ছবি: প্রতীকী
করোনার প্রকোপ থেকে সুরক্ষিত প্রসূতির গর্ভ। লিখছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হীরালাল কোনার।
একজন সন্তানসম্ভবার সর্বক্ষণের ভাবনা, যাকে আনছেন সে যেন সুস্থভাবে এ পৃথিবীর আলো দেখে। ভাবী মা তার জন্য সবরকম চেষ্টা করেন। কিন্তু এখন আমাদের বিশ্বের যা অবস্থা, খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন গর্ভবতীর কাছে তা চিন্তার। যখন তখন করোনা থাবা বসাচ্ছে মানবদেহে। এ পরিস্থিতিতে একজনকে শরীরে লালিত করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা বারবার যোগাযোগ করছেন চিকিৎসকের সঙ্গে। জানতে চাইছেন, এই করোনা তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের জন্য কোনও সমস্যা ডেকে আনতে পারে কি না। নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থেই খুব জোরের সঙ্গে ‘না’ শব্দটি এখনই বলব না। তবে গবেষণালব্ধ বেশ কিছু ফল দেখে মোটের উপর গর্ভস্থ শিশু যে সুরক্ষিত থাকবে একথা বলা যায়।
কিছু গবেষণার কথা তুলে ধরব, যা অতিসম্প্রতি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে চিনকে করতে হয়েছে। সংকটের মুখে দাঁড়িয়েও আমাদের হাতে বেশ কিছু জার্নাল এসে পৌঁছেছে যা চিনে গর্ভবতী মহিলাদের উপর চালানো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে। খুব অল্প সংখ্যক হলেও সেইসব গবেষণার পর চিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে গর্ভবতী কোনও মহিলা করোনায় আক্রান্ত হলেও তার গর্ভ সুরক্ষিত। চিনে ঠিক কী ধরনের পরীক্ষা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। চিন সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এই আক্রমণের প্রভাব থেকে বাঁচতে কী উপায় বের করা যায় তা নিয়েও চিনই প্রথম থেকে লাগাতার গবেষণা করে চলেছে। সেই গবেষণার ফল তারা প্রকাশও করেছে একাধিক জার্নালে। আমরাও যেহেতু এই ভাইরাসের কবলে পড়েছি সেই কারণে তার থেকে রেহাই পেতে আমাদের সেইসব জার্নালই প্রধান ভরসা।
জানতে পারছি মোটামুটি তিন থেকে চাররকমের পরীক্ষা সেদেশে করা হয়। গর্ভবতী মহিলার থেকে তার ভ্রূণে অনবরত যে খাদ্যরস বাহিত হচ্ছে সেই রসের পরীক্ষা করে, শিশুর জন্মের পর তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে, শিশু ও তার মায়ের মধ্যে সংযোগকারী নাড়ির থেকে রক্ত নিয়ে এবং গর্ভে ভ্রূণ যেখানে থাকে তার চারপাশে একরকম জলীয় পদার্থ থাকে। এই সব কিছু পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে করোনা আক্রান্ত কোনও মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারেনি। খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর প্রশ্ন উঠেছে জন্মের পর ওই শিশু কি তার মায়ের কাছে থাকবে? তার মায়ের দুধ খেতে পারবে? জবাব দিতে গিয়ে ডাক্তারদের কিছু অংশ মায়ের দ্রুত আরোগ্য এবং শিশুর সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বলেছেন শিশু এবং তার মাকে অন্তত ১৪ দিন আইসোলেশনে রাখতেই হবে। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকই এর বিরুদ্ধে। কৌলিন্যের কথা বিবেচনা করে তাঁরা জানিয়েছেন, শিশু তার মায়ের কাছ থেকে জন্মের পর ১৪-১৫ দিন আলাদা হয়ে থাকলে তাদের সারা জীবনের সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হবে না। তাতে দু’জনেরই ক্ষতি। তখন কী করণীয়?
মা করোনা আক্রান্ত! অধিকাংশ চিকিৎসকই জোরের সঙ্গে আশ্বাস দিয়ে জানাচ্ছেন শিশুকে মা তার বুকের দুধ দিন। শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে ভাল করে নিজের হাত স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে নিন। দুধ খাওয়ানোর আগে স্তন অবশ্যই ভাল করে পরিষ্কার করে নিন। এবং মুখে মাস্ক পরুন। অথবা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বুকের দুধ বার করে তা সন্তানকে দিন। তাতে কোনও ক্ষতি নেই। তবে সন্তানসম্ভবা মহিলাদের জন্য বারবার একটাই কথা বলে দেব। তারা নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রত্যেকেই এমন সময় চিন্তায় থাকেন। তাতে এমন একটা পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা হওয়ারই কথা।
যদি নিজের সন্দেহ হয়, সামান্য কাশি জ্বর হয় তবে নিজেই নিজেকে পরিবারের আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করে রাখুন। দিন ১৫ পর দেখুন কেমন আছেন। আমাদের দেশে এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। এসময় স্বাভাবিক নিয়মেই জ্বর জারি হয়ে থাকে। তবু ভয় না পেয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন যে কথা বারবার বিজ্ঞানী, চিকিৎসকরা বলে আসছেন। নির্দিষ্ট সময়ের পরও জ্বর না কমলে লালা পরীক্ষা করান। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে আর দুশ্চিন্তার কিছু থাকবে না। পজিটিভ হলে তার চিকিৎসা শুরু করুন। ডাক্তাররা তার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.