সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রান্তিক মানুষজনদের খাদ্য মিলেট (Millet) এখন ‘সুপার ফুড’। আর সেই মিলেট দিয়েই খিচুড়ি, পায়েস, মালপোয়া জিলিপি, সিঙাড়া, লাড্ডু, বিস্কুট, মুরুক্কু, পকোড়া এমনকি পোলাওর মত খাবার তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়। এসবের চাহিদা এখন তুঙ্গে। মিলেটের এমন রকমারি খাবারের রসনা তৃপ্তিতেই ‘মিলেট ক্যাফে’ খুলল পুরুলিয়ার (Purulia) হুড়া ব্লক প্রশাসনের ক্যাম্পাসে। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল লাইভলিহুড মিশন বা আনন্দধারার সাহায্যে ওই ক্যাফের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল গত সপ্তাহে। যেখানে পায়েস থেকে শুরু করে জিলিপি, মালপোয়া, খিচুড়ি, লাড্ডু, মুরুক্কু সবই মিলছে। এবং তা একেবারে কম দামে। হুড়ার বিডিও (BDO) আরিকুল ইসলাম, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ মাহাতো এদিন মিলেটের পায়েস চেখে দেখেন। এই ক্যাফে চালু হওয়ার পরই ভিড় জমে সেখানে।
আনন্দধারা প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের আয়ের পথ সুনিশ্চিত করতে একটি বেসরকারি সংস্থা এই ক্যাফে (Cafe) চালু করল। ওই সংস্থার তত্ত্বাবধানে পুরুলিয়ার কৃষি দপ্তর মিলেট বা বাজরা চাষকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রচার চালাচ্ছে। কৃষি দপ্তর চাইছে,
এই চাষের ক্ষেত্র পুরুলিয়ায় আরও বাড়ুক। সেই কারণেই এই ক্যাফে। যাতে ফলন ও প্রক্রিয়াকরণ-র মধ্য দিয়ে চাহিদা বাড়ে। হুড়ার বিডিও আরিকূল ইসলাম বলেন, “পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়ায় মিলেট চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। হুড়াতে এই চাষ হচ্ছে। এর ফলন বাড়াতেই মিলেটের নানান খাবারে ক্যাফে।”
এই ক্যাফেতে একটি লাড্ডুর দাম রাখা হয়েছে ১০ টাকা। ছোট কনটেনারে মিলেটের বিস্কুটের দাম রয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া এক প্লেট পায়েস ১৫ টাকা। মালপোয়ার দামও ওই একই রাখা হয়েছে। জিলিপির দাম অবশ্য ১০ টাকা। আগামী দিনে এই ক্যাফেতে মিলেটের পোলাও তৈরি হবে। তৈরি হবে সিঙাড়াও। যে সংস্থার তত্ত্বাবধানে এই ক্যাফে খোলা হয়েছে সেই সংস্থার সিনিয়র ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর চিন্ময় নিয়োগী বলেন, “মিলেট চাষের ক্ষেত্র আরও বাড়াতেই এই ক্যাফে। মিলেট দিয়েও যে সুস্বাদু নানান খাবার হয় সেটা মানুষকে বোঝাতে চাই আমরা।” বর্তমানে এই জেলায় হুড়া ছাড়াও পুঞ্চা, মানবাজার ১, ঝালদা ১ এবং ঝালদা ২ ব্লকের মোট ১৫০ একর জমিতে এই মিলেট চাষ হচ্ছে। চলতি বছরে ফলন হয়েছে প্রায় ৪৫০ কুইন্টাল। তবে গত বছর থেকেই ২০ একর জমিতে এই চাষ শুরু হয়। তবে গতবার ফলন হয়েছিল একেবারেই সামান্য।
হুড়া ব্লক ক্যাম্পাসে মিলেট ক্যাফের দায়িত্বে থাকা পল্লী সেবিকা মহিলা সমিতি নামে যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী দেখভাল করছে তারা মিলেটের নানান খাবার কলকাতায় নিয়ে গিয়ে সরস মেলাতেও স্টল দেবে। এমনই জানা গিয়েছে হুড়া প্রশাসন সূত্রে। ওই সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার অনুপম বর্মন বলেন, “মিলেটের নানান খাবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আমরা বিভিন্ন বেকারিরর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আগামী দিনে আমরা পুরুলিয়ার জেলা গ্রামোন্নয়ন সংস্থা ও কৃষি দপ্তরে মিলেটের ক্যাফে খুলবে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক আলোচনা চলছে।”
জোয়ার, বাজরা, রাগি-সহ কয়েকটি মোটা দানা খাদ্যশস্য মিলেট বলে পরিচিত। এর উৎপাদন বৃদ্ধিতে এখন জোর দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। আসলে এই শস্যগুলির পুষ্টির (Nutrition) মাত্রা যেমন বেশি। তেমনই বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী। চলতি বছরকে ‘ইন্টারন্যশনাল ইয়ার অব মিলেট’ বলে ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.