অর্ণব আইচ: পাহাড় আর সরোবরে ঘেরা জায়গায় বেজে উঠুক শাঁখ। হোক উলুধ্বনি। সেখানেই হোক কলকাতার বাসিন্দাদের বিয়ের পার্টি। ডাকছে চিন। ইউনানের টাইগার লিপিং গর্জ, স্টোন ফরেস্ট, নীল এরহাই লেক অথবা সবুজ আর রহস্যে মোড়া রেন ফরেস্ট। একের পর এক মন ভোলানো দৃশ্য। তার মধ্যেই না হয় হোক দুই হৃদয়ের মিলন। বরফে ঢাকা জেড ড্রাগন পর্বতকে পিছনে রেখে না হয় সেলফি তুলুন কলকাতা থেকে যাওয়া বরযাত্রী বা কনেযাত্রীরা। পর্যটনের সঙ্গে সঙ্গে এবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য চিনকেই অগ্রাধিকার দিতে বলছে চিন সরকার।
বিদেশে গিয়ে বিয়ে করা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনেতিক অবস্থা ভাল, এমন বহু নবদম্পতিই অন্য দেশের মনোরম পরিবেশে বিয়ে করে শুরু করছেন নতুন জীবন। বহু দম্পতিই বিয়ে করতে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। কলকাতার চিনা কনসাল জেনারেল ঝা লিইউ জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে কোনও অংশেই চিন কম নয়। বরং কলকাতার ঘরের কাছে ইউনানের মনোরম দৃশ্য যে কোনও মানুষকেই মুগ্ধ করতে পারে। তাই বিদেশে গিয়ে যাঁরা বিয়ে করতে চাইছেন, তাঁদের কাছে আবেদন, তাঁরা চিন গিয়েই বিয়েটা সেরে ফেলুন। তাঁদের হিসাব অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই তিন দম্পতি পরিবারের লোকজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ইউনানের নয়নাভিরাম পরিবেশে গিয়ে বিয়ে সেরে এসেছেন। এ ছাড়াও কয়েকটি পর্যটন এজেন্সি গিয়ে ঘুরে এসেছে চিনের ইউনানের বিভিন্ন অঞ্চলে। কয়েকটি প্রয়োজনীয় জায়গায় কথা বলেছেন ওই এজেন্সির কর্মকর্তারা। আধিকারিকদের মতে, যদি কেউ বিয়ের অনুষ্ঠানের ভার ওই এজেন্সিগুলির উপর দিতে চান, তাহলে এজেন্সির লোকেরাই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আর এই ধরনের বিয়ের আয়োজনও নেহাৎ কম নয়। বর-কনের সঙ্গে বিমানে করে বরযাত্রী ও কনেযাত্রীদের যাতায়াত, তাঁদের হোটেলে থাকা ও সর্বোপরি বিয়ের জায়গা ঠিক করা, সেগুলি কোনও এজেন্সির মাধ্যমে হলে সুবিধাই হতে পারে।
যদিও এর মধ্যে চিন সরকারের ব্যবসা বৃদ্ধির পরিকল্পনাই দেখতে পাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, বিয়ে মানে একসঙ্গে অনেক মানুষের চিনে যাওয়া। আর বিষয়টি পর্যটনেরই প্রকারান্তর। কয়েক মাস আগে কলকাতার মহিলারা চিন দর্শনে গিয়েছিলেন। আবার তাঁদেরই আমন্ত্রণে সম্প্রতি কলকাতায় আসেন চিনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে দশজন মহিলা। আবার চিন সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতার চারটি দুর্গাপুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কার হিসাবে চারটি পুজো কমিটির দশজন সদস্যকে এই মাসেই চিন নিয়ে গিয়েছিল কলকাতার চিনা দূতাবাস। চিনা কনসাল জেনারেল জানান, যাঁদের চিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাঁরা সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এসেছেন। চিন ঘুরে তাঁদের ভাল লাগতে পারে। তাঁদের মধ্যে অনেকে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করতে পারেন। তাতে ভারত ও চিন দু’দেশেরই লাভ। ঝা লিইউ জানান, চিন থেকে যে ব্যবসায়ীরা ভারতে ব্যবসা করতে আসছেন, তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশই চলে যাচ্ছেন মুম্বই বা দিল্লিতে। কিন্তু চিনের ব্যবসায়ীরা যাতে কলকাতায় ব্যবসা ও লগ্নি করেন, সেই চেষ্টাই তিনি করছেন। নতুন টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তিনি শহরের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন কনসাল জেনারেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.