ দাস: মানসিক পরিপক্বতার বোধই আসেনি। এক ছাদের তলায় থাকতে চলে যাচ্ছেন। ফল হচ্ছে যা হওয়ার তাই। মাস কাটতে না কাটতেই অশান্তি। তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাচ্ছে লিভ ইন-এর চার দেওয়াল। কারও চোখের তলায় একপোঁচ কালি, কারও জীবন শেষ হচ্ছে উঠতি অভিনেত্রী পল্লবী দে’র (Pallavi Dey) মতো।
যদিও একেই শেষ কথা বলছেন না টলিউডের বহু বিশিষ্ট। তাঁদের কথায়, ছেলেটি মেয়েটি বোধশক্তিসম্পন্ন, পরিণত হলে লিভ-ইন সফল হবে। লিভ-ইন বান্ধবীকে বিয়ে করে সুখে দিন কাটাচ্ছেন এমন উদাহরণ যে ভূরি ভূরি। সমস্যা শুধু একটাই। তথাকথিত প্রেমের বা মনের বাঁধন থাকলেও আইনি কোনও রক্ষাকবচ নেই লিভ-ইনে। তাই লিভ টুগেদারের সঙ্গী বা সঙ্গিনীর উপর মানসিক অত্যাচার করলেও আইনি প্রতিকারের তেমন সংস্থানের অভাব প্রকট।
লিভ টুগেদারকে অক্সিজেন দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এক বক্তব্য। এক রায়ের প্রেক্ষিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছিল, প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনও যুগলের ‘লিভ টুগেদার’ করার অধিকার রয়েছে। বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ জানিয়েছিল, কোনও প্রাপ্তবয়স্ক যুগল একসঙ্গে থাকতেই পারেন। এতে লাভ হয় কিছু যুগলের। অভিভাবকদের মত না থাকলেও এই রায়কে সামনে রেখে অনেকেই লিভ টুগেদার করতে শুরু করেন। তা যে সবসময় খারাপ হয়েছে তেমনটাও নয়। টলিউডে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লিভ টুগেদার করেছেন অভিনেতা দীপঙ্কর দে (Dipankar Dey), অভিনেত্রী দোলন রায়। অভিনেতা দীপঙ্কর দে জানিয়েছেন, লিভ টুগেদার ভদ্রলোকের বিষয়। নিজেদের মানসিকতা খাপ খাচ্ছে কি না তা যাচাই করে নেওয়া যায় এই ব্যবস্থায়। কেউ তাকে কীভাবে ব্যবহার করছেন সেটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
আর সমস্যাটা ঠিক এখানেই। আইনজীবীরা মনে করছেন, অপরিণতমনস্ক ছেলেমেয়েদের জন্য লিভ টুগেদার একেবারেই নয়। সেলিব্রিটিদের লিভ টুগেদার করার প্রবণতা দেখে বিয়ে না করেই থাকতে শুরু করে দেন অগুনতি ছেলে-মেয়ে। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, মোহ কেটে যাওয়ার পর তাঁরা লোটাকম্বল গুটিয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি। যেহেতু আইনি রক্ষাকবচ নেই। আছে কেবল গদগদ প্রেম। মায়ার বাঁধন। আইনজীবীরা মনে করছেন, লিভ-ইনের ছলে তাই অনেকেই এর সুযোগ নেন। বিষয় রয়েছে আরেকটি। সাধারণত লিভ-ইন সম্পর্কে পরিবার যুক্ত হয় না। স্রেফ ছেলেটি আর মেয়েটি নিজেদের মতে একসঙ্গে থাকে। ফলে যুগলের মধ্যে কোনও ঝামেলা হলে মাঝে আসে না পরিবারের কেউ। ‘বাফার’ হিসাবে কেউ না থাকায় সম্পর্ক ভঙ্গুর হয় সহজেই।
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাসের কথায়, এ দেশে বিবাহের সমান মর্যাদা নেই লিভ-ইন সম্পর্কের। কিন্তু আনুষঙ্গিক কিছু আইনকানুন খাটে লিভ টুগেদারের উপর। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী লিভ-ইন সম্পর্ককে গার্হস্থ্য হিংসা রোধ আইন (২০০৫)-এর আওতায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লিভ টুগেদারে বহুগামিতায় কোনও বাধা নেই। গায়ক শিলাজিৎ মজুমদারের কথায়, এই মুহূর্তে লিভ টুগেদার অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সময়োপযোগী। তবে অবশ্যই তা ম্যাচিওরড কাপলদের জন্য। যাঁরা অপরিণতমনস্ক জীবনের সব ক্ষেত্রেই তাঁরা ঘেঁটে ঘ করে দেন। লিভ টুগেদার কোনও খেলনাবাটি খেলা নয়। ইমম্যাচিওরডরা দূরে থাকুন লিভ-ইন থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.