হঠাৎ ব্যথা। ওষুধের দোকান থেকে পেনকিলার কিনে খেয়ে ফেললেন। কিন্তু জানেন কী নিজের অজান্তেই শরীরের অনেক বড় ক্ষতি ফেলছেন। তাই যখন তখন পেনকিলার বা ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া ছাড়ুন। কিডনি অকেজো হতে কিন্তু বেশি সময় নেবে না৷ সতর্ক করে এমনটাই জানালেন পিয়ারলেস হসপিটালের বিশিষ্ট নেফ্রোলজিস্ট ডা. শৌভিক সুরাল৷ লিখলেন সোমা মজুমদার।
প্রতীকবাবু বেশ কিছুদিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন৷ অসহ্য যন্ত্রণায় পেনকিলার খেতে শুরু করেন৷ মাসখানেক যেতে না যেতেই তার গ্যাসট্রিকের সমস্যাও শুরু হয়ে গেল৷ সঙ্গে রক্তবমি, পেটে যন্ত্রণা৷ এমনকী পুরোপুরি ইউরিন বন্ধ হয়ে যায়৷ আলসারের আশঙ্কায় অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালেও ভর্তি হলেন৷ এন্ডোস্কোপিতে ধরা পড়ল পেনকিলার খাওয়ার ফলে তাঁর পাকস্থলীর বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত তৈরি হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পাশাপাশি তাঁর কিডনিতেও অত্যন্ত প্রভাব পড়েছে৷ গ্যাসট্রিকের চিকিৎসার সঙ্গেই কয়েকদিন ডায়ালিসিস হওয়ার পর অবশেষে সুস্থ হলেন তিনি৷
অবাক হচ্ছেন নাকি? এই ধরনের সমস্যায় অজান্তে ভুগতে পারেন আপনিও৷ এমনকী ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ কথায় কথায় পেনকিলার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সাবধান৷ শুধুমাত্র ব্যথা থেকে রেহাই পেতে গিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই আপনিও গুরুতর রোগের শিকার হতে পারেন৷
সাধারণত পেনকিলার দু’ধরনের হয়৷ স্টেরয়েড এবং নন-স্টেরয়েড অর্থাত্ অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ বা এনএসএআইডি৷ অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো কিছু রোগের ব্যথার নিরাময়ে ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই হয়তো অনেকে কড়া ডোজের ব্যথার ওষুধ খান৷ কিন্তু এই ধরনের এনএসএআইডি পেনকিলার খেলে অজান্তে ব্লাড প্রেসার বাড়ে, কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে৷ কারও ‘অ্যাকিউট ইনটারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস’ হয়৷ সেক্ষেত্রে অনেকসময় ডায়ালিসিস দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে৷ কয়েকদিন খাওয়ার পর ‘হিমোডায়নামিক মিডিয়েটেড অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর’ হতে দেখা যায়৷ আবার দীর্ঘদিন ধরে খেলে ‘ক্রনিক রেনাল ফেলিওর’ অর্থাত্ সম্পূর্ণরূপে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ প্রয়োজনে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টও করতে হতে পারে৷
পেনকিলারের প্রভাবে:
কিডনি অকেজো, পেটে ব্লিডিং, গ্যাসট্রিকের সমস্যা, হাই ব্লাড প্রেসার, হার্টে প্রভাব, বুকে ব্যথা অনুভূত হয়৷ ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে দ্রুত প্রভাব পড়ে৷
অ্যাসপিরিন জাতীয় লো ডোজের ওষুধ সাধারণত শরীরের ক্ষতি করে না৷ কিন্তু অ্যাসপিরিনই যখন পেনকিলার হিসাবে দেওয়া হয়, তখন তার মাত্রা বেশি থাকায় তা শরীরে নানাভাবে ক্ষতি করতে পারে৷ ষাট বছরের উর্ধ্বে ঘনঘন পেনকিলার খেলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়৷ এছাড়া দশ বছরের নিচে বাচ্চাদের যে কোনও ব্যথার ওষুধ খাওয়ার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷
কী করবেন:
কোনও রোগের ব্যথার জন্য সাময়িক আরাম পেতে প্রথমেই ব্যথার ওষুধ খাবেন না৷ বরং একটু সহ্য করে সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা করুন৷ যদি অত্যন্ত ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কম ডোজের প্যারাসিটামল জাতীয় পেনকিলার খান৷ যা কিডনির খুব বেশি ক্ষতি করে না৷ এতে কাজ না হলে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অল্প কয়েকদিন স্টেরয়েড জাতীয় পেনকিলার খেতে পারেন৷ এই ধরনের পেনকিলার খেলে তন্দ্রাচ্ছন্ন লাগে৷ কিন্তু এটি প্রাথমিকভাবে সরাসরি শরীরের ক্ষতি করে না৷
সতর্ক থাকুন:
হাই প্রেসারের রোগীদের পেনকিলার খাওয়ার বিষয়ে বেশি সতর্ক হওয়া উচিত৷ যাঁরা নিয়মিত ‘এসিই’ অথবা ‘এআরবি’ ধরনের প্রেসারের ওষুধ খান তাঁদের শরীরে হাই ডোজের পেনকিলার খুব তাড়াতাড়ি প্রভাব ফেলে৷
ষাটোর্ধ্বে যাঁরা ডায়াবেটিক রোগী এবং যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাঁদের পেনকিলার খাওয়ার বিষয়ে বেশি সতর্ক হওয়া উচিত৷ ডায়েরিয়া হলে অনেক সময় পেটের যন্ত্রণায় রোগীদের পেনকিলার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়৷ কিন্তু ডায়েরিয়া হয়ে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যাওয়ায় পেনকিলার কিডনিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে৷
যোগাযোগ: ৯০৩৮৭৫৫৪০৭
আরও পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.