অভিরূপ দাস: “যে প্লাস্টিক দিয়ে কৌটো বানায়। তা চোখে দিয়েছেন। এতো হওয়ারই ছিল।”
মেডিক্যাল কলেজে রোগীকে দেখে হতবাক চিকিৎসক। একটানা জল পড়ে চলেছে চোখ থেকে। আচমকা শুকিয়ে গিয়েছে চোখের কর্নিয়া। বছর আঠারোর তৃপ্তশ্রীর নেশা সানগ্লাস। গরম পড়তেই হরেক শেডের রোদচশমা কেনা তাঁর শখ। এই শখে ভর করেই চোখে বাসা বেঁধেছে ‘রিফ্র্যাক্টিভ এরর’।
সামান্য আলোর দিকে তাকাতে পারছে না সে। শহরের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজির ডিরেক্টর অসীম চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রায়দিনই এমন রোগীতে গমগম করছে ক্লিনিক। যাঁদের সস্তার রোদচশমা অমূল্য চোখটারই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
দিব্যি ঝকঝকে দৃষ্টি ছিল সকলেরই। কিন্তু ফুটপাথের রোদচশমাই বিপদ ডেকে এনেছে। সে বিপদ কতটা ভয়ের? “চল্লিশেই চোখে ছানি পড়ে গিয়েছে। এর চেয়ে ভয়ের আর কী বলব।” জানিয়েছেন ডিরেক্টর। দীর্ঘদিন ধরে সস্তার চশমা পড়লে হতে পারে ‘আইলিড’ ক্যানসারও। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুধু বড়রা নয়, খুদেদেরকেও মন ভোলাতে রাস্তা থেকে খেলনা চশমা কিনে দেন অভিভাবকরা। পরবর্তীকালে দেখা যায় এদের চোখেই সমস্যা শুরু হয়েছে।
বৈশাখে গনগনে রোদে পুড়ছে শহর। চোখ ঢাকতে রোদচশমা কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ফুটপাথ জুড়ে সাজানো পসরা। চল্লিশ টাকা পিস! চিকিৎসকরা বলছেন সাময়িক আরাম আর ফ্যাশন করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছে আম জনতা। “সস্তার এই চশমায় তৃতীয় শ্রেণির প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আটকানোর কোনও ক্ষমতাই এই প্লাস্টিকের। উল্টে চোখের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।” বিশদভাবে বুঝিয়ে ডিরেক্টর অসীম চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের সর্বনাশের কারণ। সাধারণত রোদে বেরলে আমরা চোখটা একটু কুঁচকে থাকি। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলে কনস্ট্রিকটিং। এতে কিছুটা হলেও অতিবেগুনি রশ্মি চোখে কম প্রবেশ করে। কিন্তু সস্তার চশমা পরলে চোখে সরাসরি রোদ লাগে না ফলে বড় বড় চোখেই তাকাই। সেই সুযোগে প্লাস্টিকের চশমা ভেদ করে অতিবেগুনি রশ্মি গলগল করে ঢুকে পড়ে চোখের মধ্যে।”
টানা কয়েক বছর সস্তার এই চশমা পরলেই চোখে বাসা বাঁধছে অসুখ। “অতিবেগুনি রশ্মি দীর্ঘদিন চোখে পড়তে থাকলে চোখের ছানি হতে পারে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা বা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, হতে পারে, দেখা দিতে পারে চোখের ভেতরের বিশেষ ক্যানসার।”
আরআইও-র চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রী দত্ত বলছেন, “ফুটপাথের সানগ্লাসের পাওয়ারের কোনও ঠিক থাকে না। ভ্রান্ত পাওয়ারের জন্য এই ধরনের চশমা পরে মাথাব্যথা হতে পারে ক্রেতার।” চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একমাত্র পলিকার্বোনেট লেন্সই অতিবেগুনি রশ্মি আটকাতে পারে। অপটোমেট্রিস্টের কাছে গিয়ে সানগ্লাস পরীক্ষা করিয়ে নিন। নয়তো বাজার চলতি ইউভি লাইট কিনেও সানগ্লাসের উপর পরীক্ষা করা যেতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.