সোমা মজুমদার: ডায়ালিসিস চলছে৷ শুনেই মনে হয় শেষের শুরু৷ তা নয়৷ ডায়ালিসিস জীবনকে দীর্ঘায়িত করে৷ ডায়ালিসিস হল জীবনদায়ী চিকিৎসা৷ বিশেষ ওষুধের সাহায্যে রক্তের ক্ষতিকর বর্জ্যপদার্থ, লবণ এবং অতিরিক্ত ফ্লুইড পরিশোধন করা হয় এই পদ্ধতিতে৷ মূলত কিডনির কার্যক্ষমতা হারানোয় রোগীকে ডায়ালিসিস দিতে হয়৷
তবে ডায়ালিসিস মানেই মৃত্যু নয়৷ কিংবা ডায়ালিসিস নিলে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন না, এমনটাও নয়৷ আমরাই সঠিক সময়ে ডায়ালিসিস শুরু না করে দেরি করে ফেলি৷ ভুলটা আমাদেরই৷ তাহলে কোন ডায়ালিসিস কখন প্রয়োজন?
সঠিক সময়ে ডায়ালিসিস:
রোগীকে ডায়ালিসিস করতে হচ্ছে মানেই তাঁর মৃত্যু আসন্ন- এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল৷ সঠিক সময়ে ডায়ালিসিস করলে মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা যায়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তার অনেক আগে পরামর্শ দিলেও জীবনের ঝুঁকি বেড়ে না গেলে রোগী ডায়ালিসিসের পদ্ধতি বেছে নিতে চান না৷ ডায়ালিসিস কখন করবেন তার জন্য যদি নির্দিষ্ট উপসর্গের জন্য রোগী অপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে বিপদ বাড়বে৷ তখন যেমন ডায়ালিসিস না করে কোনও উপায় থাকে না, তেমনই ডায়ালিসিস করলেও রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়৷
কখন প্রয়োজন- দীর্ঘদিন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) থাকার দরুন দুটি কিডনি সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতা হারালে পার্মানেন্ট ডায়ালিসিস, অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর হলে মূলত ক্ষণস্থায়ী (টেম্পোরারি) ডায়ালিসিসের প্রয়োজন পড়ে৷
ঝুঁকি নেবেন না:
সাধারণত ওষুধ খেয়ে না কমলে বা অন্য কোনও বিকল্প পন্থা না থাকলে রোগী ডায়ালিসিসের পথ বেছে নেন৷ যার ফলে সেই সময় ডায়ালিসিস নিলেও ইতিবাচক ফলের প্রত্যাশা করা যায় না৷ কিন্তু আসলে যখন কোনও রোগীর ডায়ালিসিসের প্রয়োজন আছে বলে ডাক্তার পরামর্শ দেন, যদি তখনই ডায়ালিসিস নেওয়া যায় তাহলে অনেক সময় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন৷
ডাক্তারি মতে ঠিক কোন সময়ে ডায়ালিসিস প্রয়োজন তা নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখে রোগী বুঝতে পারেন না৷ তবে শ্বাসকষ্ট, খিদে না পাওয়া, হাত-পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ রোগীর শরীরে দেখা দিলে ডায়ালিসিস করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না৷
ক’টা নেওয়া যায়?
ক্রনিক ডিজিজের ক্ষেত্রে যতদিন কিডনি না পরিবর্তন করা হচ্ছে ততদিন ডায়ালিসিস নিয়ে যেতে হয়৷ একজন রোগীর সপ্তাহে ২-৩টি ডায়ালিসিসের প্রয়োজন পড়ে৷ তবে অ্যাকিউট রেনাল ফেলিওরের ক্ষেত্রে কিডনির কর্মক্ষমতা পুনরায় ফিরে এলে ডায়ালিসিসের প্রয়োজন পড়ে না৷
কতদিন অন্তর?
যখন ডায়ালিসিস শুরু হয় তখন মাসে ৮ বার নিলেই হয়৷ প্রথম তিন-চার মাস এই হারে নিতে হয়৷ তারপর কিডনির কর্মক্ষমতার উপরে ডায়ালিসিস নির্ভর করবে৷
অফিসে বসেও ডায়ালিসিস:
কিডনি ডায়ালিসিস প্রধানত দু’প্রকারের হয়ে থাকে৷
হিমোডায়ালিসিস- এক্ষেত্রে একটি ডায়ালিসিস মেশিন এবং একটি বিশেষ ফিল্টার (যা কৃত্রিম কিডনি নামে পরিচিত) বা ডায়ালাইজার ব্যবহার করা হয়৷ রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে, অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের ক্ষেত্রে টেম্পোরারি কিংবা সেমি টেম্পোরারি চ্যানেল করা হয়৷
পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস- এই ধরনের ডায়ালিসিসে পেরিটোনিয়ামের ব্লাড ভেসেলকে পরিপূর্ণ করা হয় Dialysate নামক ফ্লুইডের দ্বারা৷ এক্ষেত্রে একটি ছোট নরম প্লাস্টিক টিউব (ক্যাথেটার) পেটের মধ্যে সার্জারি করে প্রবেশ করানো হয়৷ ফিল্টারিং পদ্ধতি শেষ হওয়ার পর ক্যাথেটারের সাহায্যে ফ্লুইড শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে৷
বর্তমানে প্রতিটি রোগী হিমোডায়ালিসিস নেওয়ার সময় যে কোনও জায়গায় বসে ল্যাপটপে কাজ করা, সিনেমা দেখা কিংবা গান শোনা ইত্যাদি কাজ করতে পারেন৷ এক্ষেত্রে শুয়ে ডায়ালিসিস নিতে হয় না৷
পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস রোগী নিজের বাড়িতে, অফিসে, বাসে, ট্রামে যে কোনও জায়গাতেই নিতে পারেন৷ খুব শীঘ্রই হোম ডায়ালিসিস কলকাতায় আসতে চলেছে, যেখানে হিমোডায়ালিসিস মেশিন রোগীকে দেওয়া হয়৷ যার দরুন তিনি ট্রেনিং নিয়ে নিজেই বাড়িতে হিমোডায়ালিসিস করতে পারবেন৷ তবে এটি ব্যয়বহুল৷
আর কখন ডায়ালিসিস?
কিডনির কর্মদক্ষতা হারানো ছাড়াও হৃদরোগের ক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন কমে গেলে ডায়ালিসিস করতে হয়৷ এছাড়াও কোনও কারণে শরীরে কোনও বিষাক্ত ওষুধ, কীটনাশক প্রবেশ করলে তা বের করতে ডায়ালিসিস চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়৷
বিকল্প প্রতিস্থাপন:
কিডনি কর্মক্ষমতা হারানোর পরও রোগী ডায়ালিসিস করতে না চাইলে একমাত্র বিকল্প পন্থা হল কিডনি প্রতিস্থাপন করা৷ অর্থাৎ অন্য কারও সচল কিডনি রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে৷
সঠিক ডায়েট:
সাধারণত ডায়ালিসিস চলাকালীন খাবারের উপর সেভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা থাকে না, তবে ডায়ালিসিসের আগে ডাক্তার উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাবার যেমন- আম, লিচু ইত্যাদি খেতে বলেন৷ মরশুমি ফল, ডিম খেতে নিষেধ করা হয়৷ অর্থাৎ একজন রোগী যেদিন ডায়ালিসিস নেবেন, সেদিন ওইসব খাবার খেতে পারেন, কিন্তু তার আগের দিন খাবেন না৷
আরও জানতে যোগাযোগ করুন: ডা. উপল সেনগুপ্ত, কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট, 9830922466। অথবা পড়ুন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.